Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

দশ তলা হাসপাতালে এগারো ঘণ্টা এক ডাক্তার

হাসপাতাল থেকে স্কুল, শিল্প থেকে পরিবেশ, উত্তরবঙ্গে কার কী হাল, তাই নিয়ে এই প্রতিবেদন। আজ নজর স্বাস্থ্যের হালেদশ তলার একটি হাসপাতাল৷ অথচ, রাতের এগারো ঘন্টায় থাকেন মাত্র একজন চিকিৎসক৷ আর তার জেরে মাঝে মধ্যে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ৷

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:৪৪
Share: Save:

দিন কয়েক আগের ঘটনা৷ রাত তখন প্রায় পৌনে একটা৷ রোগী নিয়ে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এসে দাঁড়াল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে৷ দুই ওয়ার্ড বয় সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে একটি ট্রলিতে রোগীকে তুলে চিকিৎসকের ঘরে নিয়ে গেলেন৷ কিন্তু ঘটনাচক্রে চিকিৎসকের ঘর তখন ফাঁকা৷ রোগীর আত্মীয়রা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তখন সাত তলায় ফিমেল মেডিক্যাল ওয়ার্ডে আচমকা অবস্থা অবনতি হওয়া এক রোগীকে দেখছেন৷ সেই রোগীকে দেখে চিকিৎসক একতলায় জরুরি বিভাগে নেমে এলেন৷ তারপর শুরু হল এই রোগীর চিকিৎসা৷

দশ তলার একটি হাসপাতাল৷ অথচ, রাতের এগারো ঘন্টায় থাকেন মাত্র একজন চিকিৎসক৷ আর তার জেরে মাঝে মধ্যে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এমন ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন, চিকিৎসকের অভাবের জন্যই এমন ঘটনা ঘটছে৷ কিন্তু তাতে করে তাঁদেরই মাঝেমধ্যে সমস্যার মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের একাংশের৷

গত বছর জুন মাসে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালটি চালু হয়েছিল৷ হাসপাতালের উদ্বোধন করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তারপর ধাপে ধাপে আউটডোরের বেশ কিছু বিভাগ সেখানে চালু হয়৷

গত নভেম্বর মাসের শুরুতে জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালের ইন্ডোরের তিনটি বিভাগ ওই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ কিন্তু অভিযোগ, এই ভাবে হাসপাতাল চালু করে দেওয়া হলেও ওই হাসপাতালে বেশিরভাগ চিকিৎসকের পদই এখনও শূন্য অবস্থায় রয়েছে৷ এই অবস্থায় জেলা হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসককে দিয়েই হাসপাতালটি চালান হচ্ছে৷

কিন্তু খোদ চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, জেলা হাসপাতাল থেকে সব বিভাগ এই হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকের সংখ্যা খানিকটা বাড়ত৷ কিন্তু তা না হওয়ায় জরুরি বিভাগে তিনটি শিফটে একজন করে চিকিৎসককে ডিউটি করতে হচ্ছে৷

তবে সমস্যার এখানেই শেষ নয়৷ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার চালু হয়ে গেলেও এখনও আইটিইউ চালু হয়নি৷ ফলে চিকিৎসকদের একাংশে চিন্তা, অস্ত্রোপচারের পর কোন রোগীকে আইটিইউ-তে রাখার প্রয়োজন হলে তারা কী করবেন তা ভেবে৷ আরও অভিযোগ, অ্যানাস্থেসিয়ার সংখ্যা পর্যাপ্ত না থাকায় ও তাদের কেউ কেউ নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে সরগর না হওয়ায় জরুরী অস্ত্রপচারও দুপুর তিনটার পর করা যাচ্ছে না৷ পাশাপাশি এতবড় একটি হাসপাতাল চালু হলেও এখনও সেখানে সিটি স্ক্যান চালু হয়নি।

জলপাইগুড়ির সিএমওএইচ জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘নতুন একটি ব্যবস্থা চালু হলে কিছু কিছু সমস্যা থাকেই৷ আমরা দ্রুত সেই সমস্যা কাটিয়ে প্রয়োজনীয় সবকিছুই এই হাসপাতালে চালু করব৷ পাশাপাশি অ্যানাস্থেসিয়াদের প্রশিক্ষণ চলছে৷ চিকিৎসকও নিয়োগ হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE