Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পেটের দায়ে সাপ খেলা

সাপ-বেজি গুটিয়ে, ওষুধ বেচার গুটি কয়েক কয়েন পকেটে পুরে ফের অপেক্ষা। সারা দিনে মেরেকেটে দুশো টাকা রোজগার।

আকর্ষণ: বেআইনি এবং বিপজ্জনক সাপ খেলা দেখানোই এখনও রোজগারের ভরসা বেদেপাড়ার বাসিন্দাদের। চাঁচলের সামসি স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

আকর্ষণ: বেআইনি এবং বিপজ্জনক সাপ খেলা দেখানোই এখনও রোজগারের ভরসা বেদেপাড়ার বাসিন্দাদের। চাঁচলের সামসি স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৬
Share: Save:

ফোঁস ফোঁস করছে এক হাতে ধরা কোবরা। অন্য হাতে বিণ। সামনে খুঁটিতে বাঁধা বেজি। স্টেশনের বাইরে সাপুড়েকে ঘিরে তখন উপচে পড়েছেন ট্রেন যাত্রীরা। খেলার ফাঁকে মাথা ধরা থেকে চুলকানির ওষুধও ফেরি করছেন। দাম ১০ টাকা। বিফলে মূল্য ফেরত। কিন্তু বিক্রিবাটা তেমন নেই। ওষুধ কেনার চাইতে সাপ-বেজির খেলা দেখতেই বেশি আগ্রহী দর্শকরা। ট্রেন আসতেই ভোকাট্টা তাঁরা।

সাপ-বেজি গুটিয়ে, ওষুধ বেচার গুটি কয়েক কয়েন পকেটে পুরে ফের অপেক্ষা। সারা দিনে মেরেকেটে দুশো টাকা রোজগার। সাপের খেলা দেখাতে গিয়ে প্রতিবেশী অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে। তার পরেও জীবন বাজি রেখে, বেআইনি জেনেও সাপখেলাকেই আঁকড়ে ধরে রয়েছেন মালদহের চাঁচলের কান্ডারণ বেদে পাড়ার সাপুড়েরা। প্রশাসন, বন দফতরের তরফে বেদেপাড়ার হাল ফেরাতে একাধিক বিকল্প ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ওই পেশাই ভরসা বলে আক্ষেপ বেদেপাড়ার।

মালদহের ডিএফও কৌশিক সরকারের কথায়, ‘‘জীবন্ত সাপ নিয়ে খেলা দণ্ডনীয় অপরাধ। জেলার বিভিন্ন এলাকায় সাপ নিয়ে ওরা খেলা দেখায়। ধরা পড়লে ছ’মাসের জেল হতে পারে।’’

বেআইনি জেনেও কেন সাপ নিয়ে খেলা? সামসি রেলস্টেশনে ভিড় হালকা হতেই ইব্রাহিম বেদের কথায়, ‘‘আমরা তো চুরি করছি না। সাপ মারছিও না। সাপকে খাইয়ে পরিয়ে যত্নে রাখি। আইন মানলে যে আমাদের হাঁড়ি চড়ে না।’’

সামসি কলেজের পাশে কান্ডারনে খাস জমিতে বসবাস বেদেদের। প্রত্যেকেই ভূমিহীন, দুঃস্থ। একযুগ আগে বেদেপাড়ার হাল ফেরাতে তাঁদের বিকল্প জীবিকার কথা ভাবা হয়েছিল। সেন্ট্রাল জু অথরিটি অনুমোদিত রাজ্যের একমাত্র সর্পোদ্যান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সেখানেই। ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেছিল বেদেপাড়া। দর্শকদের টিকিট বিক্রির টাকা থেকে আয়ের পাশাপাশি সাপের বিষ বিক্রি করে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা হবে কথা ছিল। কিন্তু তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। বন্যপ্রাণ আইনে সাপ নিয়ে কিছু করা যাবে না বলে সেন্ট্রাল জু অথরিটি ওই প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে অনেকেই ফিরেছেন পুরনো পেশায়।

চাঁচলের মহকুমাশাসক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওখানে শিশু শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ওদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যাতে উন্নতি হয় সেই চেষ্টা চলছে।’’

মালদহ জেলা সর্পোদ্যান সংরক্ষণ সমবায় সমিতির সম্পাদক করিম বেদে বলেন, ‘‘সর্পোদ্যান হলে বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা হতো। তা হলে আইনও বাঁচত, আমরাও বাঁচতাম। সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হল কই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Snake charmers Snake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE