Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উত্তেজনার পরে বদলি পুলিশকর্তা

 আইনশৃঙ্খলা জনিত কোনও সমস্যা হলেই ধুন্ধুমার ঘটে রায়গঞ্জে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেওয়ার চেষ্টাও হয়। যা কি না শুক্রবার জাতীয় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর পরে ফের ঘটেছে। গত জুলাই মাসে আদিবাসীদের আন্দোলনের পরেও শহরে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।

ভাঙচুর: তাণ্ডবের সময় ট্রাকের কাচও ভাঙল জনতা। নিজস্ব চিত্র 

ভাঙচুর: তাণ্ডবের সময় ট্রাকের কাচও ভাঙল জনতা। নিজস্ব চিত্র 

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৫
Share: Save:

আইনশৃঙ্খলা জনিত কোনও সমস্যা হলেই ধুন্ধুমার ঘটে রায়গঞ্জে। পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর, আগুন দেওয়ার চেষ্টাও হয়। যা কি না শুক্রবার জাতীয় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় স্কুল ছাত্রের মৃত্যুর পরে ফের ঘটেছে। গত জুলাই মাসে আদিবাসীদের আন্দোলনের পরেও শহরে দ্রুত উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। ঘটনাচক্রে তার পরপরই দ্রুত জেলার পুলিশ সুপারকেই বদলি করে দেওয়া হয়। এ বারও শুক্রবার দুপুরে শহরে তাণ্ডবের পরে রায়গঞ্জ ট্র্যাফিক পুলিশের ওসি জামালুদ্দিন আহমেদকে ডালখোলা ট্র্যাফিক পুলিশের ওসির পদে বদলি করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় রায়গঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের নয়া ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চোপড়া থানার সাব ইন্সপেক্টর পিনাকী সরকারকে। ওই থানার এসআই রিদম সাহাকে করণদিঘিতে বদলি করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, বাসিন্দাদের ক্ষোভ সামাল দিতে রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ট্রাফিক পয়েন্টের পুরনো সমস্ত পুলিশকর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শুধু তাই নয়, উত্তর দিনাজপুরের জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ জানান, রায়গঞ্জে একটি ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। যার দায়িত্বে পাচ্ছেন ইসলামপুর থানার এসআই গোপাল সেনগুপ্ত।

কিন্তু কেন বারবার পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ নাকাল হচ্ছে, সেই প্রশ্নে উদ্বিগ্ন নেতা-কর্তাদের অনেকেই। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের একাংশের মনে হচ্ছে, এলাকায় নজরদারি ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজে গাফিলতির কারণেই যে আমজনতার মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে সেটা বুঝতে পারেননি স্থানীয় পুলিশকর্মীরা।

এ দিন রায়গঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান সন্দীপ বিশ্বাসের নেতৃত্বে তড়িঘড়ি ওই ছাত্রের মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার জেরে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় তিনঘণ্টা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে!

শোকাহত: মেনে নিতে পারছেন না খবর। প্রতীকের কাকিমা (বসে) ও দিদিকে (ডান দিকে) ঘিরে স্বজনেরা। নিজস্ব চিত্র

পুলিশ সুপার বলেন, ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও পুলিশের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ট্রাফিক পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। আমরা বিষয়টি জানা মাত্রই দেরিতে হলেও পরিস্থিতি আয়ত্বে আনতে সক্ষম হয়েছি। ’’

এর আগে গত বছরের ১৪ জুলাই দুই আদিবাসী নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার দাবিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশো আদিবাসী যথেচ্ছ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার খবরও জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আগাম জানা না থাকায় ওইদিনও পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খায় বলে মানছেন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসারদের একাংশ।

জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরাও ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে বাসিন্দাদের ক্ষোভের বিষয়টি জানতে ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণেই শুক্রবার শিলিগুড়ি মোড় এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রাকের ধাক্কায় দশম শ্রেণির ছাত্র প্রতীক চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর বাসিন্দাদের ক্ষোভ আছড়ে পড়ে পুলিশের উপরে। জেলা পুলিশের দাবি, ট্রাফিক পুলিশের উপর বাসিন্দাদের জমতে থাকা ক্ষোভের কথা জানা থাকলে জেলা পুলিশ আগেই অভিযুক্তদের সরিয়ে ব্যবস্থা নিতে পারত।

বস্তুত, ট্রাফিক পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই নানা অভিযোগ রয়েছে। কয়েক মাস আগে ট্রাফিক পুলিশের কর্মীদের বিরুদ্ধে তোলা আদায় ও তোলা দিতে অস্বীকার করায় মারধরের অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়কও অবরোধ করেছিলেন ট্রাকচালক ও বাসিন্দাদের একাংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Officer Transfer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE