Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
বিপন্ন বন্যপ্রাণ

বাগানে ছাগল, হাঁসের লোভে হানা চিতাবাঘের

ইদানীং গ্রামের মধ্যেও চিতাবাঘের ঢুকে পড়ার কারণও ছোট ছোট চা বাগান। গত দেড় দশকে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার ছোট চা বাগান হয়েছে।

আতঙ্ক: বাগানের বাড়িতেও চলে যাচ্ছে চিতাবাঘ। নিজস্ব চিত্র

আতঙ্ক: বাগানের বাড়িতেও চলে যাচ্ছে চিতাবাঘ। নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা ও দীপঙ্কর ঘটক
শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৩
Share: Save:

একটা সময়ে পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে চা বাগান ছিল না। কিন্তু, ইংরেজ আমলে বন কেটেই মূলত চা বাগান গড়ে তোলা হয়। সে সময়েই অন্য বুনো জন্তুদের মতো চিতাবাঘের বিচরণ ক্ষেত্র কমে যায়। কিন্তু, চা বাগানের শ্রমিকদের কোয়ার্টারে গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি পোষা শুরু হলে সহজলভ্য শিকারের লোভে সেখানে হানা দিতে শুরু করে চিতাবাঘ। তার উপরে বাগানের জল নিকাশির জন্য জন্য অজস্র নালা-নর্দমা, ঝোপে-ঝাড়ে বুনো খরগোসের সংখ্যাও বেড়ে যায়। তা শিকারের জন্য চা ঝোপের আশেপাশে চিতাবাঘের আনাগোনা ক্রমশ বেড়ে যায়।

জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের মুখপাত্র রাজা রাউত বলেন, ‘‘সেই ট্রাডিশন চলছেই। চিতাবাঘ চা বাগানে ঘোরাফেরা করছেই। চা বাগানের বাসিন্দাদের চিতাবাঘের ব্যাপারে আরও সচেতন করতে হবে। ফাঁদ পেতে ধরে দূরে পাঠানোর উপরে জোর দিতে হবে। পিটিয়ে মারা যে একেবারেই ঠিক নয় সেটা সকলকে আরও বেশি করে বোঝাতে হবে।’’

বস্তুত, ইদানীং গ্রামের মধ্যেও চিতাবাঘের ঢুকে পড়ার কারণও ছোট ছোট চা বাগান। গত দেড় দশকে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার ছোট চা বাগান হয়েছে। সেখানে নিকাশির নালা দিয়ে সন্তর্পণে যাতায়াত করে আচমকা শ্রমিক পরিবারের পোষা ছাগল-মুরগি, হাঁস তুলে নেওয়ার লোভে ঘুরঘুর করে চিতাবাঘ। জঙ্গলে হরিণের সংখ্যা তেমন নেই। বুনো শুয়োর, বাইসনের শাবক ধরতে গেলে পাল্টা আক্রমণের মুখে পড়ে চিতাবাঘ। কারণ, শূয়োর-বাইসন সাধারণত দলবদ্ধ অবস্থায় ঘোরাফেরা করে।

শিমূলবাড়ি, গুলমা, সুকনা চা বাগান এলাকায় গেলেই চিতাবাঘের হানায় গড়ে মাসে ১০-১৫টি গবাদি পশু খোয়া যাওয়ার কথা শোনা যায়। পিটার টোপ্পো, বিপন কেরকেট্টা, তিলা মুণ্ডার মতো শ্রমিকরা একযোগে বলেন, ‘‘ছাগল-হাঁস-ভেড়া চিতাবাঘ তুলে নিয়ে যায়। তার জন্য ক্ষতিপূরণ পেতে বছর গড়িয়ে যায়। তাও ভেড়া, ছাগলের দাম বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দেওয়া হয়।’’ ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্সের সভাপতি অলোক চক্রবর্তী জানান, বন দফতরকে চিতাবাঘের হানায় মৃত গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি বাবদ ক্ষতিপূরণের অঙ্কের হার যুক্তিযুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, ‘‘না হলে হতাশা বাড়বে। ক্ষোভের আঁচ পড়বে বুনো জন্তুদের উপরে।’’

ঘটনা হল, চিতাবাঘের চা বাগান এলাকা বেছে নেওয়ার আরও একটি কারণ রয়েছে। হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের (ন্যাফ) কো অর্ডিনেটর অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘মাদি চিতাবাঘ অনেক সময়েই প্রসবের সময়ে চা বাগানের নিরাপদ ঝোপে, নালায় আশ্রয় নেয়। তাতে পুরুষ চিতাবাঘের হাত থেকে সদ্যোজাতদের বাঁচানো সুবিধে। এটা বহুকালের ব্যাপার। চিতাবাঘ-মানুষের সংঘাত নতুন কিছু নয়। বন দফতরকেই বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।’’ তবে স্বেচ্ছাসেবী পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলিও আরও জোরদার প্রচার করলে অবস্থার উন্নতি হতে পারে। আলিপুরদুয়ার নেচার ক্লাবের কর্ণধার অমল দত্ত জানান, ডুয়ার্সে বন্যপ্রাণ-মানুষ সংঘাত রুখতে নিয়মিত প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Leopards Jalpaiguri Village
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE