Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষকদের হাতাহাতি, প্রতিবাদ পড়ুয়াদের

সোমবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে ছিলেন শিক্ষকেরা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুল। চোখের সামনে শিক্ষকদের এ ভাবে মারামারিতে জড়িয়ে পড়তে দেখে লজ্জায় মাথা নুইয়ে পড়েছিল পড়ুয়াদের। ওই ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই ফের স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন শিক্ষকরা। রঘুনাথগঞ্জের শ্রীকান্তবাটী হাই স্কুলের শিক্ষকদের এহেন আচরণে ব্যাপক ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।

পড়ুয়াদের প্রতিবাদ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

পড়ুয়াদের প্রতিবাদ। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৭
Share: Save:

সোমবার হাতাহাতিতে জড়িয়ে ছিলেন শিক্ষকেরা। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল স্কুল। চোখের সামনে শিক্ষকদের এ ভাবে মারামারিতে জড়িয়ে পড়তে দেখে লজ্জায় মাথা নুইয়ে পড়েছিল পড়ুয়াদের। ওই ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা না পেরোতেই ফের স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়লেন শিক্ষকরা। রঘুনাথগঞ্জের শ্রীকান্তবাটী হাই স্কুলের শিক্ষকদের এহেন আচরণে ব্যাপক ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক ছিল স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্য ও অভিভাবকদের। অভিযোগ, প্রাতঃকালীন বিভাগে স্কুল চলার বিষয় নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত যা হাতাহাতিতে গড়ায়। সোমবারের ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার স্কুলের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাল পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষকদের হস্তক্ষেপে সেই অবরোধ উঠলেও স্কুলে ঢুকে শিক্ষকদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ে পড়ুয়ারা। তাদের দাবি, স্কুলে প্রাতঃকালীন বিভাগ ফিরিয়ে আনতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষকরা যাতে ভবিষ্যতে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে নতুন করে স্কুলের সুনাম নষ্ট না করেন তার আশ্বাসও দিতে হবে। প্রধান শিক্ষক তাদের সেই আশ্বাস দিলে অবশেষে শান্ত হয় পড়ুয়ারা।

২০০৪-০৫ সালে এই স্কুলে যেখানে মাধ্যমিকে পাশের হার ২৫-২৭ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিকে মাত্র ৬ শতাংশ, ২০১৪ সালে সেখানে মাধ্যমিকে পাশের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশ ও উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৬ শতাংশ। স্কুলের ওই অভাবনীয় উন্নতির দেখে প্রচুর অভিবাবক তাঁদের ছেলেমেয়েদের ওই স্কুলে ভর্তি করান। এখন স্কুলের ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৩৯০০। পঞ্চম, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রতিটি ক্লাসেই পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০০-র উপরে।

প্রধানশিক্ষক উৎপল মণ্ডল জানান, ওই স্কুলে বর্তমানে ৫২টি ঘর রয়েছে। শিক্ষক রয়েছেন ৬০ জন। ৫২টি ঘরের মধ্যে ১৯টি ঘর ল্যাবরেটরি, শিক্ষক রুম, ভোকেশনাল ক্লাস ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হয়। বাকি ঘরগুলিতে সব ছাত্রের বসার ব্যবস্থা করা যায় না। আগে ছাত্র হাজিরা ছিল কম। এখন মিড ডে মিল ও হাজিরার ব্যাপারে কিছুটা কড়াকড়ি করার ফলে নিম্ন শ্রেণিগুলিতে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ৮০ শতাংশের উপরে, উঁচু শ্রেণিতেও প্রায় ৬০ শতাংশ। তাই পরিচালন সমিতি ও শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেই পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চালু করা হয় প্রাতঃবিভাগ। সেখানে রোটেশনে ২০ জন শিক্ষককে ক্লাস দেওয়া হয়। সেভাবেই চলছিল ক্লাস। কিন্তু শিক্ষকদের একটি অংশ অগস্টের শেষ সপ্তাহ নাগাদ দাবি তোলেন প্রাতঃবিভাগ বন্ধ করতে হবে। তাদের চাপে সব ক্লাসই দিবা বিভাগে শুরু করতে বাধ্য হন তিনি।

স্কুলে প্রাতঃকালীন বিভাগ বন্ধের পক্ষে শিক্ষক নিতাই দাস জানান, ছাত্রদের দিয়ে সোম ও মঙ্গলবার স্কুল অচল করার পিছনে পরিকল্পিত ইন্ধন রয়েছে। তাঁর যুক্তি, প্রাতঃকালীন বিভাগের দায়িত্ব সামলানোর জন্য কেউই নেই। প্রধান শিক্ষক আসছিলেন দিবা বিভাগে। আবার সকালে বিদ্যালয় চলাকালীন কোনও কোনও শিক্ষক ছেলে মেয়েদের স্কুল, টিউশন থেকে আনার নাম করে যখন তখন চলে যাচ্ছিলেন। সকালে লাইব্রেরি খোলা হচ্ছিল না। স্কুলের কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছিল ছাত্রছাত্রীরা।

অবশ্য তাঁদের ওই বক্তব্যকে ছেঁদো যুক্তি বলে উড়িয়ে দিয়ে স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক প্রণব পাল বলেন, “কম্পিউটারের ক্লাস বড় শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য। আসল কারণ হল সকালে স্কুল হলে কিছু শিক্ষকদের টিউশন পড়ানোর অসুবিধা হচ্ছিল। দিবা বিভাগে স্কুল চললে বহু শিক্ষকের ক্লাস থাকে না। পর্যাপ্ত ডেস্ক ও বেঞ্চ না থাকায় পড়ুয়াদের বসতে দেওয়া যায় না।” তিনি আরও বলেন, “সোমবার যা হয়েছে তার জন্য লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে সকলের। তবে স্কুলের গেট আটকে ছাত্ররা ঠিক করেনি। লিখিতভাবে তারা তাদের দাবি প্রধান শিক্ষককে জানাতে পারত। এভাবে চললে আখেরে স্কুলেরই ক্ষতি হবে।” জেলার সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক পঙ্কজ পাল বলেন, “বহু হাই স্কুলই সকালে হয়। ছাত্র বেশি হলে একই ঘরকে দুুবার ব্যবহার করা যায়। দিবা বিভাগে ক্লাস না পেয়ে শিক্ষকদের বসে থাকার চেয়ে সকালে ক্লাস চালু হলে ক্ষতি নেই।” তিনি আরও বলেন, “স্কুলের পঠন পাঠনের স্বার্থে শ্রীকান্তবাটি স্কুলের এই পদক্ষেপে কোনও খারাপ কিছু নেই। ওই স্কুলে যা সব ঘটছে তা ঠিক হচ্ছে না।”

অন্য দিকে, সোমবারের ওই ঘটনায় মর্মাহত পড়ুয়ারা। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রকি শেখের কথা, “স্কুলে যারা আমাদের ভাল হওয়ার শিক্ষা দেবেন, তারাই কিনা স্কুলে হাতাহাতি করছেন। এ নিয়ে সবাই হাসাহাসি করছে।” তাঁর কথায়, “স্কুলে ঘর নেই। বহু স্কুলে প্রাতঃকালে ক্লাস চলে। কলেজে প্রাতঃকালে ক্লাস চলতে পারলে আমাদের স্কুলে চললে ক্ষতি কোথায়?” নবম শ্রেণির ছাত্রী রুবি মণ্ডল বলেন, “সমস্যাটা ছাত্রছাত্রীদের, শিক্ষকদের নয়। তাই কোনও কোনও শিক্ষক সকালে স্কুল বন্ধ করার নামে অচলাবস্থা তৈরি করছেন। সকালে স্কুল চালু না হলে এবার সব পড়ুয়া মিলে স্কুলের সামনে ধর্ণায় বসব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE