প্রতীকী ছবি।
লড়াইটা আসলে শ্বশুর-জামাইয়ের। শ্বশুর ফরওয়ার্ড ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য আব্দুর রশিদ। জামাই তৃণমূলের জাফর আলি এলাকায় পরিচিত মুখ। দু’জনের টক্করই দেখা যেত এ বার পঞ্চায়েত ভোট ময়দানে, যদি না বাদ সাধত সংরক্ষণ। উত্তর দিনাজপুরের গোয়ালপোখরে বেলন গ্রামে ১১ নম্বর পঞ্চায়েত আসনটি এ বারে মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত। তাই দু’জনই নামিয়ে দিয়েছেন তাঁদের স্ত্রীদের।
ফলে লড়াইয়ে এখন মুখোমুখি মা ও মেয়ে! গ্রামের ঘরে ঘরে এখন এই নিয়েই আলোচনা। সকলেই দেখা করতে আসছেন দুই প্রার্থীর সঙ্গে। মা আফসানুর খাতুন, ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করেন। সঙ্গে তৃণমূল প্রার্থী মেয়ে আজনুর খাতুন। আদালতে ভোট স্থগিত হয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের প্রচারে বেরনো আপাতত বন্ধ। কিন্তু তাতে কী! মা-মেয়ে একসঙ্গেই রান্নাবাড়া করছেন।
দু’জনেই বলছেন, ভোটে প্রার্থী হলেও শাসক-বিরোধীর আঁচ ঢোকেনি অন্দরমহলে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে সাত বছর। বাড়িও কাছাকাছি। তাই সম্পর্ক অটুট রয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লক আর তৃণমূলে যতই টক্কর থাকুক, আফসানুর আর আজনুরের ‘ঐক্যে’ তা চিড় ধরাতে পারবে না, বলছেন আজনুরের বাপের বাড়ির লোকেরাও।
তবে পাড়া-পড়শিরা এই নিয়ে সব থেকে বেশি উৎসাহী। গ্রামের সর্বত্র মা-মেয়ের লড়াই নিয়ে আলোচনা। কয়েক জন এসে দেখাও করে গিয়েছেন দু’জনের সঙ্গে। আফসানুরের বাড়ির লোকেরা বলছেন, গ্রামের কেউ দেখা করতে এলেই এখন এ-কথা সে-কথা পরে ভোটের প্রসঙ্গ ওঠে। সকলেই জানতে চায়, কেমন মনে হচ্ছে? লাজুক হেসে দু’জনেই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
পড়শিদের কথায়, যুদ্ধটা আসলে শ্বশুর বনাম জামাই। ফরওয়ার্ড ব্লকের আব্দুর রশিদ এলাকার পুরনো রাজনৈতিক নেতা। বিদায়ী সদস্য গ্রাম সংসদ সদস্যও। স্থানীয় ব্যবসায়ী জাফর আলি এ বারে তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন।
স্থানীয় বাসিন্দা তানবীর আলম বলেন, ‘‘এই লড়াইটা নিয়ে শ্বশুর-জামাইয়ের মধ্যে একটু মন কষাকষিও হয়েছে।’’ আর এক স্থানীয় সাজিদা বানুর কথায়, ‘‘দু’জনের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে বলতে পারেন।’’
এলাকায় ফব-র শক্তি যথেষ্ট। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে তাদের নেতা মুখতার আলম বলেন, ‘‘আমরাই জিতব মনে হয়। আর মা-মেয়ে
লড়ছে ঠিকই, তাতে ব্যক্তিগত সম্পর্কে যাতে কোনও প্রভাব না পড়ে, আমরা সেটাই চাইব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের লড়াই আর রক্তের সম্পর্ক, এই দুটোকে আমরা এক করে দেখি না।’’ তৃণমূল নেতা একরামুল হক, ‘‘আজনুরদের একটা প্রভাব আছে এলাকায়। সকলেই তাঁকে ভোট দেবেন।’’ তিনিও ভোটের লড়াইকে ব্যক্তিগত ভাবে দেখার বিরোধী। তাঁর কথায়, ‘‘পছন্দের দলকে লোকে ভোট দেবে।’’ ভোটাররা কিন্তু মুখে কুলুপ এঁটেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy