Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওটি-তে গোল, দাপট আয়ারও

এক দিকে আয়াদের একাংশের দাপট। তাদের হাত থেকে তবু যদি বাঁচা যায়, কিন্তু অস্ত্রোপচার টেবিলে গিয়েই বাঁধবে গোলমাল। কারণ, হাসপাতালে চারটে ওটি-র মধ্যে তিনটেতেই ‘সিলিং লাইট’ খারাপ। এই নিয়েই আপাতত রয়েছে শিলিগুড়ি হাসপাতাল।

ভূমিশয্যা: এই ভাবে মাটিতেই বিছানা প্রসূতির। নিজস্ব চিত্র

ভূমিশয্যা: এই ভাবে মাটিতেই বিছানা প্রসূতির। নিজস্ব চিত্র

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

এক দিকে আয়াদের একাংশের দাপট। তাদের হাত থেকে তবু যদি বাঁচা যায়, কিন্তু অস্ত্রোপচার টেবিলে গিয়েই বাঁধবে গোলমাল। কারণ, হাসপাতালে চারটে ওটি-র মধ্যে তিনটেতেই ‘সিলিং লাইট’ খারাপ। এই নিয়েই আপাতত রয়েছে শিলিগুড়ি হাসপাতাল। হাসপাতালের সুপার অমিতাভ মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা পরিষেবার মান আরও ভাল করতে চেষ্টা করছি। যে সমস্ত খামতি রয়েছে সেগুলো মিটিয়ে ফেলা হবে।’’

কিন্তু সেটা কত দূর সম্ভব? আয়াদের একাংশ যে দৌরাত্ম্য চালান বলে অনেক রোগীর বাড়ির লোকই অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সামলাবেন কী ভাবে? অভিযোগ, নিখরচায় চিকিৎসা করাতে গিয়েও প্রসূতি বিভাগ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আয়াদের প্রতিদিন অন্তত ২০০-৪০০ টাকা করে দিতে হয় রোগীর পরিবারকে। দিনে এবং রাতে আয়াদের কাজের জন্য ওই টাকা দিতে হয়। প্রসূতি বিভাগে তাদের দাপট বেশি। টাকা না দিলে ওয়ার্ডের ভিতরে রোগীদের ঠিক মতো দেখভাল করা হয় না। তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা পীযূষ রায় বলেন, ‘‘এই নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ। হাসপাতালে নিখরচায় চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করছে সরকার। অথচ আয়াদের জন্য রোগীর লোকদের টাকা দিতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিত এটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা।’’

সুপার অমিতাভবাবু অবশ্য ‘আয়ারা হাসপাতালের কেউ নয়’ বলে দায় এড়িয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রোগীর লোক হয়েই আয়ারা ওয়ার্ডে থাকেন।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু চুরির ঘটনার পর হাসপাতালে আয়াদের বিষয়টি নিয়েও ভাবছে সরকার। কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তা দেখেই পদক্ষেপ করার কথা ভাববেন, জানিয়েছেন শিলিগুড়ি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

শিলিগুড়ি হাসপাতাল

• শয্যা সংখ্যা: ৩৬৫

• চিকিৎসক: ৫৯

• নার্স: ১৪৪

• স্বাস্থ্য কর্মী: ১২৪

• শূন্যপদ: অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার

ডিএনএস-১

জিডিএমও-৪

চতুর্থ শ্রেণির কর্মী-৩০

• বিশেষজ্ঞ নেই: হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, নিউরোলজিস্ট, নেফ্রলজিস্ট

• যন্ত্র: ডায়ালিসিস, ডিজিটাল এক্সরে, সিটি স্ক্যান, আলট্রাসোনগ্রাফি

• যন্ত্র নেই: লেপ্রস্কোপির যন্ত্র নষ্ট • রেফার গড়ে মাসে: ৩৫০

পাশাপাশি রয়েছে চিকিৎসা সংক্রান্ত অব্যবস্থা। অভিযোগ, কয়েক বছর ধরেই লেপ্রস্কোপির যন্ত্র অকেজো। তাই গলব্লাডারের অস্ত্রোপচার বন্ধ। তিনটি ওটি-তে সিলিং লাইট খারাপ থাকায় বড় অস্ত্রোপচার করতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। চাপে পড়ে করতে হলেও ‘স্পট লাইট’ দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। অর্থোপেডিক বিভাগের অস্ত্রোপচারে জরুরি ড্রিল মেশিনেও গোলমাল। ফলে তা দুই সপ্তাহেরও বেশি বন্ধ। অস্ত্রোপচারের সময় অত্যন্ত জরুরি ‘সাকার মেশিন’ তিনটির মধ্যে একটি কাজ করছে।

কয়েক মাস আগে ডেঙ্গি রোগীর রক্ত পরীক্ষা করতে গিয়েও সমস্যা দেখা দেয়। যাঁর রক্তে জীবাণু পেয়েছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে তাঁর রক্তে কোনও জীবাণু নেই! এই নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তার পরে দেখা যায়, রক্ত পরীক্ষায় একের রিপোর্ট অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অভিযোগও উঠছে।

এ সব নিয়েই আপাতত বেঁচেবর্তে আছে এই হাসপাতাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Floor Hospital Lights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE