সেই কবে প্রথম মন্ত্রোচ্চারণ করে অঞ্জলি দিয়েছিলেন মনে পড়ে না বিশেষ। পার হয়েছে একটার পর একটা ক্লাস। এখনতো স্কুলের গণ্ডি টপকে কলেজে। বসন্ত পঞ্চমীতে সরস্বতী বন্দনা যে অভ্যেসে ঢুকে গিয়েছে। তাই সোমবার সকালেও পুরনো স্কুলে এসেই কল্পনা, রূপশ্রী, রাজীবদের সঙ্গে হইহই করে অঞ্জলি দিলেন সুরাইয়া-মোমিনুররা।
সেই স্কুলের সময়কার অভ্যেস। উপোস করে থাকা। তারপর পুজো শেষে হাতে ফুল বেলপাতা নিয়ে প্রতিমার সামনে বসে পুরোহিতের সঙ্গে মন্ত্রোচ্চারণ করে অঞ্জলি দেওয়া। সুরাইয়া পরভিন বললেন, “এখন স্নাতক বর্ষের ছাত্রী আমি। যে দিন থেকে স্কুলে ভর্তি হয়েছি, উপোস করে অঞ্জলি দিই। অঞ্জলি না দেওয়ার কথা আমি কোনও দিন ভাবতেই পারি না।” আর তাঁর পাশেই বসে থাকা কল্পনা বর্মন বললেন, “আমরা তো একসঙ্গেই থাকি। একসঙ্গেই একে অপরের অনুষ্ঠানে মিলিত হই। বিদ্যার দেবীর আরাধনাও আমরা একসঙ্গেই করি।”
সুরাইয়ার বাড়ি কোচবিহারের রেলগেট এলাকায়। ঘুঘুমারি হাইস্কুলের এই প্রাক্তনী এখন মহিলা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। কিন্তু নিয়ম করে বাড়ির কাছে ঘুঘুমারি হাইস্কুলেই অঞ্জলি দেন তিনি। এ বারেও তার কোনও হেরফের হয়নি। শুধু সুরাইয়া নয়, ব্রহ্মানীর চৌকি হাইস্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মোমিনুর, জাহাঙ্গির থেকে শুরু করে আরও অনেকেই সামিল হলেন বাগদেবীর আরাধনায়। কোচবিহার আদালতের আইনজীবী তথা নতুন মসজিদ কমিটির সভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, “এটা আমাদের সংস্কৃতি। প্রথা। এখানে ধর্ম কোনও বিষয় নয়। বাঙালিরা এ ভাবেই যুগ যুগ ধরে একসঙ্গে বাস করছি। একে অন্যেকে সম্মান করে। ভালবেসে।”
একই কথা শোনা গেল ঘুঘুমারি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম সাহার মুখেও। তিনি জানান, তাঁর স্কুলের ছাত্রছাত্রীর মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তিনি বলেন, “সবাই মিলেই তো বিদ্যাদেবীর আরাধনা করি। উপোস করে একসঙ্গে ছাত্র ছাত্রীরা অঞ্জলি দেয়। কত আনন্দ হয়।”
কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়ও এই স্কুলের সহ-শিক্ষক। তিনি জানান, তাঁর স্কুলের ছাত্র মোমিনুর, জাহাঙ্গির সবাই মিলে অঞ্জলি দিয়েছেন। তিনি বলেন, “সবাই এভাবেই একসঙ্গে থাকি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy