নেত্রী: মালদহে সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
একমাত্র ছেলের মৃত্যুর পর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় কেটে গিয়েছে টানা ২৪টা বছর। আজও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ চেয়ে থাকেন অন্নপূর্ণাদেবী। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের প্রয়াত প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক পরিতোষ সিংহরায়ের স্ত্রী অন্নপূর্ণাদেবী। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। এখন জীর্ণ বাড়িতে পুরোপুরি একা। কত কথা মনের মধ্যে ভিড় করে আসে। চিকচিক করে ওঠে চোখ।
১৯৯৪ এর জানুয়ারি। কুমারগঞ্জের আরএন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কমলেশ সরকারকে মাথায় কুড়ুল দিয়ে আঘাত করে খুনের অভিযোগ ওঠে স্থানীয় সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে ওই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র পার্থ সিংহরায়ের নেতৃত্বে পথে নামে আশপাশের সমস্ত স্কুলের পড়ুয়ারা। অভিযুক্ত বাম নেতাদের গ্রেফতারের দাবিতে ২২ জানুয়ারি সকালে কয়েকশো ছাত্রছাত্রী কুমারগঞ্জ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি হতে থাকলে পাল্টা গুলি ছোড়ে পুলিশ। নিহত হয় প্রথম সারিতে থাকা পার্থ (১৩)।
শিক্ষক হত্যা ও পুলিশের গুলিতে ছাত্র মৃত্যুর প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন তৎকালীন যুবকংগ্রেস সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতা থেকে কুমারগঞ্জে ছুটে যান তিনি। থানায় বিক্ষোভ দেখানোর অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ৪০ জন ছাত্র যুবকের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। বালুরঘাট আদালতে আইনজীবী শঙ্কর চক্রবর্তী, বিপ্লব মিত্রদের সঙ্গে সওয়ালেও যোগ দেন। আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায় ধৃতরা।
পরবর্তীতে পার্থর বড়দিদি কলেজ ছাত্রী পরিণীতা সিংহরায়কে কুমারগঞ্জ বিধানসভা আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী করেন মমতা। কিন্তু জিততে পারেননি তিনি। তাহলেও ওই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মমতার। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল গঠনের পরেও বিভিন্ন সভায় মমতা কুমারগঞ্জে ছাত্র পার্থর মৃত্যুর ঘটনা উল্লেখ করে ভাষণ দিতেন তিনি।
২০০৬ সালে মারা যান পরিতোষবাবু। সত্তরোর্ধ অন্নপূর্ণাদেবী বলেন, ‘‘সে সময় বাড়িতে এসেছিলেন মমতা। বলেছিলেন, চার মেয়েকে মানুষ করতে হবে। আমি পাশে আছি।’’
অন্নপূর্ণাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘এরপর বহুবার মমতার সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছি। আশ্বাস দিলেও কেউই মমতার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেননি।’’ এখন চার মেয়েই কুমারগঞ্জের বাইরে থাকেন।
বরাহারের বাড়িতে বসে মমতাকে লেখা তাঁর প্রয়াত স্বামীর চিঠির কপি বের করে চোখ বোলান বৃদ্ধা। তাতে পরিতোষবাবুর লেখা, ‘‘মমতা তুমি একদিন ঠিক মুখ্যমন্ত্রী হবে। ওই দিনটির আশায় থাকলাম।’’
মমতা মুখ্যমন্ত্রী দেখে যেতে পারেননি পার্থর বাবা। আর অন্নপূর্ণাদেবী এখন আশায় দিন গোনেন। বলেন, ‘‘আর কোনওদিন দেখা হবে কিনা জানি না। তবে দেখা হলে মমতাকে বলব, দুর্দিনে পাশে দাঁড়াবে বলেছিলে। মনে পরে কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy