Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

শ্বাসকষ্টের রোগীর সঙ্গে এক শয্যায় ডেঙ্গি রোগী

হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত প্রচুর রোগী চিকিত্সার জন্য এলেও এখনও ফিভার ক্লিনিক চালু করেনি কর্তৃপক্ষ। এ সব নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।

শয্যা মেলেনি। ওয়ার্ডেও জায়গা নেই। রোগীরা করিডরেই। মালদহ মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

শয্যা মেলেনি। ওয়ার্ডেও জায়গা নেই। রোগীরা করিডরেই। মালদহ মেডিক্যালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৫:১৬
Share: Save:

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেল ও ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে থিক থিক করছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় । বিশেষ করে, মেল মেডিক্যাল ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে এক শয্যায় রয়েছেন দু’জন করে রোগী। পাশাপাশি, ওয়ার্ডের মেঝে, এমনকী দরজার বাইরে করিডোরের মেঝেতেও প্রচুর রোগী ভর্তি রয়েছেন। একই সঙ্গে রয়েছেন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগীরাও। তাঁদের জন্য যেমন আলাদা ওয়ার্ড করা হয়নি, তেমনি তাঁদের জন্য মশারির ব্যবস্থাও করা হয়নি। এতে ওই ওয়ার্ডে ভর্তি অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা ডেঙ্গির সংক্রমণের আশঙ্কা করছেন।

হাসপাতালের আউটডোরে প্রতিদিন জ্বরে আক্রান্ত প্রচুর রোগী চিকিত্সার জন্য এলেও এখনও ফিভার ক্লিনিক চালু করেনি কর্তৃপক্ষ। এসব নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার জেলা প্রশাসনিক ভবনে বৈঠক করেন জেলাশাসক।

মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেল মেডিক্যাল ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড মিলেয়ে ১০০টি শয্যা রয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, ওই দু’টি ওয়ার্ডে এ দিন ২২১ জন ভর্তি রয়েছেন। প্রতিটি শয্যায় দু’জন করে রয়েছেন। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় মেঝে ও করিডোরে চিকিৎসা চলছে বাকিদের। এদের মধ্যে জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। একই অবস্থা ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডেও। সেখানেও ১০০ শয্যায় প্রায় দু’শো জন ভর্তি। জানা গিয়েছে, মেল ও ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে অন্তত ১০ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। জ্বরে আক্রান্ত মালদহ জেলার বিভিন্ন এলাকা সহ দুই দিনাজপুর ও ঝাড়খণ্ডের রোগীরাও ভর্তি রয়েছেন এখানে।

মেল মেডিক্যাল ১ ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনদিন ধরে ভর্তি রয়েছেন মানিকচকের নূরপুরের বাসিন্দা রহমত হোসেন। তাঁর স্ত্রী মর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘আমার স্বামীর সঙ্গে একই বেডে রয়েছে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এক রোগী। কিন্তু সেই রোগীকে মশারির নিচে রাখা হচ্ছে না। এ নিয়ে স্বাস্থ্য কর্মীদের বলে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন যে এক বেডে দু’জন করে রোগী থাকলে সেখানে মশারি ঝোলানো সম্ভব নয়। ভয় করছে যদি ওঁরও ডেঙ্গি হয়।’’

একইভাবে ওই ওয়ার্ডে ডেঙ্গি রোগীর সঙ্গে ভর্তি থেকে সংক্রমণের শঙ্কা করছেন বুকের ব্যাথা নিয়ে চিকিত্সাধীন পাকুয়ার বীরেন্দ্রনাথ মজুমদারের পরিজনেরাও। তাঁরা বলেন, ‘‘ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড করা উচিত। না হলে অন্তত ডেঙ্গি রোগীদের মশারির নিচে রাখা হোক। কিন্তু হচ্ছে না।’’ হাসপাতালের সুপার অমিত দাঁ বলেন, ‘‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত মশারি রয়েছে। কিন্তু একই বেডে দুজন করে রোগী থাকায় সেখানে মশারি ঝোলানোর মতো পরিস্থিতি থাকছে না। মেঝেতেও একই পরিস্থিতি। ডেঙ্গি রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড বা ফিভার ক্লিনিক চালুর ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

জেলার ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন প্রশাসনিক বৈঠক করেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য। প্রশাসনের আধিকারিকরা ও স্বাস্থ্য দফতর, পুরসভা, পঞ্চায়েত দফতরের কর্তারাও ছিলেন। জেলাশাসক বলেন, ‘‘জেলায় ডেঙ্গি পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক নয়। এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত জেলায় ২৪২ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে কালিয়াচকে সবচেয়ে বেশি ৩৮ জন আক্রান্ত। ইংরেজবাজার শহরে ১৫ জন। গত বছর এ সময়ে জেলায় ৬৪১ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’’ ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতায় জোর দেওয়া হচ্ছে। ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদহ শহরে আগামী ১২ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা ও সচেতনতার কাজ হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE