ব্যতিক্রম: পাহাড়ে বন্ধ চললেও শুক্রবার অন্য ছবি সেবকে। খুলেছে দোকানপাট। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
অনেকেরই আশা ছিল গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনে গঠিত সমন্বয় কমিটির বৈঠকের পরে সত্তর দিন ধরে চলা বন্ধ প্রত্যাহার হবে। সমন্বয় কমিটিতে বন্ধ প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনাও হয়। তবে আগামী রবিবার ফের বৈঠকে বসবে সমন্বয় কমিটি। তবে বন্ধ না উঠলেও পাহাড়ের বিভিন্ন জনপদে দোকান-বাজার খুলতে শুরু করেছে। শুক্রবার তেমন ছবিই দেখা গেল সেবকে।
করোনেশন সেতুতে গাড়ির লাইন, ফুটপাতে সারি দিয়ে ভুট্টা নিয়ে বসে তরুণী-মহিলারা, রেস্তোরাঁ থেকে ভেসে আসছে মোমো-চাউমিনের সুবাস। পাকদণ্ডি রাস্তার পাশে কার্নিশে বসে বাঁদরের দল। সেই চেনা স্বাভাবিক ছন্দে সেবক।
পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে রাজ্য সরকার আগামী ২৯ অগস্ট নবান্নে বৈঠক ডেকেছে। সেই বৈঠকে যাওয়া নিয়ে মোর্চা এবং গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে গঠিত সমন্বয় কমিটির বৈঠক ছিল। দার্জিলিং-কালিম্পঙ-সুখিয়াপোখরি পরপর বিস্ফোরণের পরে মোর্চার উপরে চাপ আরও বেড়ে যায়। খোদ বিমল গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে নাশকতা বিরোধী কেন্দ্রীয় আইন ইউএপিএতে মামলা হয়। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের ডাকা বৈঠক নিয়ে মোর্চা এবং সমন্বয় কমিটির নেতারা উভয়েই সুর নরম করেছিল। তাতেই অনেকে আশা করেছিলেন আজ সমন্বয় কমিটির বৈঠকে বনধ তোলার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
গত তিন দিন ধরেই আড়াল আবডালে বেচা কেনা চলছিল এই পাহাড়ি জনপদে। কিন্তু শুক্রবার তাতে কোনও রাখঢাকই ছিল না। পলিথিন টাঙিয়ে বিক্রি হয়েছে লঙ্কা-স্কোয়াশ-আলু। খুলে গিয়েছে মুদির দোকান, পানের দোকান। নেপালি গানের সুরে রেস্তোরাঁয় বিক্রি চলছে জমিয়ে। কোনও আড়াল আবডালের বালাই নেই।
সেবকে বন্ধ নেই?
প্রশ্ন শুনে বিরক্ত সেবক কালী মন্দির লাগোয়া পানের দোকানে বসা যুবতী বললেন, ‘‘খেতে না পেয়ে মরব নাকি! ঘরে চাল-আটা সব ফুরিয়ে গিয়েছিল। খালি পেটে আন্দোলনও করতে পারব না। সব ব্যবসায়ীরা মিলে ঠিক করেছি যাই হোক না কেন, দোকান আর বন্ধ করব না।’’ ব্যবসায়ীরা একজোট হওয়ায় পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে বন্ধ সমর্থনকারীরা। দোকানের সামনে থেকে দলের পতাকাও সরিয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
গত কয়েক দিন ধরে ইতিউতি দোকান খুলতে শুরু করেছিল। সন্ধ্যের পর মুদি দোকানের পাল্লা ফাঁক করে মালপত্র বিক্রি হয়েছে। তবে শুক্রবার সকাল থেকে কোনও রাখঢাক ছিল না সেবকে। সকাল থেকে রাস্তার পাশে ভুট্টার পসরা নিয়ে বসে পড়ে মেয়ের দল। খুলেছে আনাজের বাজারও। শিলিগুড়ি থেকে বিক্রির জন্য আনাজও নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ীরা। সেবক বাজারের একটি মুদি দোকানের মালিক প্রদীপ প্রধান বলেন, ‘‘দোকানের উপর ভরসা করেই আমার পুরো পরিবার চলে। কী ভাবে সংসার চলবে সে প্রশ্ন নেতাদেরও করেছি, তারা কোনও উত্তর দিতে পারেননি।’’
এ দিন সকালে অবশ্য স্থানীয় একদল মোর্চা কর্মী দোকান বন্ধ করার ‘অনুরোধ’ নিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে গিয়েছিল। একটি রেস্তোরাঁর মালিক প্রবীণ বাসিন্দা দীপক গুরুঙ্গ (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকজন দোকান বন্ধ করার কথা বলতে এসেছিল। আমি তো একজনের কাছে আমার মেয়ের পড়াশোনার খরচ চাইলাম। সকলে সুরসুর করে চলে গেল।’’ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘পাহাড়ের বাসিন্দারা অনেক ত্যাগ কষ্ট স্বীকার করেও সর্বত্র স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে বন্ধ পালন করছেন। কোথাও কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে কিছু বলার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy