Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

গাঁধীগিরি না দাদাগিরি, ধন্দে শহর

বালুরঘাটে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলাও রুজু হয়েছিল।

ফুল: দুয়ারে পুলিশ। রায়গঞ্জে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

ফুল: দুয়ারে পুলিশ। রায়গঞ্জে বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:০৭
Share: Save:

বালুরঘাটের পরে রায়গঞ্জ। ট্রাফিকের বেহাল দশা নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করায় দুই বাসিন্দার উপরে ‘চাপ’ তৈরি করল পুলিশ।

বালুরঘাটে ফেসবুকে আপত্তিকর মন্তব্য করায় অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলাও রুজু হয়েছিল। এই নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা গড়ায় হাইকোর্ট পর্যন্ত। এ বার ব্যান্ড বাজিয়ে রায়গঞ্জের দুই বাসিন্দার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাঁদের হতে গোলাপফুল-মিষ্টি, তুলে দিল পুলিশ। বুধবার ‘ভ্যালেনটাইন ডে’-তে পুলিশের ওই কাণ্ডে গোটা রায়গঞ্জে আলোড়ন। নাগরিকদের অনেকেরই মত, পুলিশ গোলাপ দিলেও আসলে কাঁটাই এখানে প্রকট।

বিশিষ্টদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ সামাজিকভাবে ওই পরিবারকে বিব্রত করেছে। বিজেপির উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি নির্মল দাম বলেছেন, ‘‘পুলিশ যা করেছে তাতে বাসিন্দাদের অনেকেরই হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়েছে।’’

জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তও স্তম্ভিত। তিনি বলেন, ‘‘কেউ ভুল করে থাকলে সে জন্য তাঁকে সামাজিকভাবে অসম্মান করাটা আরও বড় ভুল।’’ এসইউসির জেলা সম্পাদক দুলাল রাজবংশীর দাবি, ‘‘ফেসবুকে মত প্রকাশ করতে যাতে ভয় পান সবাই, সে জন্য এ দিন পুলিশ ‘গাঁধীগিরি’ করল।’’

গত শুক্রবার সকালে শিলিগুড়ি মোড়ে এক ছাত্রের মৃত্যুর পরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে এলাকা। ওই দিন সন্ধ্যায় একই জায়গায় ফের দুর্ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, উকিলপাড়ার ব্যবসায়ী দেবপ্রিয় চক্রবর্তী ও দেবীনগরের বাসিন্দা শিক্ষক শঙ্কর রায় তাঁদের ফেসবুকে পুলিশের সম্পর্কে ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য লেখেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, মামলা রুজুর প্রস্তুতি নিলেও গত দুর্গাপুজোয় বালুরঘাটের ঘটনার কথা মাথায় রেখে পিছিয়ে যায়। কারণ, বালুরঘাটের মামলা হাইকোর্টে গড়ালে সেখানে পুলিশ সমালোচিত হয়। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়েই পুলিশের একাংশ ফুল-মিষ্টি পাঠানোর প্রস্তাব দেন।

এ দিন ফুল হাতে পুলিশ দেখে দেবপ্রিয়বাবু হকচকিয়ে যান। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনায় ছাত্রের মৃত্যুর পর নিজেকে ঠিক রাখতে পারিনি। তাই লিখে ফেলেছি।’’ ঘটনাচক্রে শঙ্করবাবু বাড়িতে ছিলেন না। তাঁর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী রঘুনাথবাবুর হাতে ফুল-মিষ্টি দেন তাঁরই একসময়ের সতীর্থরা। রঘুনাথবাবু বলেন, ‘‘ওকে ক্ষমা করে দিন।’’

এলাকাবাসীদের অনেকেই বলেন, পুলিশ ফেসবুক দেখে বাড়ি খুঁজে ফুল-মিষ্টি দিতে যে তৎপরতা দেখিয়েছে, দুর্ঘটনা রুখতে ততটা সক্রিয়তা দেখালে ওই ছাত্রকে অকালে মরতে হত না। উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহের যুক্তি, ‘‘ত্রুটি-বিচ্যূতি হলে আমাকে যে কেউ জানাতে পারেন। তা না করে কটূ ভাষায় যা লিখেছেন তাতে হিংসা সৃষ্টির উসকানি রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Facebook Police Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE