Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

চার বছরে শিলান্যাস একশো, সম্পূর্ণ ১৫টি

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৬:০৪
Share: Save:

উত্তর দিনাজপুর জেলা সফরে এসে গত চার বছরে চারবার প্রশাসনিক সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সব সভায় এসে শ’খানেক প্রকল্পের শিলান্যাস করেছিলেন। বেশ কিছু কাজের নির্দেশও দিয়েছেন। তাঁর হাতে শিলান্যাস হওয়া প্রকল্পগুলোর অধিকাংশ কাজই শুরু হয়নি।

শুরু হলেও কিছু কাজ জমি জটে থমকে। কোথাও আবার তহবিল এসে পৌঁছয়নি। সূত্রের খবর, ২০১৪ থেকে ২০১৮— এই চার বছরে জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে প্রায় ১০০ প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। এগুলির মধ্যে ১৫টি প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে। ২৬টি প্রকল্পের কাজ ৭৫ শতাংশ হয়েছে। বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ধীর গতিতে। কোথাও শুরু হয়ে বন্ধ হয়ে আছে। ১৫টি প্রকল্পের কাজই শুরু হয়নি। ২০১৪ সালে অগস্টে ইসলামপুর উর্দু মিডিয়াম গার্লস হাইস্কুলের কস্তুরবা গাঁধী হস্টেলের শিল্যানাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত একটি ইটও গাঁথা হয়নি।

২০১৫ সালে চোপড়া গার্লস হাইস্কুলের জন্য হস্টেলে এবং রায়গঞ্জ-বারসই সড়কের উপর সেতুর শিলান্যাস করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই সেতু হলে রায়গঞ্জ সঙ্গে বিহারের বারসইয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়ে উঠবে। এই প্রকল্পও বিশ বাঁও জলে। জেলার বিদ্যুৎ পরিষেবা বাড়াতে ২০১৭ সালে দু’টি সাব স্টেশন, উপজাতিদের জন্য রায়গঞ্জে একটি হস্টেল, ২০১৮ সালে ইসলামপুর, রায়গঞ্জ এবং করণদিঘিতে পানীয় জলের প্রকল্প শিলান্যাস করেছিলেন। কিন্তু কোনওটারই কাজই শুরুই হয়নি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও পঞ্চায়েত ও গ্রামোউন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সম্প্রতি জেলা সফরে এসে প্রশাসনিক আধিকারিকদের লোকসভার ভোটের আগে বকেয়া কাজ শেষ করার নির্দেশও দিয়ে গিয়েছেন। কাজের এই মন্থরগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দুই মন্ত্রী।

জেলা প্রশাসনের দাবি, কাজ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষের পথে। সূত্রের খবর, জমিজটের সঙ্গে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঠিকাদারদের দাবি, সরকার নির্মাণ-সামগ্রীর যে দর বেঁধে দিচ্ছে তার চেয়ে বাজার দর অনেকটাই বেশি। ফলে সরকারি কাজে হাতে নিলে লোকসানের মুখে পড়তে হয়। মুখ্যমন্ত্রী জেলায় বেশ কিছু পরিষেবা ও পরিকাঠামো বাড়ানোর নির্দেশও দিয়েছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে করণদিঘি গ্রামীণ হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো, প্রসূতিদের সরকারি হাসপাতালে প্রসব করানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়া, ব্লক এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতেও শয্যা বাড়ানো, ইসলামপুর এবং ডালখোলার বাইপাসের কাজ শুরু করা। এগুলিতেও কাজের গতি তথৈবচ।

সিপিএমের জেলা সম্পাদক অপূর্ব চক্রবর্তীর কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ফি বছর আমাদের জেলায় আসেন। তবে জেলায় এসে তিনি যে সব প্রতিশ্রুতি-ফিরিস্তি দিয়ে যান, তা কার্যকর হয় না।’’ বিজেপির জেলা সম্পাদক সুরজিৎ সেনের মন্তব্য, ‘‘শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, মানুষ কাজও দেখতে চান।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী শুধু শিলান্যাস করে যান। কাজ আর হয় না।’’ বিরোধীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শাসক দলের গোয়ালপোখরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী গোলাম রব্বানি বলেন, ‘‘বিরোধীদের কুৎসা–অপ্রচার করা ছাড়া ওঁদের তো কোনও কাজ নেই। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জেলায় উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই নানা কাজ হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সব কাজ তো আর এক-দু’মাসের মধ্যে হয়ে যাবে না। বড় কাজ এগোতে কিছু সময় লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Foundation Stone Government Project
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE