কন্যাশ্রী: মায়ের সঙ্গে সদ্যোজাত। —নিজস্ব চিত্র।
নারী দিবস কী, খায় না মাথায় দেয় বিশেষ জানতেন না গোলাপী। জায়ের মেয়ে হয়েছে শুনে বৃহস্পতিবার সকালে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছিলেন হাসপাতালের দিকে। পথেই গ্রামের লোকের মুখে শোনেন, ‘এ দিন নারী দিবস। আজকের দিনে মেয়ে হওয়া তো বড়ই সুখবর!’ তাঁর নিজেরও ছয় মেয়ে। ছোট মেয়ে এখনও স্কুলে পড়ছে। বছর খানেক বাদেই ‘কন্যাশ্রী’র টাকা, সাইকেল পাবে। গ্রামের আরও অনেক মেয়েই এই সুবিধা পাচ্ছে। আর দেরি করেননি। ঠিক করে নেন জায়ের এই দ্বিতীয় মেয়ের নাম রাখবেন মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্পের নামেই। ‘কন্যাশ্রী’ নামটি মনে ধরে যায় সদ্যোজাতর মা সুনীতা চৌধুরীরও। ব্যস! তার পর থেকেই নারী দিবসে এমন নামকরণে এক নিমেষে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ছোট্ট কন্যাশ্রী। তাকে দেখতে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে দিনভর ভিড় লেগেই থাকল নার্স-চিকিৎসকদের।
এ দিনই সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন ইংরেজবাজার থানার মহদিপুরের কাঞ্চনটার গ্রামের বাসিন্দা সুনীতা। সকাল দশটা নাগাদ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। প্রসূতি বিভাগে কর্তব্যরত এক নার্স বলেন, “মেয়ে জন্মানোর পর অনেক পরিবারেরই মুখভার হয়ে যায়। তবে এই পরিবারে একাধিক কন্যাসন্তান থাকলেও সদ্যোজাতকে এমন খুশির আবহাওয়ায়, ভেবেচিন্তে এত সুন্দর নাম দেওয়ায় আমরাও খুবই আনন্দিত।’’
সুনীতার স্বামী সুনীল বেঙ্গালুরুতে শ্রমিকের কাজ করেন। বছর ছয়েক আগে নালাগোলার মেয়ে সুনীতার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। তাঁদের একটি চার বছরের মেয়ে রয়েছে। ছোট সন্তানের নাম কেন দিলেন কন্যাশ্রী?
সুনীতা বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামের অনেক মেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কন্যাশ্রী প্রকল্পে টাকা পেয়েছে। এ ছাড়া অনেকে সাইকেল পেয়েছে। এই প্রকল্প গ্রাম বাংলার মেয়েদের জীবন বদলে দিচ্ছে। তাই মেয়ের জন্য এই নামই পছন্দ হল।’’ সুনীতার বড় জা গোলাপীর মুখে তখন এক গাল গর্বের হাসি। গর্ভাবস্থায় দেওরের অবর্তমানে তিনিই দেখে রেখেছিলেন সুনীতাকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছ’মেয়ে রয়েছে। পাঁচ মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। কন্যাশ্রী নামটা খুবই ভাল লেগেছে। লোকমুখে শুনলাম এ দিন আন্তজার্তিক নারী দিবস। যদিও এ ব্যাপারে বিশেষ কিছু জানি না। কিন্তু এমন দিনে জন্মানোয় পরিবারের এই ছোট মেয়ের নাম রাখতে চাই কন্যাশ্রী।’’
সদ্যোজাতর এই নামকরণই এখন হাসপাতালের মাতৃমা বিভাগে মূল চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। রোগী থেকে শুরু করে নার্স, চিকিৎসকদের মধ্যে চলছে জোর চর্চা। এক মহিলা স্বাস্থ্য কর্মী বলেন, ‘‘লোকমুখে এমন প্রচার হয়ে গিয়েছে। তাই সকলেই প্রায় দেখতে আসছেন শিশুটিকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy