নোট বদলের এক বছর পরেও ভিড় কমেনি এটিমে। বুধবার ফালাকাটায় তোলা। ছবি: রাজকুমার মোদক
নগদহীন লেনদেনকে উৎসাহ দেওয়া নোট বাতিলের একটা কারণ বলে দাবি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। নোট বাতিল হওয়ার পরপর মানুষ খানিকটা বাধ্য হয়েই কার্ড, মোবাইল ওয়ালেটে লেনদেন করছিলেন। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ব্যবসা আবার মোটের উপর নগদেই ফিরেছে শিলিগুড়ি শহরে।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, নোটবন্দির পরে ডিজিটাল লেনদেনে মানুষকে অভ্যস্ত করাতে কিছু ছাড়, উপহারেরও ঘোষণা করা হয়েছিল। মাস দুয়েক ঠিকই ছিল। তার পর থেকেই লেনদেনের ওপর সুদ চাপানো শুরু হয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার একটি হোটেল নোটবন্দির ধাক্কা সামলে উঠতে মোবাইল ওয়ালেট পরিষেবা চালু করেছিল। তবে মঙ্গলবার নোটবন্দির বর্ষপূর্তির আগের দিন হোটেলে গিয়ে দেখা গেল ডিজিটাল পেমেন্টের পোস্টার নেই। কেন? হোটেলের অন্যতম কর্ণধার সুমন্ত কুণ্ডু বলেন, ‘‘চড়া সুদ নিতে শুরু করায় চালানো সম্ভব হয়নি। ছোট অথবা মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওই পরিমাণ সুদের হার সামালানো চাট্টিখানি কথা নয়।’’
হিলকার্ট রোডে দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে রেস্তোরাঁ চালাচ্ছেন হরজিৎ সিংহ। নোটবন্দির পরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় পিওএস (পয়েন্ট অব সেল) মেশিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন হরজিৎ। পিওএস দোকানে থাকলে ডেবিট-ক্রেডিট বা অন্য কার্ড পাঞ্চ করে বিল মেটানো যায়। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আবেদন করার পরে বছর ঘুরে এখন নভেম্বর।
আজও পিওএস মেশিন বসেনি রেস্তোরাঁয়। হরজিতের কথায়, ‘‘আগে কয়েকবার ব্যাঙ্কে গিয়ে আবেদন করেছি। দিচ্ছি-দেব শুনেছি। এখন আর খোঁজ করি না।’’ একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কথায়, ‘‘আমাদের নিজেদের পরিকাঠামো নেই। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে দিয়ে পিওএস মেশিন বসানো হয়। সে কারণে মেশিন সরবরাহে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
শিলিগুড়ি শহরের কোর্ট মোড় এবং হাকিমপাড়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যাচ্ছে, নেট ব্যাঙ্কিং তথা ডিজিটাল লেনদেন করেন মাত্র ত্রিশ শতাংশ গ্রাহক। নোটবন্দির পরে শতাংশের হার বেড়েছে বড়জোর ৩ থেকে ৫ শতাংশ। কিন্তু কী সমস্যা হচ্ছে ডিজিটাল লেনদেনে? ব্যবসায়ীদের দাবি, নোট বাতিলের পরপরই ডিজিটাল লেনদেনে কর মকুবের ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু মাস দু’য়েক পর থেকেই সেই সব ছাড় তুলে নেওয়া হয়। যেমন একটি ই-ওয়ালেট সংস্থা মোট লেনদেনে ১ শতাংশ ফি নেবে বললেও তিন মাস পরে ফি বাড়িয়ে ৪ শতাংশ করে দেওয়া হয়। কয়েকটি সরকারি ব্যাঙ্কের পিওএসেও শুরুতে ১.২ শতাংশ ফি বলা হলেও পরে তা বাড়িয়ে সব লেনদেনে ২ শতাংশ বেশি ফি চাওয়া হয় বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ব্যাঙ্কের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়েছে, সবই ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে বলা হয়েছিল। কেউ কেউ সেটা বুঝতে পারেননি। আবার কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা, যারা পিওএস মেশিন বসানোর কাছ করে, তারা মেশিন গছানোর জন্য মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বলেও অভিযোগ।
তবে শিলিগুড়িই শুধু নয়, গোটা উত্তরবঙ্গেই ডিজিটাল লেনদেনের মুখ থুবড়ে পড়াই ভবিতব্য ছিল বলে দাবি উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের। সংগঠনের সচিব বিশ্বজিৎ দাসের কথায়, ‘‘এখানে তো গোড়াতেই গলদ। ডিজিটাল লেনদেনের জন্য প্রাথমিক প্রয়োজন ইন্টারনেট সংযোগ। উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়েই নেট সংযোগ একটা বড় সমস্যা। গ্রাহকদের কার্ড হাতে পিএওস মেশিনের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ ভাবে কে বিল মেটাবেন?’’ বিশ্বজিতবাবু বলেন, ‘‘ডিজিটাল লেনদেনের খরচ কমার পরিবর্তে বেড়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা নগদ লেনদেনেই ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy