Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
Dengue

রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে বিভ্রান্তি

অসমের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সাহা কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া। কিছুদিন আগে রায়গঞ্জের বীরনগর এলাকায় এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন।

আক্রান্ত: রায়গঞ্জ হাসপাতালে জ্বরের রোগী। নিজস্ব চিত্র

আক্রান্ত: রায়গঞ্জ হাসপাতালে জ্বরের রোগী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৪৮
Share: Save:

উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার দুর্গাপুর কমলাই এলাকার বাসিন্দা প্রহ্লাদ দেবনাথ গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে আক্রান্ত। স্থানীয় চিকিত্সকের পরামর্শে গত শুক্রবার তাঁকে রায়গঞ্জের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সোমবার হাসপাতালে মশারির নিচে শুয়ে প্রহ্লাদবাবু বলেন, ‘‘ভর্তি হওয়ার পর থেকে প্রতিদিনই নার্সরা নিয়মিত শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে পাঠাচ্ছেন। চিকিত্সকরা বলছেন আমার ডেঙ্গি হয়েছে। কিন্তু রক্তের কোনও রিপোর্ট আমার পরিবারকে দেখানো হয়নি।’’

অসমের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সাহা কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পড়ুয়া। কিছুদিন আগে রায়গঞ্জের বীরনগর এলাকায় এক আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে আসেন তিনি। বৃহস্পতিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন। শহরের এক নামি চিকিত্সকের পরামর্শে রবিবার একটি বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে রক্ত পরীক্ষা করানো হয়। তাতে এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়ে। এ দিনই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করান আত্মীয়রা। প্রসেনজিতের কথায়, ‘‘হাসপাতালের তরফে রক্ত নেওয়া হলেও রিপোর্ট মিলছে না। স্যালাইন ও কিছু ওষুধ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারিভাবে আমার ডেঙ্গি হয়েছে কী না, সেই বিষয়ে চিকিত্সক ও নার্সরা মুখে কুলুপ এঁটেছেন।’’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২০ জনের বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ, বেসরকারি বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীর রক্তে এনএস-১ পজিটিভ ধরা পড়েছে। কিন্তু যেহেতু জেলায় কোনও বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ম্যাক অ্যালাইজা পরীক্ষার পরিকাঠামো নেই, সেই কারণে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় চিকিত্সকরা।

বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সহ সভাপতি পবিত্র চন্দ ও নিমাই কবিরাজের দাবি, তাঁরা বিশ্বস্ত সূত্রে খবর নিয়ে জেনেছেন হাসপাতালে জ্বরে আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগীর রক্তে সরকারিভাবেও ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়েছে। তাঁরা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বলে দিয়েছেন রাজ্যে ডেঙ্গি নেই, এই পরিস্থিতিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টে বা সরকারিভাবে ডেঙ্গি ধামাচাপা দেবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’’

ইটাহারের রহিমপুর এলাকার বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর সইদুর রহমান গত মঙ্গলবার থেকে জ্বরে ভুগছেন। বৃহস্পতিবার তাঁকে ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান পরিবারের লোকেরা। চিকিত্সকরা রবিবার তাঁকে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে রেফার করে দিয়েছেন। সইদুরের দাবি, স্থানীয় চিকিত্সকদের পরামর্শে গত বুধবার ইটাহারের একটি বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে তাঁর রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। তিনি বলেন, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে রক্তপরীক্ষা করলেও রিপোর্ট দেখাচ্ছেন না। আমার ডেঙ্গি হয়েছে কি না, চিকিত্সক ও নার্সরা সেই প্রশ্নও এড়িয়ে যাচ্ছেন।’’

হাসপাতাল সুপার গৌতম মণ্ডলের দাবি, ‘‘রোগী ও তাঁদের পরিবারের লোকেদের হাতে রক্তপরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়ার নিয়ম নেই। তবে তাঁদের কী হয়েছে, তা চিকিত্সকেরা জানিয়ে দেন। তবে এই মুহূর্তে হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত কোনও রোগী নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue ডেঙ্গি রায়গঞ্জ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE