রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র হাইস্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১৯১৭ জন। সরকারি নিয়মে ওই স্কুলে শিক্ষক থাকার কথা ৪৮ জন। কিন্তু বর্তমানে সেখানে আছেন ৩৬ জন শিক্ষক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ দত্তের বক্তব্য, চলতি বছরেই সাত জন অবসর নিয়েছেন। অথচ গত তিন বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। ফলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে।
ডালখোলার ভুষামণি-১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খাতায়কলমে ১০১ জন পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে গড়ে ৪০ শতাংশই স্কুলে আসে না। সেই হিসেবে ওই স্কুলে দু’জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন চার জন। তা সত্ত্বেও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্থায়ী পদে আরও এক জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে শিক্ষা দফতর। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গুলজার হোসেনের অবশ্য দাবি, ‘‘স্কুলের নথি অনুযায়ী পড়ুয়ার সংখ্যা বিচার করেই শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমার কোনও বক্তব্য নেই।’’
এই দু’টি স্কুলই নয়, উত্তর দিনাজপুরে প্রাথমিক ও হাইস্কুল মিলিয়ে ৫০ শতাংশেরও বেশি স্কুলে পড়ুয়া অনুযায়ী শিক্ষকদের অনুপাতের ভারসাম্যের অভাবে পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। জেলার প্রাথমিক ও হাইস্কুলেও শিক্ষক ও শিক্ষিকার অভাব প্রকট। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের দাবি, জেলার বেশির ভাগ স্কুলেই শিক্ষকদের অভাব রয়েছে। কোথাও পড়ুয়ার অনুপাতে শিক্ষক কম। কোথাও আবার বেশি।
উত্তর দিনাজপুরে শিক্ষা একনজরে
• প্রাথমিক স্কুল: ১৪৭৩।
• পড়ুয়া: ২,১৫,৬৩৫ জন।
• শিক্ষক-শিক্ষিকা: ৬৫০০ জন
• থাকার কথা: ৭১১৮ জন।
• শূন্যপদ: ৬১৮টি।
• হাইস্কুল: ৩৭৬টি।
• পড়ুয়া: ৩,৪০,৫৮৯ জন।
• শিক্ষক-শিক্ষিকা: ৫২৭৭ জন।
• থাকার কথা: ৮৫১৫ জন।
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় তেমন উল্লেখযোগ্য ফল করতে পারেনি এই জেলা। তার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে শিক্ষামহলে আলোচনা শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের অনেকেই বলছেন, এই ভারসাম্যের অভাব অন্যতম বড় সমস্যা। তাঁদের প্রশ্ন, যে সব স্কুলে পড়ুয়া কম, সেখান থেকে বাড়তি শিক্ষকদের কেন অন্য স্কুলে বদলি করা হচ্ছে না? জেলাশাসক আয়েশা রানির অবশ্য দাবি, ‘‘কিছু দিন আগে জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকদের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’
জেলায় ১৪৭৩টি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়া রয়েছে ২ লক্ষ ১৫ হাজার ৬৩১ জন। শিক্ষকের সংখ্যা সাড়ে ৬ হাজার। শিক্ষার অধিকার আইনে ৩০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকার কথা। সেই হিসেবে এই সংখ্যাটি হওয়ার কথা ৭১৮৮। মাধ্যমিক স্তর থেকে স্কুলে প্রতি ৪০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকতে হবে। সেই হিসেবেও জেলায় প্রচুর শূন্য পদ রয়েছে।
সিপিএম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক বিপুল মিত্র ও কংগ্রেস প্রভাবিত মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সংগঠনের জেলা সম্পাদক তিলকতীর্থ ভৌমিকের অভিযোগ, প্রশাসনিক গাফলতির জেরেই জেলার বেশির ভাগ স্কুলে পড়ুয়া ও শিক্ষকের অনুপাতের ভারসাম্যে এত অভাব। তাঁদের দাবি, ‘‘২০১৪ সালের পর থেকে হাইস্কুলে নিয়োগ বন্ধ, প্রাথমিক স্কুলেও পর্যাপ্ত নিয়োগ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি বাড়তি শিক্ষকদের বদলি করা হবে না, তা বুঝতে পারছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy