Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দেহাবন্ধে তুলকালাম

ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার ভরনপোষণের জন্য ৪ লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন। তারপরেও কেন এমন ঘটনা হল, পুলিশ কেন আগাম ব্যবস্থা নেয়নি এ সব প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে বলে বিপ্লববাবু জানান।

তাণ্ডব: কুশমণ্ডির দেহাবন্ধে গ্রামে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

তাণ্ডব: কুশমণ্ডির দেহাবন্ধে গ্রামে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৭
Share: Save:

কুশমণ্ডির যুবতীকে নির্যাতনে অভিযুক্তদের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে দেহাবন্ধ। তাঁদের দাবি, যদি এক জন দোষ করেও থাকেন, তা হলেও কেন অন্যের বাড়ি পুড়বে? পুলিশ কেন দাঁড়িয়ে থেকে তাণ্ডব দেখবে? একাংশ বাসিন্দার ক্ষোভ, বাড়ি ভাঙচূর ও অগ্নিসংযোগে এক ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে বাড়িগুলো। এলাকার চারটি পরিবারের অন্তত ২০ জন বাসিন্দা নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নীচে চলে এসেছেন। পুলিশের সামনে ওই তাণ্ডব চলায় প্রাণ বাঁচাতে ইতিমধ্যে আতঙ্কে গ্রাম ছেড়েছেন অনেকে। সন্ধ্যা পর্যন্ত নিঃস্ব ওই পরিবারগুলির সাহায্যের জন্য প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীরা।

ওই ঘটনায় তৃণমূলের তরফেও অস্বস্তি বাড়িয়ে দিল। তা গোপন না করে এ দিন বিকেলে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘এ দিনের অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সমর্থন করা যায় না। এটা খুব বাজে উদাহরণ হল। এরপর তো কিছু হলেই আইন হাতে নিয়ে হামলা চালান হবে।’’ তাঁর দাবি, অথচ নির্যাতিতার পাশে প্রশাসন দাঁড়িয়ে সব ব্যবস্থা নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এত করে বলার পরেও কেন ওই বিক্ষোভ ঠেকান যায়নি তা খোঁজ নেেবন বলে বিপ্লববাবু জানান। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে সকলের সামনে দাঁড়িয়ে নির্যাতিতার ভরনপোষণের জন্য ৪ লক্ষাধিক টাকা দিয়েছেন। তারপরেও কেন এমন ঘটনা হল, পুলিশ কেন আগাম ব্যবস্থা নেয়নি এ সব প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে দেখতে হবে বলে বিপ্লববাবু জানান।

তবে এই গ্রামে বহিরাগতদের আনাগোনা রুখতে প্রশাসন আগেই ব্যবস্থা নিয়েছিল। পুলিশ মোতায়েন করা ছিল গ্রামে। তারপরেও এই তাণ্ডব থামানো যায়নি।

এ দিন এলাকার বাসিন্দা সন্তোষ ঠাকুর বলেন, ‘‘যুবতীকে নির্যাতন কাণ্ডে জড়িত অভিযোগে গ্রামের কাঠমিস্ত্রি রামপ্রবেশ শর্মাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অথচ তাঁর আত্মীয়স্বজন সহ অন্য পরিবারগুলোর উপর হামলা চালানো হল। তাঁরা কী দোষ করেছেন? কেন তাঁদের বাড়ি ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে সমস্ত পুড়িয়ে দেওয়া হবে? কেন পুলিশ তা দাঁড়িয়ে থেকে দেখবে?’’

এ দিন দেহাবন্ধে বহু মানুষ ব্যাপক জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখাবেন, জেলা পুলিশের কাছে আগাম সেই খবর ছিল। স্থানীয় সূত্রে খবর, গ্রামে চড়াও হয়ে তাণ্ডব চালিয়ে দলটি চলে যাওয়ার পরে এএসপি, ডিএসপিরা ঢোকেন। সঙ্গে তিনটি অ্যাম্বুল্যান্সও ওই গ্রামে যায়। তবে ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলো কুশমণ্ডির দিকে না ফিরে ইটাহারের রাস্তা ধরে চলে যায়। অ্যাম্বুল্যান্সে আহতরা কেউ ছিলেন কি না, জানা যায়নি। এএসপপি(গ্রামীণ) ওয়াংজেন ভুটিয়া, এসডিপিও বিপুল বন্দ্যোপাধ্যায় এবং এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করলেও তাঁরা কেউ ধরেননি।

এ দিকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসাপালের সিসিইউ ইউনিটে ভর্তি নির্যাতিতার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, আরও সাত দিন তাঁকে ওই ইউনিটে রাখা হবে। নির্যাতিতার বাবা প্রয়াত হোপনা টুডুর নামে কোনও জমি রয়েছে কি না, স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ জানাতে পারেননি। তবে নির্যাতিতা যুবতীর দিদিমা কাতনি মুর্মুর নামে ৪-৫ বিঘা জমি থাকতে পারে বলে জানতে পেরে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে খোঁজখবর করা শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE