সন্ধের ঠিক পরেই খবর মিলেছিল এক নাবালিকাকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক মুহূর্ত দেরি করেননি বিডিও। পুলিশকে খবর দিয়েই ছুটেছিলেন গ্রামের পথে। বাড়িতে তখন অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে। নিমন্ত্রিতরাও আসতে শুরু করেছেন। শেষ পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আইন মেনে নেওয়া হয় ব্যবস্থাও। ঘটনাটি মেখলিগঞ্জের।
একটি-দু’টি নয়, গত এক বছরে ১৪টি নাবালিকার বিয়ে আটকে দিয়েছেন তিনি। গ্রামবাসীদের সচেতন করতে নিয়েছেন একাধিক অনুষ্ঠান। কিন্তু তেমন কাজ হচ্ছে না। তাই এ বারে নাবালিকা বিয়ে বন্ধে পুরোহিত, ব্যান্ডপার্টি থেকে ডেকোরেটর মালিকদেরও সামিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেখলিগঞ্জের ব্লক প্রশাসন।
মেখলিগঞ্জের ব্লকের বিডিও বীরূপাক্ষ মিত্র জানান, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়ে গেলেই তিনি সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করবেন। বিডিও বলেন, “নাবালিকা বিবাহ বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। তা না করে কেউ যদি বিয়েতে সহায়তা করে তাঁর বিরুদ্ধে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, সে ক্ষেত্রে সবাইকেই বিয়েতে কাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার আগেই মেয়ের বয়স জেনে নিতে হবে। প্রয়োজনে প্রমাণপত্র নিতে হবে। তিনি বলেন, “মেয়ের বয়স কম হলে বিয়ে দিতে গিয়ে পুরোহিত, ব্যান্ডপার্টি, প্যান্ডেল না পেলে কেউ সে ব্যাপারে আগ্রহী হবেন না। এমনকি সেখান থেকে সচেতনতার একটি বার্তাও যাবে।’’
প্রশাসনের ওই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংঠনের যুক্ত মৃন্ময় ঘোষ। মেখলিগঞ্জের বাসিন্দা মৃন্ময়বাবু বলেন, “আমরা ওই বিষয়ে সচেতনতা অভিযান চালাই। তার পরেও গ্রামে অনেকেই মেয়েদের কম বয়সেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। এমন একটি বিয়ে আটকাতে গিয়ে আমাকে আক্রমণের মুখেও পড়তে হয়। এটা বন্ধ হওয়া উচিত।”
কোচবিহারের একটি প্রত্যন্ত এলাকা মেখলিগঞ্জ। বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন ওই এলাকার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ কৃষি কাজের সঙ্গে যুক্ত। গ্রামে শিক্ষার হারও কম। গ্রামের দিকেই বেশিরভাগ সময় নাবালিকা বিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে কেবল কড়া ব্যবস্থা নিলেই এমন ঘটনা বন্ধ করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বাসিন্দাদের অনেকে। তাঁদের মতে, কড়া ব্যবস্থার সঙ্গে প্রয়োজন সামগ্রিক সচেতনতা। এক বাসিন্দা বলেন, “প্রশাসন একটু কড়া অবস্থান না নিলে অভিভাবকদের চেতনা পাল্টাবে না। সেই সঙ্গে সচেতনতাও দরকার।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy