তাড়া: জলঢাকার চরে বেশ কিছুদিন ধরে চলছে বুনো হাতির তাণ্ডব। তাদের রুখতে চেষ্টা চালাচ্ছে বনদফতর। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
গভীর রাতে কড়া নাড়া শুনলেই জঙ্গল ঘেরা গ্রামের বাসিন্দারা বুঝে নেন দরজায় দাঁড়িয়ে ‘হাতিম্যান’। তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন তাঁরা। এরপরেই চলা যান নিরাপদ দূরত্বে। হাতি ঘর ভাঙলেও নিরাপদ থাকেন বাসিন্দারা।
প্রায় রোজ রাতেই হাতির হানা দেয় বৈকুন্ঠপুর জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে। সোমবার রাতেও ললিতাবাড়ি গ্রামে হাতি ঢুকে চারটি ঘর ভেঙেছে। হাতির হানায় কেউ যাতে হতাহত না হন তার জন্য বৈকুন্ঠপুরে রাতভর নজরদারি শুরু হয়েছে। এই কাজে নিযুক্ত করা হয়েছে এলাকারই কিছু বাসিন্দাকে। যাঁদের দৈনিক মজুরি দিচ্ছে বন দফতর।
সন্ধে থেকে শুরু হয় নজরদারি। গ্রামের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকেন তাঁরা। কোনও দিক থেকে হাতি ঢুকতে দেখলেই মোবাইলে খবর দেওয়া নেওয়া হয়ে যায়। খবর পৌঁছে যায় বন দফতরের স্কোয়াডের কাছেও। এরপরেই শুরু হয় হাতিম্যানদের আসল কাজ। গ্রামের বাসিন্দাদের দরজার কড়া নেড়ে, ধাক্কা দিয়ে, হাঁকডাক করে জানিয়ে দেন হাতি আসার কথা। ঘুম ছেড়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন বাসিন্দারা। বনকর্মীদের দাবি, অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে হাতি প্রথমেই গ্রামে ঢুকে তছনছ শুরু করে না। প্রথমে কিছুক্ষণ গাছগাছালির ডাল ভাঙে। এই সময়টুকুতে হাতি তাঁড়ানোর স্কোয়াড গ্রামে পৌঁছে যেতে পারে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনের কথায়, ‘‘এই সময়টায় সাধারণত হাতির হানা বাড়ে। তবে বন দফতর সজাগ রয়েছে। নানা জায়গায় নানা পন্থা নেওয়া হচ্ছে। মূল হল বাসিন্দাদের সজাগ করা।’’
বন দফতর জানাচ্ছে, বৈকুন্ঠপুরে অন্তত ৭০টি হাতি রয়েছে। সন্ধ্যে নামলে সেগুলিই নানা দলে, উপদলে ভাগ হয়ে জঙ্গল ছেড়ে হাঁটা দিচ্ছে গ্রামের পথে। অথবা গ্রামের মধ্যে দিয়ে এক জঙ্গল থেকে অন্য জঙ্গলে যাচ্ছে। বেলাকোবার রেঞ্জ অফিসার সঞ্জয় দত্ত বলেন, ‘‘আমরা যে ব্যবস্থা চালু করেছি তার প্রথম সাফল্য হল বাসিন্দারা আগেভাগেই হাতি আসার কথা টের পেয়ে যাচ্ছে। আমরাও দ্রুত খবর পাচ্ছি। সে কারণে বড় ক্ষতি হওয়ার আগেই স্কোয়াড, বনকর্মী অথবা বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যরা পৌঁছতে পারছে।’’
বৈকুন্ঠপুরের মারিঙ্গাঝোড়া, ললিতাবাড়ি সহ ১০টি গ্রামে নজরদারি রাখা হয়েছে। এই গ্রামগুলিতেই হাতির উপদ্রব বেশি। দিনে দু’থেকে তিনশো টাকা মজুরি দেয় বন দফতর। বৈকুন্ঠপুরে হাতি স্কোয়াড রয়েছে একটিই। এক গ্রামে হাতি তাড়ানোর পরেই খবর আসে অন্য গ্রাম থেকে। দশ থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে গ্রামে পৌঁছতে যত সময় লাগে ততক্ষণে ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যায়।
স্কোয়াড পৌঁছনোর আগে বন কমিটির সদস্যরাও মশাল জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে হাতিকে দূরে রাখতে পারে। যে সব গ্রামের কাছাকাছি হাতির দল থাকছে, সেখানেই নজরদার নিয়োগ করা হচ্ছে। হাতি আসার খবর বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এরাই এখন ‘হাতিম্যান’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy