Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বৃদ্ধের মৃত্যু, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি

হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধের ক্ষত-বিক্ষত দেহ মিলেছিল হাসপাতালেরই ব্লাড ব্যাঙ্কের একটি ঘর থেকে৷ তখন দেহ থেকে কিডনি চুরিরও অভিযোগ ওঠে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১৮
Share: Save:

হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক বৃদ্ধের ক্ষত-বিক্ষত দেহ মিলেছিল হাসপাতালেরই ব্লাড ব্যাঙ্কের একটি ঘর থেকে৷ তখন দেহ থেকে কিডনি চুরিরও অভিযোগ ওঠে। তারপর পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে অভিযোগ জানিয়েছিলেন তাঁর বাড়ির লোকেরা৷ কিন্তু একমাসেও এই মৃত্যুর ঘটনার কিনারা না হওয়ায় তাঁরা এ বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হয়েছেন৷ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে সম্প্রতি তারা মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন৷

মৃত ওই বৃদ্ধের নাম আলি ইমান আনসারি (৬০)৷ তাঁর বাড়ি মালবাজারের ডামডিম মোড়ের তাজিয়া মোড়ে৷ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৬সেপ্টেম্বর মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ৷ কিন্তু ২৮ সেপ্টেম্বর আচমকাই ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থাতেই নিখোঁজ হয়ে যান তিনি৷ শুরু হয় খোঁজ-খবর৷ কিন্তু কোথাও আর তাঁকে পাওয়া যায়নি৷

আলি ইমাম আনসারির ছেলে ইসলাম আনসারি বলেন, ‘‘এর দুদিন পর জানতে পারি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ব্ল্যাডব্যাঙ্কের একটি ঘরে আমার বাবার রক্তাক্ত-ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে৷ আমরা সেখানে ছুটে গিয়ে দেখি যে বাবার দেহ তার আগেই সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ মেঝেতে থাকা রক্তও মুছে ফেলা হয়েছে৷’’ এরপরই ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে মালবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করেন তারা৷

সম্প্রতি আল ইমাম আনসারির বাড়ির লোকেদের হাতে একটি ভিডিও পৌছেছে৷ তাতে দেহ উদ্ধারের সময়ের ছবি রয়েছে৷ কিন্তু ওই ভিডিও দেখে হতবাক তাঁর পরিজনেরা। বৃদ্ধের বাড়ির লোকেরা জানিয়েছেন, ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে যে, গোটা মৃদেহটি রক্তে ভরা৷ মৃতদেহের চারিদিকেও রক্ত ভেসে যাচ্ছে৷ আর ঘরটির দেওয়ালেও রক্তের চাপ চাপ দাগ৷

মৃতের ছেলেদের অভিযোগ, মৃতদেহের হাতে, পেটে, কোমরের পিছন দিকেও গভীর ক্ষত চিহ্ন ছিল৷ ইসলাম আনসারির অভিযোগ, ‘‘আমরা নিশ্চিত কেউ বা কারা বাবাকে খুন করেছে৷ এমনও হতে পারে, বাবাকে মেরে ফেলার আগে তার শরীর থেকে কিডনি বা অন্য কোন অঙ্গ নিয়ে নেওয়া হয়েছে৷’’ পরিজনদের ক্ষোভ, একজন রোগী ভর্তি থাকা অবস্থায় নিখোঁজ হয়ে গিয়ে এভাবে মারা গেলেও তার কোন সদুত্তর দেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷ এমনকী পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পর এক মাস কেটে গেলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ তাই মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছি৷

পুলিশের দাবি, অভিযোগ দায়েরের পরই অনিচ্ছাকৃত খুন ও তথ্য প্রমাণ লোপাটের ধারায় একটি মামলা রুজুও করে তদন্ত শুরু হয়েছে৷ সম্প্রতি ঘটনার তদন্তকারী অফিসারও পরিবর্তন করা হয়েছে৷ বিষয়টি নিয়ে পৃথকভাবে বিভাগীয় তদন্ত করছে জেলা স্বাস্থ্য দফতরও৷ মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সুপার মাসুদ আলি বলেন, ‘‘ওই বৃদ্ধ যে ফ্লোরে ভর্তি ছিলেন, সেই ফ্লোরেই একটি নির্মাণের কাজ চলছে৷ মনে হয়, ওই বৃদ্ধ কোনভাবে বেড থেকে উঠে সেখানে চলে গিয়েছিলেন৷ তারপর কোনভাবে দুর্ঘটনা হয়৷ যদিও তদন্ত চলছে৷ তারপরই বিষয়টি স্পষ্ট হবে৷’’

তবে ঘটনায় যে অনেক প্রশ্ন রয়েছে তা মেনেছেন জেলার পুলিশ কর্তারাও৷ পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘সবদিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করা হচ্ছে৷ যে ভিডিওটা পাওয়া গিয়েছে সেটাও ফরেন্সিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে৷ কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্টে চূড়ান্ত মত দেওয়া হয়নি৷ আমরা তার অপেক্ষয় রয়েছি৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death আলি ইমান আনসারি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE