Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রেস্তরাঁর রান্নাঘর যেন আরশোলার বৈঠকখানা

কোথাও দেখা যাবে, যেখানে বিশাল তাওয়ায় পরোটা তৈরি হচ্ছে কিংবা যে কড়াইয়ে লুচি-শিঙ্গাড়া ভাজা হচ্ছে তার পাশের দেওয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরশোলা।

বিপজ্জনক: রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে গিজগিজ করছে আরশোলা। নিজস্ব চিত্র

বিপজ্জনক: রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে গিজগিজ করছে আরশোলা। নিজস্ব চিত্র

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

বাইরে ঝাঁ চকচকে রেস্তরাঁ। কিন্তু, বেশ কয়েকটি হোটেল-রেস্তরাঁর রান্নাঘরে ঢুকলেই চোখ কপালে উঠে যেতে পারে যে কারও।

কোথাও দেখা যাবে, যেখানে বিশাল তাওয়ায় পরোটা তৈরি হচ্ছে কিংবা যে কড়াইয়ে লুচি-শিঙ্গাড়া ভাজা হচ্ছে তার পাশের দেওয়ালে ঘুরে বেড়াচ্ছে আরশোলা। আবার কোনও বাতানুকূল রেস্তরাঁর রান্নাঘরে গিয়ে দেখা যাবে খালি গায়ে দরদর করে ঘামতে ঘামতে খাবার তৈরি করছেন পাচক ও সহকারীরা। বিধি মেনে কারও মাথায় ঢাকা নেই। হাতে গ্লাভস নেই। পরণে অ্যাপ্রন নেই। ফলে, স্বাদু খাবার খেয়ে জিএসটি সহ মোটা টাকার বিল গুনতে হচ্ছে যে খদ্দেরদের, তাঁরা কতটা নিরাপদ সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

যেমন আলিপুরদুয়ার মানবিক মুখ সংস্থার কর্ণধার রাতুল বিশ্বাসের কথাই ধরা যাক। সম্প্রতি তিনি ডুয়ার্সের একটি হোটেলে খাবার খেতে গিয়েছিলেন। তা সরবারহে দেরি হচ্ছে দেখে কৌতুহলী হয়ে রান্নাঘরে উঁকি মেরে দেখেন, তিন দিকের দেওয়াল আরশোলায় ভরে রয়েছে। মোবাইলে সেই ছবি তুলে সরাসরি পুরসভা, প্রশাসনের অফিসারদের কাছে পাঠিয়েছেন তিনি। রাতুল বলেন, ‘‘ছবিগুলো দেওয়ার পরে প্রশাসনের তরফে আমাকে আশ্বাস দেওয়া হয় অভিযান চালানো হবে। কিন্তু, তা কবে হবে সেটা জানাতে পারেননি কেউ। ফলে, আরশোলা থাকলেও ক্রেতাদের তা মেনে নিতে হচ্ছে।’’

একই ছবি শিলিগুড়িতেও। হিলকার্ট রোডের একটি নামী দোকানে ধোসায় মিলেছিল আরশোলা ভাজা। তদন্তে নেমে পুরসভা দেখেছিল, দেওয়ালে ছেয়ে থাকা আরশোলা ধোসার তাওয়ায় পরে গেলেও তা দেখতে পাননি পাচক। তরকারির সঙ্গে তা ভাজা হয়ে ক্রেতার কাছে পৌঁছেছিল।

পুরসভার স্যানিটরি ইন্সপেক্টর গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ওই হোটেল বন্ধ করে রান্নাঘর সারাতে বাধ্য করেছিল পুরসভা।’’ কিন্তু, শহরের চার প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অন্তত ১ হাজার হোটেল-রেস্তরাঁর রান্নাঘরের কতগুলো চূড়ান্ত অপরিচ্ছন্ন তা খুঁজে বার করার মতো পরিকাঠামো নেই বলে আক্ষেপ করেন গণেশবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বিভাগে কর্মীর সংখ্যা কম। তাও ডেঙ্গি, সাফাই সহ সব কাজেই ছুটতে হয়। সব হোটেল-রেস্তরাঁয় অভিযানের সময় কোথায়!’’

তবুও মাসে অন্তত ৭ দিন অভিযান করেন ওঁরা। পুরসভার দাবি, শুধু অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি অবধি শহরে তল্লাশি চালিয়ে ৪২টি হোটেল-রেস্তরাঁর রান্নাঘর পরিচ্ছন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ির মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সীমিত পরিকাঠামোর জন্য হোটেলের রান্নাঘরে নজরদারি ঠিকঠাক হচ্ছে। শূন্যপদ পূরণের জন্য রাজ্যের সহযোগিতা চেয়েছি। যতদিন তা না মেলে কর্মীদের বাড়তি কাজ করতে অনুরোধ করেছি।’’

শিলিগুড়ির হোটেল-রেস্তরাঁ সংগঠনের কর্তারা অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁরাও সংগঠনের পক্ষ থেকে বার্ষিক সাধারণ অধিবেশনে রান্নাঘরে পরিচ্ছন্নতার উপরে জোর দিয়েছেন। শিলিগুড়ির বিধান রোজের হোটেল ও রেস্তরাঁ মালিক বাবলা ঘোষ বলেন, ‘‘কোনও মালিকই খদ্দেরকে অপরিচ্ছন্ন খাবার দিয়ে বিপদে ফেলতে চাইবেন না। তাতে ব্যবসারই বারোটা বেজে যাবে। তবে হোটেলের রান্নাঘর যেন বাড়ির মতো পরিষ্কার থাকে সেটা মালিককে নিশ্চিত করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cockroach Restaurant
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE