Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ঘুম কীসের,  পিঠে ঘুষি ডাক্তারকে

চিকিত্সক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে মৃতের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের একটি দরজা ও তিনটি জানালা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৯
Share: Save:

চিকিত্সায় গাফিলতি ও অবহেলার জেরে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিত্সক ও নার্সদের শাস্তির দাবিতে শুক্রবার সকালে মৃতের পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগের একটি দরজা ও তিনটি জানালা ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। কর্তব্যরত চিকিত্সক তন্ময় পালকে তাঁরা ধাক্কাধাক্কি ও মারধর করেন বলে অভিযোগ। তাঁর পিঠে হাতে ঘুষি মারা হয়। পুলিশ গিয়ে তন্ময়বাবুকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুরের সময় রোগীদের খালি শয্যা ও বিভিন্ন আসবাবপত্রও উল্টে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। চার ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে অবশ্য তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। গোলমালের সময় তন্ময়বাবুর মোবাইল ফোন উধাও হয়ে যায় বলে অভিযোগ। তন্ময়বাবু অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি!

ইটাহার থানার ওসি নিমশেরিং ভুটিয়ার দাবি, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধার দাবি, ওই ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘তবুও স্বাস্থ্য দফতর গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। চিকিত্সক বা নার্সদের কোনও গাফিলতি থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট ও চিকিত্সককে মারধরের অভিযোগ দায়ের করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

বাড়িতে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার রাত ২টা নাগাদ পেশায় চাষি বানিজুদ্দিন আহমেদ (৫৩) নামে ওই ব্যক্তিকে ইটাহার ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান পরিবারের লোকেরা। বানিজুদ্দিনের বাড়ি ইটাহারের বাস্তুফি এলাকায়! বানিজুদ্দিনের ছেলে পেশায় গাড়ি চালক সাহাবুল হোসেনের অভিযোগ, তাঁর বাবাকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া পর বিনা চিকিত্সায় প্রায় দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হয়। পরিবারের লোকেরা একাধিকবার নার্সদের চিকিত্সককে ডাকার অনুরোধ করলেও কোনও লাভ হয়নি। সাহাবুলের দাবি, ‘‘কর্তব্যরত চিকিত্সক জরুরি বিভাগের পাশের একটি ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন। দেড় ঘণ্টা বিনা চিকিত্সায় পড়ে থেকে বাবা ঝিমিয়ে পড়েন। সেই সময় বাবাকে বাঁচাতে আমার বোন তাহেরা খাতুন চিত্কার শুরু করলে ওই চিকিত্সক এসে দূর থেকে বাবাকে দেখে নার্সদের ইঞ্জেকশন দেওয়ার নির্দেশ দেন! একজন নার্স বাবাকে সেই ইঞ্জেকশন দিতেই তিনি মারা যান।’’ তিনি বলেন, ‘‘ডাক্তার ঘুমোচ্ছিলেন বলেই আমার বাবা ঠিক সময়ে চিকিৎসা পাননি। যখন তাঁর নজর পড়েছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এত ঘুম কীসের?’’

তাঁর দাবি, বেগতিক বুঝে মারা যাওয়ার আগের মুহূর্তে তাঁর বাবাকে রেফার করে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘চিকিত্সায় গাফিলতি ও অবহেলার জেরেই বাবার মৃত্যু হয়েছে। গাফিলতি ঢাকতে এখন আমাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভাঙচুর ও চিকিত্সককে মারধরের মিথ্যা অভিযোগ তুলছে স্বাস্থ্য দফতর।’’ তিনি জানিয়েছেন, পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করব। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালের মর্গে এ দিন মৃতদেহটি ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে আসলেই ওই ব্যক্তির মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Scuffle Medical Centre Doctors Nurses Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE