Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিন্তা কাটছে না, ঠায় অপেক্ষা স্কুলের দোরে

নতুন করে দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনিক নির্দেশে স্কুল কর্তৃপক্ষ জাতীয় সড়কের ধারের গেটটি সিল করে দিয়েছেন।

উদ্বেগ: দুর্ঘটনার ভয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে রায়গঞ্জে তারই সামনে অপেক্ষায় থাকছেন অভিভাবকেরা। সঙ্গে করে নিয়ে ফিরবেন বলে। নিজস্ব চিত্র

উদ্বেগ: দুর্ঘটনার ভয়ে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে রায়গঞ্জে তারই সামনে অপেক্ষায় থাকছেন অভিভাবকেরা। সঙ্গে করে নিয়ে ফিরবেন বলে। নিজস্ব চিত্র

গৌর আচার্য
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০২
Share: Save:

পুলিশের প্রতি আস্থা এখনও ফেরেনি। অভিভাবকেরা নিজেরাই সোমবার টোটো, রিকশা, অটো ও মোটরবাইকে চাপিয়ে ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে এলেন। তার পর বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে অবধিও ঠায় তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল স্কুলের গেটে। রায়গঞ্জের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দশম শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যুর পরে এ দিন প্রথম খোলে সুদর্শনপুর দ্বারিকাপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যাচক্র স্কুল। ট্র্যাফিক পুলিশের কর্মীরা এগিয়ে এসে এ দিন বহু পড়ুয়াকে রাজ্যসড়ক পার করিয়ে স্কুলে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। তবে তাতেও উদ্বেগ কাটিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না অভিভাবকেরা।

নতুন করে দুর্ঘটনা রুখতে প্রশাসনিক নির্দেশে স্কুল কর্তৃপক্ষ জাতীয় সড়কের ধারের গেটটি সিল করে দিয়েছেন। ফলে এ দিন পড়ুয়ারা রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্যসড়কের ধারে স্কুলের প্রধান গেট দিয়েই যাতায়াত করেছে। রায়গঞ্জ ট্র্যাফিক পুলিশের নয়া ওসি পিনাকী সরকারের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ জন পুলিশকর্মীকে স্কুল সংলগ্ন জাতীয় ও রাজ্যসড়কে ব্যারিয়ার বসিয়ে ফুটপাথ তৈরি করে সক্রিয় ভাবে যান নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

অমিতাভ স্বর্ণকার, রমলা সাহা, বলাই মিত্রের মতো অনেক অভিভাবকেরই বক্তব্য, প্রতীকের মৃত্যুর পরে গোলমাল হওয়ায় ট্র্যাফিক পুলিশ অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই সক্রিয়তা কত দিন থাকবে, সে নিয়ে তাঁদের সংশয় আছে। তাঁদের দাবি, দুর্ঘটনা রুখতে সকাল ১০টা থেকে ১১টা ও দুপুর আড়াইটে থেকে সাড়ে চারটে পর্যন্ত রাজ্য সড়কের ধারের গেটের সামনে পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক পুলিশ মোতায়েন রাখা জরুরি। তবে রায়গঞ্জের ডিএসপি প্রসাদ প্রধানের দাবি, যানজট ও দুর্ঘটনা রুখতে ট্র্যাফিক পুলিশ সব সময় সক্রিয়।

প্রতীকের দুর্ঘটনার ধাক্কা পড়ুয়াদের উপরেও কম পড়েনি। এ দিন প্রতীকের স্মরণে শোকসভার আয়োজন করে স্কুল। সেখানে প্রার্থনার লাইনেই আচমকা অসুস্থ হয়ে অচেতন হয়ে পড়ে স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী সুপর্ণা ঘোষ। তড়িঘড়ি তাকে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের জন্য স্কুলের গেটের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন। সুপর্ণার অসুস্থতার খবরে তাঁদের আতঙ্ক চরমে ওঠে। পরে সুপর্ণা বলে, কিছুতেই ঘটনাটা মেনে নিতে পারছে না। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেটা নেই, ভাবতে পারছি না।’’

শুক্রবার সাইকেলে চেপে স্কুলে ঢোকার মুখে জাতীয় সড়কের ধারে কলকাতাগামী ট্রাকের ধাক্কায় প্রতীক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। ট্র্যাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ট্রাক থামিয়ে তোলা আদায় ও যান নিয়ন্ত্রণের কাজে গাফিলতির অভিযোগে এর পরেই বিক্ষোভ শুরু করেন কয়েকশো বাসিন্দা। আন্দোলনকারীরা ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মীদের মারধর, ট্র্যাফিক কার্যালয় ও ট্র্যাফিক পুলিশের তিনটি মোটরবাইক ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। পুলিশের বিরুদ্ধে শূন্যে গুলি চালানোরও অভিযোগ ওঠে। ইট ও পাথরের আঘাতে জখম হন ১৫ জন পুলিশকর্মী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Students Guardians Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE