Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সারা মাসের পারিশ্রমিকে কালীপুজো

কালীপুজোয় সেরার শিরোপা ছিনিয়ে আনতে চাই মনোহারী মণ্ডপ, বড় প্রতিমা। সে জন্য চাই অনেক টাকা। কিন্তু সেই টাকা আসবে কোথা থেকে। পুজোর পুরো টাকাটা সদস্যদের দিতেই হয়। তাই কোনও ক্লাবের সদস্যরা কাপড় দোকানে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। কোনও ক্লাবে আবার ভার লাঘব করার জন্য মাসে মাসে চাঁদা জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এভাবে পুজোর চাঁদা জোগাড় করে কয়েক বছর ধরে ধানতলার আড়ংঘাটায় জমে উঠেছে কালী পুজো। এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে জোর প্রস্তুতি।

আলোকমালা। চলছে দীপাবলির প্রস্তুতি। রবিবার করিমপুরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

আলোকমালা। চলছে দীপাবলির প্রস্তুতি। রবিবার করিমপুরে কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।

সৌমিত্র সিকদার
রানাঘাট শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১৬
Share: Save:

কালীপুজোয় সেরার শিরোপা ছিনিয়ে আনতে চাই মনোহারী মণ্ডপ, বড় প্রতিমা। সে জন্য চাই অনেক টাকা। কিন্তু সেই টাকা আসবে কোথা থেকে। পুজোর পুরো টাকাটা সদস্যদের দিতেই হয়। তাই কোনও ক্লাবের সদস্যরা কাপড় দোকানে অস্থায়ী কর্মচারী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। কোনও ক্লাবে আবার ভার লাঘব করার জন্য মাসে মাসে চাঁদা জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এভাবে পুজোর চাঁদা জোগাড় করে কয়েক বছর ধরে ধানতলার আড়ংঘাটায় জমে উঠেছে কালী পুজো। এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে জোর প্রস্তুতি।

স্থানীয় ফুটবল খেলার মাঠে মন্দিরের আদলে ইয়ংস্টারের কালী পুজোর মণ্ডপ। কুলো, বেত, পাট, বিচুলি, ঠোঙা দিয়ে মন্দিরের ভেতরে তৈরি হবে সুন্দর ঝাড়বাতি। মণ্ডপের সামনে থাকবে গ্রামের দৃশ্য। ক্লাব সম্পাদক রতন রায় বলেন, “এ বারের পুজোর বাজেট চার লক্ষ টাকারও বেশি। ক্লাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় দুশো। বাজেটের বেশির ভাগ টাকাটাই সংগ্রহ করা হয় ওই সব সদস্যদের কাছ থেকে।” তিনি জানান, ক্লাবে পাঁচ জন সদস্য আছেন, যাঁরা চাঁদা দেওয়ার জন্য পুজোর সময়ে দোকানে কাজ করেন। সাধারণত কাপড়ের দোকানে কাজ করে থাকেন। কারণ, এই সময়ে দোকানে কর্মচারীর প্রয়োজন হয়।”

ক্লাব সদস্য সন্তু মাইতি ও সায়ন ভট্টাচার্য বলেন, “একটু বেশি করে চাঁদা দিতে না পারলে ভাল পুজো হবে কি করে? তাই, পূজোর সময়ে এক মাস দোকানে কাজ করে থাকি। ক্লাবে ভাল পুজো হলে, বহু মানুষ তা দেখতে এলে সত্যিই খুব ভাল লাগে।” আরও এক সদস্য বাবন দালাল বলেন, “ বছর দুয়েক হল আমি বিএসএফের চাকরি পেয়েছি। আগে চাঁদা দেওয়ার জন্য আমিও কাপড়ের দোকানে কাজ করেছি।” ক্লাবেরই ারও এক সদস্য অরিন্দম পাল বলেন, “পুজোর সময়ে কাজ করতে পারলে হাজার দুয়েক টাকা ভালভাবে আয় করা যায়।”

ক্লাব সদস্যদের মাসিক চাঁদার ব্যবস্থা রয়েছে উত্তরণ ক্লাবে। পঞ্চাশ থেকে পাঁচশো টাকা পর্যন্ত মাসিক চাঁদার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চট, থার্মোকল, চামচ-সহ বিভিন্ন জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে হরিদ্বারের রাধাকৃষ্ণের মন্দিরের আদলে পুজো মণ্ডপ। ক্লাব সম্পাদক সুরিজিত্‌ দত্ত বলেন, “এবার আমাদের বাজেট তিন লক্ষ টাকা। বেশির ভাগটাই সদস্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। সদস্য সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন। তাই প্রত্যেককেই বেশি করে চাঁদা দিতে হয়। একবারে সব টাকা দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয় না। তাই এই মাসিক চাঁদার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।” ক্লাবেরই সদস্য পেশায় টুকটুক চালক উত্‌পল বিশ্বাস বলেন, “এভাবে মাসে মাসে চাঁদা দেওয়ার ব্যবস্থা হওয়ায় খুব সুবিধা হয়েছে।” কাঠের সিড়ি বেয়ে প্রায় কুড়ি ফুট উপরে উঠে প্রতিমা দর্শন করতে হবে নিহারিকা ক্লাবের পুজো মণ্ডপে। কাপড়, প্লাইউড, ফাইবার দিয়ে দক্ষিণ ভারতের একটি মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে তাদের এবারের পুজো মণ্ডপ। প্রতি বছরই একটু অন্য স্বাদ পাওয়া যায় হিউম্যান লাভার্স এ্যাসোসিয়েশনের পুজোয়। এবার তারা তৈরি করতে চলেছে কোচবিহারের রাজবাড়ির পুরোনো সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দিরের আদলে। সামনে থাকবে শিব, হনুমান রামসীতা মন্দির এবং ষাঁড়। ক্লাব সদস্য রাজু ধর বলেন, “আমাদের সদস্য সংখ্যা দুশো জন। যাদের বেশির ভাগ স্কুলপড়ুয়া। তাদের উত্‌সাহ তুঙ্গে। “রাম মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে পুস্পকের পুজো মণ্ডপে। ভেতরে থাকবে ঝাড়বাতি। বসবে মেলাও। পাট, পুঁতি, রুদ্রাক্ষ দিয়ে গাছা প্রদীপের আদলে তৈরি হচ্ছে আপনজন ক্লাবের মণ্ডপ। ৭০ ফুট লম্বা ও চওড়া মণ্ডপের ভেতরে থাকবে সুন্দর ঝাড়বাতি। কৃষ্ণনগরের প্রতিমা তো রয়েছেই। চন্দননগরের আলো নজর কাড়বে দর্শকদেরও। কানপুরের রাম মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে শতদল সঙ্ঘের মণ্ডপ। ৮০ ফুট লম্বা ও চওড়া মন্দিরের ভেতরে থাকবে নানা কারুকার্য। গোল্ডেন টাচ ক্লাবের এবারের ভাবনা জলের মধ্যে মন্দির। তার মধ্যেই থাকবে প্রতিমা। সেন্ট পলস্ গির্জার আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে পিয়াসী ক্লাব। মণ্ডপের ভেতরে থাকবে ঝড়বাতি। আলো দিয়ে দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের অনুকরণে তৈরি প্রবেশপথ। থাকছে কৃষ্ণনগরের ডাকের সাজের প্রতিমাও। থার্মোকল দিয়ে মিশরের মমি তৈরি হচ্ছে ইউফোরিয়া ক্লাবের মণ্ডপে। অন্ধপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছে এই থার্মোকল। মন্দিরের সামনে থাকবে বালি, খেজুর গাছ। প্লাইউড মডেল দিয়ে কাশ্মীরের বন্যার বভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরা হবে আনন্দ নিকেতনের মণ্ডপে। ব্রিজ তৈরি, আপদকালীন উদ্ধার কার্যের দৃশ্য থাকবে বলেও জানা গিয়েছে। চিড়িয়াখানার আদলে তৈরি হচ্ছে জনকল্যাণ ক্লাবের মণ্ডপ। মাটি, প্লাইউড দিয়ে তৈরি ছোটা ভীম, কালিয়া, রাজা, টম আ্যন্ড জেরি, মোটু পাতলু এ সব দেখা যাবে শবদলপুর প্রগতি সংঘের মণ্ডপে। কচিকাঁচাদের ভিড়ে ঠাসা এই ক্লাবের প্রতিমা দর্শন করতে প্রায় একশো ফুট কাঠের তৈরি ব্রিজ পার হয়ে যেতে হবে। মূল মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে ফুটবলের আকারে। সেখানেই থাকবে প্রতিমা। ক্লাব সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, “খুদে ওই সব সদস্যদের চাঁদা দশ ও কুড়ি টাকা।” এছাড়াও, ইয়ুথ ক্লাব, ছাত্র সংঘ, অন্তরা ক্লাবের পুজোতেও বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে।

আড়ংঘাটা কালী পুজো সমন্বয় কমিটির সভাপতি শিশির সেন বলেন, “এখানে কমপক্ষে ১৫টি ছোট বড় পুজো হয়। বাড়ির পুজো তো রয়েছে। পুজো দেখতে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। যাতে কারও কোনও সমস্যা না হয়, সে জন্য ক্লাবগুলকে বলা হয়েছে। প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে সজাগ থাকতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE