Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পুরস্কার না তিরস্কার, চিন্তায় নেতা-মন্ত্রীরা 

গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ‘কঠোর পরিশ্রমের’ কী পুরস্কার পেতে পারেন এইসব নেতারা তা নিয়ে অনুগামীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৮ ০১:৫৭
Share: Save:

দু’বেলা ইনসুলিন নেওয়া। সঙ্গে গোটা পাঁচেক ওষুধ। বাইপাস সার্জারির পরে অনেক বিধি মানতে হয়। কিন্তু ভোটের দামামা শুরু হওয়ার পর থেকে আর তেমন মানতে পারেননি। মাসখানেক ধরে ছুটে বেড়িয়েছেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। টানা কয়েক সপ্তাহ গভীর রাত অবধি জাগতে হয়েছে গৌতম দেবকে। মালদহের জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন তো ঘনিষ্ঠদের জানিয়েই দিয়েছিলেন, ভোটের ফল যা-ই হোক, দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাববেন। তেমনই বিপ্লব মিত্র, মোহন শর্মা, সৌরভ চক্রবর্তীও উদয়াস্ত ছুটে বেড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরের গণনা পর্বে দলের আধিপত্য নিশ্চিত হতেই যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে সকলের।

গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর ‘কঠোর পরিশ্রমের’ কী পুরস্কার পেতে পারেন এইসব নেতারা তা নিয়ে অনুগামীদের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়েছে। যদিও উত্তরে তৃণমূলের শীর্ষনেতারা প্রায় এক সুরে দাবি করেছেন, তাঁরা কোনও প্রত্যাশা ছাড়াই দলনেত্রীর পরামর্শ মেনে কাজ করেছেন। কাজেই ‘পুরস্কার’ নিয়ে আলোচনা করার কোনও মানে হয় না বলে তাঁরা মনে করেন।

তবে তৃণমূলের অন্দরের খবর, পুরস্কারের সঙ্গেও তিরস্কারের আশঙ্কাও রয়েছে অনেকের মধ্যে। কারণ, দিনরাত পরিশ্রম সত্ত্বেও উত্তরবঙ্গের ছয় জেলায় প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে এক হাজারের বেশি আসন পেতে চলেছে বিজেপি। শুধু চা বলয়েই নেপালি ও আদিবাসী অধ্যুষিত ৫০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপি জয়ী হয়েছে। দুই দিনাজপুরেও বিজেপি অনেক জায়গাতেই ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে বলে গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলে স্পষ্ট।

মালদহের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কয়েকটি এলাকাতেও পদ্মফুলের এত সমাদর কেন সেই প্রশ্নেও জবাবদিহি দিতে হতে পারে বলে আশঙ্কায় নেতাদের একাংশ। এমনকী, শিলিগুড়ি শহরের উপকণ্ঠে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভার ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির গ্রাম পঞ্চায়েতে বাম-কংগ্রেসকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে বিজেপি প্রধান প্রতিপক্ষ হওয়াটাও ভাবাচ্ছে তৃণমূল নেতাদেরও।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেছেন, ‘‘গ্রামবাংলা যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে বোঝে না সেটাই ফের বোঝা গেল। খুচখাচ কোথায় পদ্মফুল ফুটেছে সেটা নিয়ে পরে আলোচনা-বিশ্লেষণ করা যাবে।’’

পর্যটন মন্ত্রী জানান, তাঁরা সামগ্রিক ফলাফল প্রকাশের পরে আলোচনায় বসবেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। সেটাই দলনেত্রীর থেকে শিখেছি।’’

বিজেপির উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক রথীন বসু দিল্লি থেকে ফোনে জানান, উত্তরবঙ্গে ভোট পর্বে শাসক দলের নেতাদের নাওয়া-খাওয়া ভুলে নানা কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও বিজেপির প্রভাব যে বাড়ছে তা স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন আমাদের দিকে বাড়ছে। এর চেয়ে বড় পুরস্কার হয় না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Elections 2018 TMC BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE