প্রতীকী ছবি।
সকালে বাড়িতে বসে টিউশান পড়াচ্ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা। পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সদস্যরা ফুলের তোড়া, প্ল্যাকার্ড হাতে যখন তাঁদের টিউশান ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়ান তখন অস্বস্তিতে পড়েন। কেউ ভিতরের ঘরে গা ঢাকা দেন। কেউ দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। গত সোমবার শিলিগুড়িতে আন্দোলনকারী গৃহশিক্ষকেরা বয়েজ হাই স্কুলের শিক্ষক প্রবীর বর্মনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ফুলের তোড়া দেন। নিয়ম ভেঙে টিউশন না পড়াতে অনুরোধ করেন। বাইকে চেপে এর পর হিরেণ মুখোপাধ্যায় সরণির বাসিন্দা বরদাকান্ত স্কুলের শিক্ষক স্বরূপ সাহা, কলেজপাড়ায় বয়েজ স্কুলের শিক্ষক প্রশান্ত দাস এবং জগদীশ বিদ্যাপিঠের আবুল কালাম আজাদদের মতো শিক্ষকদের বাড়িতে যান। সরকারি স্কুলগুলোর ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে টিউশন পড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। এদিন হাতেনাতে তা প্রমাণ করে ফুলের তোড়া দিয়ে গাঁধীগিরির পথেই প্রতিবাদ জানান গৃহশিক্ষকরেরা। অভিযুক্ত শিক্ষকদের একাংশ ডান-বাম বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের নেতাও।
শিলিগুড়ির স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) তপন কুমার বসু বলেন, ‘‘গৃহশিক্ষকেরা সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের টিউশন নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। তথ্য প্রমাণ তাঁদের দিতে বলেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হবে।’’
গৃহশিক্ষকদের প্রতিবাদের মুখে ওই দিন কেউ টিউশন পড়াবেন না জানান। আবার কেউ টিউশন পড়ান না-বলে বোঝাতে চান। শিলিগুড়ি বয়েজ স্কুলের শিক্ষক প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘‘টিউশান পড়াব না বলেই ঠিক করেছি। গৃহশিক্ষকদের সংগঠনের কয়েকজনকে সম্প্রতি জানিয়েছিলাম।’’ শিলিগুড়ির কলেজ পাড়ার বাসিন্দা প্রশান্তবাবুর বাড়িতেও বাইরের ঘরে ভর্তি ছিল ছাত্রছাত্রীরা। আন্দোলনকারীদের দেখে তিনি ভিতরের ঘরে চলে যান বলে অভিযোগ। তাঁর স্ত্রী ক্যামেরা নিয়ে বার হয়ে আন্দোলনকারীদের ছবি তোলেন। জানান, ‘‘তিনি টিউশন পড়ান। প্রশান্তবাবু নন। তাঁকে বিরক্ত করা হচ্ছে।’’ কয়েকজন পড়ুয়া তখন ঘর থেকে বেরিয়ে জানান, শিক্ষক প্রশান্তবাবু বলেছেন আজ পড়াবেন না। তাই তারা চলে যাচ্ছে। প্রশান্তবাবুর স্ত্রী ওই ছাত্রদের ফের হাত ধরে টেনে ঘরে ঢোকান। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ‘‘কেন মিথ্যে বলছেন। শিক্ষক আজ পড়াবেন না বলে ওরা চলে যাচ্ছে। আপনি আড়াল করছেন।’’ প্রশান্তবাবু বার না-হলে এর পর আন্দোলনকারীরা পড়শি অপর শিক্ষক আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে যান। সেখানেও ছাত্রছাত্রীরা টিউশন পড়ছিলেন বলে অভিযোগ।
শিক্ষক স্বরূপবাবু বলেন, ‘‘ছাত্ররা প্রজেক্ট বুঝতে এসেছিল। টিউশন নয়।’’ অথচ তখনই এক ছাত্র পড়তে এসে জানায়, তিন বছর ধরে সে পড়ছে। পরে তা মেনে নেন শিক্ষক। মঙ্গলপাণ্ডে সরণির বাসিন্দা হাকিমপাড়া বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ঈশিতা চক্রবর্তীর বাড়িতে গেলে তিনি দরজা খুলতে চাননি। বাইরে পড়ুয়াদের জুতো, সাইকেল ছিল। শিক্ষিকার বাবা, জানান টাইপ শিখতে তাঁর কাছে কয়েকজন এসেছেন। সদস্যরা শিক্ষিকা এবং পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তারা বলেননি। গৃহশিক্ষক সংগঠনের তরফে বিবেকানন্দ সাহা বলেন, ‘‘সরকারি স্কুলের শিক্ষকেরা যে টিউশন পড়াচ্ছেন তা হাতেনাতে প্রমাণিত। আমরা ফুল দিয়ে তাদের নিয়ম মানতে অনুরোধ করলাম। ফের করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy