Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

গ্রেনেডের শব্দে অসুস্থ ছাত্রীরা

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভয় পেয়ে সবাই এক সঙ্গে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রী চোট পায়৷ একজনের মাথা ফাটে৷ এক ছাত্রীর পায়েও আঘাত পায়৷ সেই সঙ্গে গ্রেনেড ফাটানোর পরে তার কালো ধোঁয়ায় অনেক ছাত্রীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়৷

ভয়: বিকট শব্দে কানে ব্যথা। হাসপাতালে স্কুল ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র

ভয়: বিকট শব্দে কানে ব্যথা। হাসপাতালে স্কুল ছাত্রী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

প্রায় সপ্তাহখানেক আগে হলদিবাড়ি টাউন ক্লাবের মাঠে একটি গ্রেনেড পাওয়া যায়। বারবারই বলা হয়েছিল, গ্রেনে়ডটি নিষ্ক্রিয় করা হোক, লোকালয় থেকে দূরে নিয়ে গিয়ে। ৭ কিলোমিটার দূরে নদী। তার পাশেই যাওয়া যেত। কিন্তু তা না করে, হলদিবাড়ি থানার পিছনের মাঠেই সোমবার দুপুর ১১টা নাগাদ সেই গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করেন সেনাবাহিনীর বিশেষজ্ঞেরা। বিকট শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। থানা থেকে হলদিবাড়ি গার্লস হাইস্কুল মাত্র শ’খানেক মিচার দূরে। আচমকা প্রচণ্ড আওয়াজে অসুস্থ হয়ে পড়ে শতাধিক ছাত্রী। নবম শ্রেণির পরীক্ষা ভণ্ডুল হয়ে যায়।

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভয় পেয়ে সবাই এক সঙ্গে নামতে গিয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রী চোট পায়৷ একজনের মাথা ফাটে৷ এক ছাত্রীর পায়েও আঘাত পায়৷ সেই সঙ্গে গ্রেনেড ফাটানোর পরে তার কালো ধোঁয়ায় অনেক ছাত্রীর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়৷ অনেকে আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা ঈষিতা দেবসিংহ জানান, শিক্ষিকারাও চমকে উঠেছিলেন। কেউ ভেবেছিলেন ভূমিকম্প। কেউ ভেবেছিলেন বোম পড়ছে। তাতেই সবাই তাড়াতাড়ি নামতে চায়।

শেষ পর্যন্ত প্রাথমিক চিকিৎসার পর কিছু ছাত্রীকে ছেড়ে দিলেও হলদিবাড়ি হাসপাতালে পর্যবেক্ষণের জন্য ভর্তি করা হয় ৪৬ জনকে। তার মধ্যে বিকেলের মধ্যে ৪৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়। তার মধ্যে একজন আবার ভর্তি হয় এবং তাকে জলপাইগুড়িতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া ১১ জনকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। কারও বুকে ব্যথা হচ্ছিল এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল। হলদিবাড়ি হাসপাতালের চিকিৎসক বিপুলচন্দ্র রায় এবং অসীম রায় বলেন, “মানসিক আতঙ্কে ছাত্রীদের এই অবস্থা হয়েছে।” এই ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয় হলদিবাড়িতে। অভিভাবক এবং বাসিন্দারা থানায় গিয়ে বিক্ষোভ দেখান।

প্রশ্ন উঠেছে, কেন লোকালয়ের মধ্যেই গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করা হল?

ঈশিতাদেবীর কথায়, “স্কুল যেহেতু থানার পাশেই, তাই আমাদের আগাম জানানো উচিত ছিল।” স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি গোপাল রায় বলেন, “মাইকেও তো সচেতন করা যেত। পুলিশ কি‌ছুই করেনি।”

শুধু তাই নয়, গত বুধবার টাউন ক্লাবের মাঠে গ্রেনেডটি পাওয়ার পরে তা নিয়ে এসে থানার পিছনে একটি মাঠের মধ্যে বালির বস্তা দিয়ে ঘিরে উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়। সেনাবাহিনীকে খবর দেওয়া হয়। সোমবার সেনাবাহিনীর লোকজন আসে। হলদিবাড়ি থানার পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয় যে, গ্রেনেডটি নিয়ে গিয়ে তিস্তা নদীর চরে নিষ্ক্রিয় করা হোক। কিন্তু সুকনা থেকে আসা সেনাবাহিনীর বম্ব ডিসপোজাল স্কোয়াড জানায়, জনবহূল এলাকার মধ্যে দিয়ে গ্রেনেডটি নদীর চর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া বিপজ্জনক হয়ে যাবে। তাঁরা তাই থানার পিছনের ফাঁকা জায়গাটিই বেছে নেন। কিন্তু এত শব্দ হবে, সেটা সম্ভবত কেউই আঁচ করতে পারেননি।

উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষার ক্লাসঘরে দায়িত্বে ছিলেন শিক্ষিকা মৈত্রেয়ী গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শব্দে বাড়িটাই যেন কেঁপে উঠল।’’ নবম শ্রেণীর ছাত্রী পুজা পাণ্ডে বলে, “পরীক্ষা চলছিল। আচমকা আওয়াজে মনে হয়েছিল স্কুলেই মনে হয় বোম পড়েছে। তাড়তাড়ি বার হতে গিয়ে বারান্দায় পড়ে যাই। তারপর আর কিছু মনে নেই।”

এই ঘটনায় হলদিবাড়িতে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বাসিন্দারা এসে থানায় বিক্ষোভ দেখান। হলদিবাড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান শঙ্কর দাস বলেন, “কাউকে কিছু না জানিয়ে এ ভাবে গ্রেনেডটি নিস্ক্রিয় করা উচিত হয়নি।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার আনুপ জয়সোয়াল বলেন, “বোমা ফাটানোর বিষয়টি সেনাবাহিনীর এক্তিয়ারে ছিল। এ বিষয়ে আমাদের কিছু করার ছিলনা। লোকজনকে সতর্ক থাকতে বললে তারা ভিড় করত। তবে এত আওয়াজ হবে তা আমরা ভাবতে পারিনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE