Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ইলিশ-রাজে পাঁঠা ব্রাত্যই

সত্যেনন্দ্রনাথ দত্তর ‘ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে, নাচছে ইলিশ মাছ’—এমনই সহজ-সরল ভাবে বাজারে ফিরেছে ইলিশ। কোথাও থার্মোকলের উঁচু বাক্সে বা কোথাও ঝুড়িতে বা টিনের ছড়ানো পাত্রে স্তূপীকৃত, রাশি রাশি ইলিশ। সকালের রোদে রীতিমতো চকচক করছে রুপোলি শস্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মালদহ শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৩২
Share: Save:

মাত্র দু’শো টাকা কেজিতে ইলিশ মেলায় গত সপ্তাহের রবিবার হইচই পড়ে গিয়েছিল মালদহের বাজারে। এই রবিবারে ইলিশ দু’শোতে মিলল না ঠিকই। তিনশো থেকে শুরু হয়ে ঠেকেছে সাড়ে পাঁচশোয়। কিন্তু তাতে কী, এ দিনও মালদহের বাসিন্দাদের মন মজে রইল রুপোলি শস্যেই। বেশির ভাগই ফিরে তাকালেন না খাসি বা মুরগির দিকে। ফলে পুজোর মুখে বেজার মুখ মাংস বিক্রেতাদের। ইলিশ নিতে গিয়ে প্রশ্ন একটাই—‘‘ডিম ভরা, না ছাড়া!’’

সত্যেনন্দ্রনাথ দত্তর ‘ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে, নাচছে ইলিশ মাছ’—এমনই সহজ-সরল ভাবে বাজারে ফিরেছে ইলিশ। কোথাও থার্মোকলের উঁচু বাক্সে বা কোথাও ঝুড়িতে বা টিনের ছড়ানো পাত্রে স্তূপীকৃত, রাশি রাশি ইলিশ। সকালের রোদে রীতিমতো চকচক করছে রুপোলি শস্য। এ দিন বেলা বাড়তেই নেতাজি পুর বাজার, মকদমপুর বাজারে গিজগিজ করছে ক্রেতার ভিড়। কারও পছন্দ ডিম ছাড়া একটু চওড়া ইলিশ। কেউ আবার ডিম ভরা ছাড়া নেবেনই না। পরের সংখ্যাই অবশ্য বেশি। খরিদ্দারদের সেই আবদার মেটাতে স্তূপীকৃত মাছের মধ্যে থেকে ডিমওয়ালা মাছ খুঁজে বের করতে মাছওয়ালার গলদঘর্ম অবস্থা। ইলিশপ্রেমীদের সামলাতে তাঁরা হিমশিম। হবেন নাই বা কেন? তিনশো টাকা কেজি দরে পাঁচশো গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে যে! তবে, ওজন ছশো ছাড়ালেই চারশো থেকে সাড়ে পাঁচশো।

শেষ কবে এ রকম ধুলোর দরে ইলিশ বিক্রি করেছেন তা মাছ ব্যবসায়ীরাও মনে করতে পারছেন না। নেতাজি পাইকারি মাছ বাজারের সহকারী সম্পাদক কাইউম মহলদার বলেন, ‘‘দিঘা, ডায়মন্ড হারবার, এমনকী উড়িষ্যার বালেশ্বর—সব জায়গা থেকেই জালে উঠছে টন-টন ইলিশ। দেদার জোগান, তাই দাম এখনও নাগালের মধ্যে। আরও অন্তত পাঁচ থেকে সাত দিন এমন চলতে পারে। অনেক বছর এ দামে ইলিশ মানুষ পায়নি।’’

এ দিন সাত সকালেই নেতাজি পুর বাজারে এসেছিলেন বিবেকানন্দ পল্লির আমিত সরকার। তিনি বললেন, “এত কম দাম ভাবতেই পারছি না। তাই জোড়া ইলিশ কিনে ফেললাম। একটাতে আবার ডিম রয়েছে। এমন নধর ইলিশ কি হাতছাড়া করা যায়?” মহেশমাটির বাসিন্দা রজত সাহা বললেন, “ডিম ভরা এমন সস্তার ইলিশ অনেক বছর দেখিনি। সরষে বাটা দিয়ে জমে যাবে!” এ দিন মালদহের সব বাজারেই ছিল একই ছবি। নেতাজি বাজার বা মকদমপুর বাজারে প্রতিদিন চারাপোনা বা বাটা নিয়ে যে মাছ বিক্রেতারা বসেন তাঁদেরও এ দিন আইটেম ইলিশ। এ দিকে ইলিশের বন্যায় মুরগি-খাসি ব্যবসায়ীরা কেজিতে ৩০-৫০ টাকা ছাড় দিলেও অধিকাংশ মানুষ ফিরেও তাকাচ্ছেন না। ভিড় চাক বেঁধেছে ইলিশের ঝুড়িতেই। তাই রবিবারেও ইলিশের দাপটে রীতিমতো ব্রাত্য হয়ে থাকে মুরগি-খাসি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE