Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

এক হাতে ভর করেই হাই মাদ্রাসায় আসগরি

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাতো রয়েইছে, পাল্লা দিচ্ছে আর্থিক প্রতিকূলতাও। বাবা জন্মান্ধ। সংসার সামলাতে দিনমজুরি করতে হয় মা-বোনেদের।

আসগরি খাতুন।

আসগরি খাতুন।

জয়ন্ত সেন
মালদহ শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৪
Share: Save:

জন্মের পর থেকেই পা দু’টি অসার। অসার বাঁ হাতটিও। ভরসা বলতে শুধুই ডান হাত। তার ভরসাতেই লেখা, হামাগুড়ি দিয়ে চলাফেরা করা বা খাওয়া-দাওয়া সবই। আর সেই হাতেরই ভরসাতেই এ বার হাই মাদ্রাসার ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছে হরিশ্চন্দ্রপুরের অষ্টাদশী আসগরি খাতুন।

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাতো রয়েইছে, পাল্লা দিচ্ছে আর্থিক প্রতিকূলতাও। বাবা জন্মান্ধ। সংসার সামলাতে দিনমজুরি করতে হয় মা-বোনেদের। একমাত্র ভাইকে সংসারের রসদ জোগাতে নবম শ্রেণির পর পড়ার পাট চুকিয়ে কাজের জন্য পাড়ি দিতে হয়েছে দিল্লি। এই পরিস্থিতিতেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় আসগরি। সংসারের অভাব ঘোচাতে শিক্ষিকা হতে চায়। তবে তাঁর আক্ষেপ, সে ও তার বাবা একশো শতাংশ প্রতিবন্ধী হলেও প্রতিবন্ধী ভাতা জোটেনি কারোই।

হরিশ্চন্দ্রপুরের বড়ই পঞ্চায়েতের রনথাল গ্রামের বাসিন্দা জন্মান্ধ মতিফুল হক। তাঁর স্ত্রী সিদ্দিকা বিবি। তাঁদেরই পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় আসগরি। দিদি মুসকরির বিয়ে হয়েছে। তাঁর পরের দু’বোনের মধ্যে রুমা দ্বাদশ শ্রেণির ও সঞ্জেদা দশম শ্রেণির ছাত্রী। একমাত্র ভাই সিদ্দিক নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে দিল্লি চলে গিয়েছে কাজের জন্য। সিদ্দিকা বিবি বলেন, ‘‘প্রথমে ওর পা দু’টি অসার ছিল। বাঁ হাতটি প্রথম দিকে ঠিক থাকলেও কিছুদিন পর সেটিও অসার হয়ে যায়। স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তাররা বলেছিলেন দক্ষিণ ভারতে নিয়ে চিকিত্সা করাতে। কিন্তু সংসারে দু’বেলা খাবার জোগাড় করাই হিমশিম। তাই মেয়ের চিকিত্সা আর হয়নি। তবে আমরা তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছি। সেও লেখাপড়ায় আগ্রহী।’’

বোন রুমা জানায়, আসগরি হরিশ্চন্দ্রপুরেরই প্রেমা ভক্তিপুর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী। দিদিকে সাইকেলে চাপিয়ে মাদ্রাসায় নামিয়ে দিয়ে তবেই সে রোজ স্কুলে যায়। কোনও কোনও দিন বোন সাঞ্জেদাও আসগরিকে পৌঁছে দেয়। সেখানে সে পঞ্চম শ্রেণি থেকে পড়ছে। তার হাই মাদ্রাসার ফাইনাল পরীক্ষার সিট পড়েছে বাড়ি থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরের কনুয়া ভবানীপুর কেআরএইচএন হাই মাদ্রাসায়। প্রেমা ভক্তিপুর হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবুবক্কর সিদ্দিকি বলেন, ‘‘শারীরিক ও আর্থিক দু’দিক দিয়েই প্রতিবন্ধকতা আসগরির। আমরা মাদ্রাসার পক্ষ থেকে তাঁকে যতটুকু সাহায্য করার করে চলেছি। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি মেয়েটির এমন টান যে এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেই লড়াই চালাচ্ছে, এজন্য তাঁকে কুর্নিস জানাই।’’

কনুয়া ভবানীপুর মাদ্রাসার দোতলার ঘরে সিট পড়েছিল তাঁর। কিন্তু সেই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মহম্মদ শাহজাহান একতলার একটি ঘরে তার পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এ দিন ইসলাম পরিচয় পরীক্ষা ছিল। পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা পর্ষদের সদস্য আতাউর রহমান রানা বলেন, ‘‘এমন প্রতিবন্ধকতা নিয়েও আসগরি যে ভাবে পরীক্ষা দিচ্ছে সে জন্য তাকে আমরাও ধন্যবাদ জানাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE