দুর্মূল্য: চাহিদা তুঙ্গে, জোগান কম। —নিজস্ব চিত্র।
সপ্তাহে শনিবারের সন্ধ্যেতেই বাকি ছ’দিনের বাজার সারেন অমিতাভ দত্ত। পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী অমিতাভবাবু থাকেন অন্য শহরে। ডিমের দাম শুনে থমকে গেলেন। রাতারাতি ডিম প্রতি দাম বেড়েছে এক টাকা।
এটা কোনও নির্দিষ্ট এক জায়গার ছবি নয়। আলিপুরদুয়ার থেকে শিলিগুড়ি, সর্বত্রই ডিমের বাজার চড়া। যে পোলট্রির ডিম ক’দিন আগেও সাড়ে চার-পাঁচ টাকায় প্রতিটি দরে পাওয়া যেত, সেখানে এখন কোথাও তার দাম ছ’টাকা, কোথাও সাত। এই ঊর্ধ্বমুখী দাম কোথায় গিয়ে শেষ পর্যন্ত থামবে, তা ভেবেই আতঙ্কিত অনেকে। তাঁদের বক্তব্য, আনাজে এখন হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না। পাঁঠার মাংস তো বহু দিনই দামী। ভাল মাছও তথৈবচ। অমিতাভবাবুর কথায়, ‘‘মধ্যবিত্তের ভরসা ছিল ডিম। এখন তা-ও দুর্মুল্য হচ্ছে। আমরা তা হলে খাবটা কী?’’
আলিপুরদুয়ার বড় বাজার এলাকায় মাসখানেক আগেও পাইকারি বাজারে ২১০টি বা একপেটি ডিমের দাম ছিল প্রায় হাজার টাকা। শুক্রবার থেকে আচমকাই তা বেড়েছে বলে জানান ডিমের পাইকারি ব্যবসায়ী ছট্টু শাহ। চেচাখাতা এলাকার দোকানদার বিশ্বজিৎ মালাকার জানান, সপ্তাহখানেক আগে একটি ডিম পাঁচ টাকায় বিক্রি করেছেন। দিন তিনেক আগে তা বিক্রি হয়েছে ছয় টাকায়। শুক্রবারে একলাফে ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে সাত টাকা। ডিআরএম চৌপথি এলাকার এক এগরোল বিক্রেতা বলেন, ‘‘সাধারণত এগরোল ১০-১২ টাকায় বিক্রি করি। এখন তা ১৫ টাকায় বিক্রি করতে হবে। ডিমের সঙ্গে আনুষাঙ্গিক জিনিসের দামও বেড়েছে।’’
কোচবিহারে ডিমের পাইকারি বাজার দর আরও চড়া। ডিম ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার এক পেটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১২১০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগেও ওই দাম ১১৭০-১১৮০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। কোচবিহার জেলা ডিম ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “চাহিদার তুলনায় জোগান কমে গিয়েছে। ভিন রাজ্যে দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে।” ব্যবসায়ীরা জানান, অন্ধ্রপ্রদেশ , পঞ্জাব থেকে কোচবিহারে দৈনিক প্রায় ৯ লক্ষ ডিম আমদানি করা হয়। তার মধ্যে প্রায় ৫ লক্ষ ডিম আবার অসমে পাঠানো হয়। শীতের শুরুতে ওই জোগান কমেছে। বড় জোর ৬ লক্ষ ডিম আসছে। তাতেই দাম চড়ছে।
কোচবিহারে খুচরো বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে সাত টাকা হয়েছে। দাম বাড়তে থাকায় তা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এগরোল, ডিমের চপের দামও বাড়ানোর আলোচনা হচ্ছে। রাসমেলার এক এগরোল বিক্রেতা জানান, ‘‘যখন খুচরো ডিমের দাম প্রতি পিস ৫ টাকা ছিল, তখন থেকেই ২০ টাকায় এগরোল বিক্রি করছি। এখন প্রতি পিস ৭ টাকা হয়েছে। ফলে দাম বাড়াতে হবে।’’ চিন্তা বেড়েছে মিড ডে মিল নিয়েও। একটি স্কুল শিক্ষকের দাবি, প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়া পিছু ৪ টাকা ১৩ পয়সা বরাদ্দ হয়। তা দিয়ে আনাজ, জ্বালানির খরচ মেটাতে হয়। সপ্তাহে দু’দিন ডিম দেওয়া হয়। ফলে সব কিছু সামাল দিতে সমস্যা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy