Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পরিচিতের হাত ধরেই শিশু পাচার

বছরখানেক আগে পানিঘাটা চা বাগানের এক শ্রমিকের স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় বাপের বাড়ি যান। সেখানে কন্যা সন্তানের জন্ম হলেও বাড়িতে আনেননি তাকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনির্বাণ রায়
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৪
Share: Save:

কারও আট বছরের মেয়ে বছর তিনেক ধরে নিখোঁজ। কারও শিশুপুত্র হারিয়ে গিয়েছে চার বছর আগে। বছর ঘুরলেও কারও সদ্যোজাত কন্যাকে নিয়ে চলে যাওয়া আত্মীয় ফেরত আসেনি আর। এদের প্রত্যেকেই গরিব চা শ্রমিক পরিবারের। এবং এর কোনও ক্ষেত্রেই পুলিশ-প্রশাসনের কাছে কোনও নালিশ জানাননি কেউ। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই পরিবারকে জানিয়ে ও নানা টোপ দিয়ে শিশুদের ভিন রাজ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। সম্প্রতি ওই তিন শিশুর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

বছরখানেক আগে পানিঘাটা চা বাগানের এক শ্রমিকের স্ত্রী গর্ভবতী অবস্থায় বাপের বাড়ি যান। সেখানে কন্যা সন্তানের জন্ম হলেও বাড়িতে আনেননি তাকে। স্বামীকে জানান, তাঁর এক আত্মীয় চিকিৎসার জন্য সদ্যোজাতকে বাইরে নিয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি লাগোয়া ঘোষপুকুরে তাঁর বাচ্চাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলে পরে জানতে পারেন শিশুটির বাবা। তবে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘কে কী ভাবে বাচ্চা নিয়ে গেল, জানি না।’’

নকশালবাড়ির অর্ড চা বাগানের দারা লাইনের বাসিন্দা রেজিনা ওঁরাও-এর ছেলে চার বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যায়। সে সময়ে ছেলের বয়স ছিল আট। রেজিনার দাবি, তার মাসখানেক পরে এক পরিচিত এসে জানায়, তাঁর ছেলে কলকাতায় কাজ করছে। বড় ছেলে বেপাত্তা হওয়ার পরে ছোট ছেলেকেও কাজে নিয়ে যেতে এসেছিলেন সেই পরিচিত মহিলা। কিন্তু তাকে আর কাছছাড়া করেননি রেজিনা। সম্প্রতি তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁর বড় ছেলেকে দিল্লির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার করেছে। যদিও ছেলেকে কী ভাবে ফিরিয়ে আনবেন, জানেন না।

ওই চা বাগানেরই শান্তিনগর নয়ালাইনের বাসিন্দা রিশা ওঁরাওয়ের ৮ বছরের মেয়েরও খোঁজ নেই বছর তিনেক ধরে। অভিযোগ, এলাকারই এক বাসিন্দা তাঁর মেয়েকে জোর করে করে বাইরে নিয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও অভিযোগ হয়নি। মায়ের মন্তব্য, ‘‘ভেবেছি মেয়ে ফিরে আসবে।’’

চা বাগানে সমীক্ষার কাজ চালানো সংগঠনগুলির অভিযোগ, আত্মীয়-পরিজন অথবা খুবই পরিচিত কারও মাধ্যমে শিশুগুলি হাতবদল হয়েছে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে মোটা টাকা ধরানো হয়েছে পরিবারগুলির হাতে। অভিযোগ করলে টাকা নেওয়ার দায়ে তাঁরাও ফেঁসে যেতে পারেন বলে ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়েছে কয়েকটি পরিবারের। দার্জিলিং লিগাল এড ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকার বলেন, ‘‘সব ক্ষেত্রেই আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে চা বাগানের কোনও শিশুরই নিরাপত্তা থাকবে না।’’ শিশু পাচারের একটি আন্তর্জাতিক চক্র চা বাগানে কাজ করছে বলে অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির। প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Trafficking Familiar Relatives
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE