Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছেলে, রাজ্য ঢুঁড়ছেন বাবা

কলকাতায় চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছেলের খোঁজ পেতে চার মাস ধরে নিজেই তদন্ত করছেন রাজ্যের অডিট-অ্যাকাউন্টস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক দার্জিলিঙের তাগদার বাসিন্দা দিলীপ রাই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০২:১২
Share: Save:

নিয়মমাফিক জানিয়েছিলেন পুলিশকে। দ্বারস্থ হয়েছেন সিআইডিরও। কিন্তু ছেলে কোথায়, হদিশ দিতে পারেননি তাদের কেউই। তাই কলকাতায় চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে নিখোঁজ ছেলের খোঁজ পেতে চার মাস ধরে নিজেই তদন্ত করছেন রাজ্যের অডিট-অ্যাকাউন্টস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিক দার্জিলিঙের তাগদার বাসিন্দা দিলীপ রাই।

কখনও ছুটে যাচ্ছেন লালবাজারে। কখনও যাচ্ছেন ভবানী ভবনে। আবার কখনও ব্যাঙ্কে গিয়ে ছেলের এটিএম থেকে টাকা তোলার বিবরণ বার করছেন। বৌবাজারের মেসে কিছু সূত্র পেয়ে ছুটছেন মুর্শিদাবাদে। আবার কখনও ফারাক্কায় গিয়ে নদীর ধারে জেলেদের সঙ্গে কথা বলে নিরুদ্দিষ্টের গতিবিধির ম্যাপ তৈরির চেষ্টা করছেন। আর নিয়ম করে সেই তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ ও সিআইডির কাছে।

পুলিশ ও সিআইডির তরফে দাবি করা হয়েছে, বৃদ্ধের দেওয়া সূত্র তাঁর ছেলে অবিনাশের হদিস করার কাজ এগিয়ে দিচ্ছে অনেকটাই। অবশ্য তাদের একাংশ একান্তে জানান, নিরুদ্দেশ সংক্রান্ত কয়েকশো মামলা জমে রয়েছে তাঁদের কাছে। পর্যাপ্ত অফিসার-কর্মী নেই। তাই তাঁদের যে কাজ করার কথা, সেটা ওই বৃদ্ধকে করতে হচ্ছে।

৩৩ বছরের অবিনাশ রাজ্য সরকারের অডিট অ্যান্ট অ্যাকাউন্ট সার্ভিসের প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। চূড়ান্ত পরীক্ষা দিতে গত ১১ অক্টোবর কলকাতা যান। ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত রোজ বাড়িতে কথাবার্তা বলেছেন।

কিন্তু, ১৪ অক্টোবর সকাল থেকে তাঁর কোনও হদিস মেলেনি। দিলীপবাবুর দুই ছেলে। বড় ছেলে চাকরি করেন। ছোট ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পরে প্রথমে রংলি রংলিয়ত থানায় ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন তিনি। কিন্তু, তদন্তের অগ্রগতি না হওয়ায় কলকাতায় গিয়ে লালবাজার ও ভবানী ভবনে অভিযোগ জানান। কিন্তু, দিলীপবাবু বুঝতে পারেন, কয়েকশো নিখোঁজ মামলার ফাইলের আড়ালে চাপা পড়ে থাকবে অবিনাশের নিখোঁজের অভিযোগ।

তারপরে নিজেই আসরে নামেন। প্রথমে ব্যাঙ্কে গিয়ে এটিএমের সূত্র ধরে জানতে পারেন, ১৩ তারিখ তারাচাঁদ দত্ত স্ট্রিট থেকে ৭০২৩ টাকা তুলেছিল ছেলে। এও জানতে পারেন, ১৪ অক্টোবর ছেলে মেসে জায়গা না পেয়ে অন্যত্র চলে যায়।

তাঁর দুটি মোবাইলই বন্ধ ছিল। দিলীপবাবু জানতে পারেন, ফারাক্কার নির্মাণ সংস্থার চৌকিদার একটি ফোন পুলিশের কাছে জমা দিয়েছেন। সেই সূত্রে ফারাক্কার এক পুলিশকর্মীর কাছে জানতে পারেন, ছেলেকে সেখানে দেখা গিয়েছিল। সে ধুলিয়ানের বাসে উঠে গিয়েছিল।

ধূলিয়ানে গিয়ে দিলীপবাবু ঘোরাঘুরি করে যে হোটেলে ছেলে খেয়েছিল তা খুঁজে বার করেন। সেখান থেকে জানতে পারেন, কয়েকদিন সেখানে থেকে বহরমপুরের বাসে উঠেছে। বহরমপুরে গিয়ে লিফলেট বিলি করে ছড়িয়ে দেন।

দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ছেলে যে দিশাহীন অবস্থায় ঘুরে বেড়াচ্ছে সেটা বুঝতে পারছি। আমার পক্ষে একা যতটা সম্ভব খোঁজখবর করছি। যা সূত্র পাচ্ছি, সবই পুলিশ, সিআইডির হাতে তুলে দিচ্ছি। কিন্তু, এই খোঁজ কবে শেষ হবে জানি না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Examination Education Students Missing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE