অসহায়: দিদিমার সঙ্গে বিলাসী। নিজস্ব চিত্র
মা মারা গিয়েছেন ক্যান্সারে। দিনমজুর বাবার মাথার ঠিক নেই। বৃদ্ধা দিদিমার কাছে থাকে কিশোরী মেয়েটি। দিদিমারও পুঁজি যৎসামান্য। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। এই অবস্থায় এক জটিল রোগে অকেজো হয়ে যাচ্ছে পনেরো বছরের বিলাসী বর্মনের পা। চলৎশক্তি হারাতে বসেছে সে। উপায়ন্তর না দেখে দিদিমা সান্ত্বনা বর্মন প্রশাসনের একটি স্তর পর্যন্ত গিয়েছিলেন কাছে নাতনির জন্য আবেদন সঙ্গে নিয়ে। এখনও অবধি কোনও সহায়তা মেলেই বলেই দাবি তাঁদের।
দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটের শিবরামপুর এলাকার বাসিন্দা ওই বিলাসী তিন বছর আগেও বান্ধবীদের সঙ্গে সাইকেল চালিয়ে গ্রাম থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বালুরঘাট শহরের খাদিমপুর গার্লস হাইস্কুলে যাতায়াত করতো। কয়েক মাস আগে তার মা ক্যান্সারে মারা যান। এর পরেই হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে বিলাসী। বাবা বিনয়ের মাথার ঠিক নেই বলে অসহায় নাতনিকে শিবরামপুর থেকে গোপীনগর গ্রামে নিয়ে আসেন দিদিমা। মুড়ি ভেজে সামান্য রোজগারের টাকায় ব্যথা কমানোর ওষুধ খাইয়ে যাচ্ছেন তার পর থেকে। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি।
কী হয়েছিল বিলাসীর? নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় হঠাৎ এক দিন তার প্রচণ্ড জ্বর হয়। তার পর থেকে ফুলতে থাকে পায়ের গাঁট। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। শরীরও ক্রমশ শুকিয়ে যেতে থাকে। বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করালে চিকিৎসকেরা ভাল চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে পরার্শ দেন। এর পর তাকে মালদহে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডাক্তাররা ওষুধ দেন। কিন্তু সে কী রোগে আক্রান্ত, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি বলে দিদিমার অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতালের ডাক্তাররা কিছু বলেননি। প্রাইভেটে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা ও ডাক্তার দেখাতে শেষ সম্বল সামান্য জমিও বিক্রি করে ফেলেছি।’’ এখন গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছে ব্যথা কমানোর ওষুধ কিনতে গিয়ে প্রতি মাসে ছ’শো টাকা জোগাড় করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাত ও পায়ের অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা কিশোরীকে তখন ব্যথা কমানোর ওষুধ দেওয়া হয়। বর্তমানে চিকিৎসা বলতে এইটুকুই। মুড়ি বিক্রি করে যে সামান্য টাকা ঘরে আসে, তার প্রায় পুরোটাই চলে যায় এই চিকিৎসার পিছনের। সান্ত্বনা জানালেন, এর পরে সংসার চালানোই দায় হয়ে যায়।
অবশ্য বিলাসীর চোখে স্বপ্ন, সে আবার সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে পারবে। আগের মতো বান্ধবীদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে পারবে। কিন্তু কবে তার সেই ইচ্ছে পূর্ণ হবে, বা আদৌ হবে কি না, তা সে বলতে পারে না। অসুস্থ শরীরটাকে লাঠির সাহায্যে টেনে টেনে নিয়ে চলার চেষ্টা করে মাঝে মাঝে। পড়ে যায়। তাই দেখে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন দিদিমা। পাশে দাঁড়ানো পড়শির দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘‘আমি যখন থাকব না, তখন যে মেয়েটার কী হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy