বিক্রি: কোচবিহারের বাজারে বোরোলি মাছ। নিজস্ব চিত্র
একসময় মহারানি ইন্দিরা দেবী মুম্বই বা কলকাতায় থাকলে বিমানে তাঁর জন্য তোর্সার বোরোলি পাঠানো হত। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু উত্তরবঙ্গে এলেও তাঁর মেনুতে থাকতে রকমারি বোরোলির মেনু। কিছু দিন আগে কোচবিহার সার্কিট হাউসে বোরোলি খেয়ে দারুণ প্রশংসা করেন খোদ মার্কিন কনসাল জেনারেল ক্রেগ হলও। তোর্সার সেই রুপোলি সম্পদ বোরোলির উৎপাদনই ক্রমশ কমছে কোচবিহারে। সারাবছর ওই নদীতে মাছ ধরার সঙ্গে যুক্তরা তেমনই দাবি করছেন।
মৎস্যজীবীদের একাংশ জানিয়েছেন, কোচবিহারের কালীঘাট, ঘুঘুমারি লাগোয়া এলাকায় শতাধিক পরিবারের রোজগারের ভরসা তোর্সাই। বোরোলি শিকারে সন্ধ্যা হলেই জাল ফেলেন তাঁদের অনেকেই। এক দশক আগে দিনে ওই সব এলাকায় মাঝেমধ্যেই এক কুইন্টাল পর্যন্ত বোরোলি মাছ জালে ধরা পড়ত। তা অনেকটাই কমে গিয়েছে। এখন সাকুল্যে ২০-৩০ কেজি বোরোলি পাওয়া যায়। তাও অনেকটা অনিয়মিত। সুকুমার বর্মন বলেন, “তোর্সায় এখন আর আগের মত বোরোলি মেলে না।” পাশে দাঁড়ানো কয়েকজনও প্রায় এক সুরে জানিয়ে দিলেন, বোরোলির উৎপাদন কমায় রোজগারও কমেছে।
মৎস্যজীবীদের ওই দাবি যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, তা মানছেন জেলা মৎস্য দফতরের কর্তারাও। এই পরিস্থিতিতে বোরোলি রক্ষায় উৎসব আয়োজনের সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, তোর্সায় মশারি জালের ব্যবহার, নদীদূষণ, লুকিয়ে চুরিয়ে কীটনাশক ব্যবহারের মত নানা কারণে বোরোলি বিপন্ন হয়ে পড়ছে। পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাস গ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন,“দূষণ, কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করার সঙ্গে ওই ব্যাপারে গবেষণামূলক কাজ দরকার।”
মৎস্য দফতর অবশ্য জানিয়েছে, বোরোলি রক্ষার সঙ্গে তার উৎপাদনও বাড়াতে পুকুরে ওই মাছ চাষ শুরু করা হয়েছে। জেলায় পুকুরে পরীক্ষামূলক বোরোলি চাষ সফলও হয়েছে। এ বার অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ সাগরদিঘিতেও বোরোলি চাষের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তোর্সার বোরোলি বাঁচাতে কয়েকবছর থেকে উৎসব হচ্ছে। ডিসেম্বরে বোরোলি উৎসবের তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গিয়েছে। উৎসবে জেলে, মৎস্যজীবীদের নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা থাকবে। বাসিন্দাদের সচেতনতা বাড়াতেও প্রচার হচ্ছে। কোচবিহারের জেলা মৎস্য আধিকারিক অলোকনাথ প্রহরাজ বলেন, “তোর্সায় মশারি জাল ব্যবহার অনেকটা কমেছে। কিছুদিন আগে একটি মশারি জাল বাজেয়াপ্ত করে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ওই প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ করতে চাইছি।”
প্রবীণদের স্মৃতিতে টাটকা বোরোলির সুদিনের কথা। রাজ পরিবারের দুয়ারবক্সী অমিয় দেববক্সী বলেন, “আগে প্রচুর বোরোলি পাওয়া যেত। মহারানি ইন্দিরা দেবী বাইরে থাকলে বিমানে তা পাঠানো হত।” রুপোলি বোরোলির সেই সোনালি দিন ফেরার আশায় মৎস্যপ্রেমীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy