Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রথম মঞ্চে উঠেই ‘সেলিব্রিটি’ ওরা

‘কন্যাশ্রী’কে থিম করে একটি নাচ পরিবেশন করে তারা। পরে কোচবিহার ১ ব্লক ছাত্র ও যুব উৎসবেও ডাকা পেয়ে ওই নাচ পরিবেশন করে তারা।

মঞ্চে: ঘুঘুমারি স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

মঞ্চে: ঘুঘুমারি স্কুলের পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৪
Share: Save:

কেউ কখনও নাচ শেখেনি। গানও না। সেই সুযোগ বা সামর্থ্য কোনওটাই ওদের বেশির ভাগের নেই। দিন শুরু আর শেষে মা-বাবার সঙ্গেই হাত লাগাতে হয় সংসারের কাজে। সেই সুলতানা, রুনা, রূপশ্রী, মনীষারা স্কুলের শিক্ষিকাদের চেষ্টায় ‘স্টেজ পারফর্ম্যান্স’ করে রীতিমতো ‘সেলিব্রিটি’ হয়ে উঠল। কেউ বাড়িতে গিয়ে ‘সাধুবাদ’ জানিয়ে গিয়েছেন। রাস্তায় দেখলেও অনেকে কুর্নিশ জানাতে ভুলছেন না। ওই ছাত্রীরা কোচবিহারের ঘুঘুমারি হাইস্কুলের। স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের মঞ্চে প্রথম অনুষ্ঠান করে ওরা। ‘কন্যাশ্রী’কে থিম করে একটি নাচ পরিবেশন করে তারা। পরে কোচবিহার ১ ব্লক ছাত্র ও যুব উৎসবেও ডাকা পেয়ে ওই নাচ পরিবেশন করে তারা।

দশম শ্রেণির ছাত্রী রুনা খাতুনের কথায়, “কোনও দিন নাচের কথা মাথায় আসেনি। আর মঞ্চে ওঠা তো অনেক দূরের কথা। ম্যাডাম বলার পরে সাহস হল। মঞ্চে উঠলাম। নাচ করলাম। হাজার হাজার লোক দেখে প্রথমে খুবই বুক দুরুদুরু করছিল। এখন ততটাই ভাল লাগছে।” দশম শ্রেণিরই ছাত্রী রূপশ্রী বর্মন বলে, “মা এসেছিলেন। বাবা কাজে ছিলেন। গ্রাম থেকে বহু লোক দেখতে এসেছিলেন। সবাই খুব খুশি হয়েছে। আমিও খুব খুশি। আবারও কবে মঞ্চে উঠব সেই অপেক্ষায় আছি।” ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পার্থপ্রতিম সাহা পুরো বিষয়টি নিয়েই গর্ববোধ করেন। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ওরা এত ভাল অনুষ্ঠান করেছে আমি নিজেই অভিভূত। বিশ্বাস করি প্রত্যেকেই ওরা জীবনে সফল হবে।”

আসলে বিষয়টা শুরু হয়েছে স্কুলের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব ঘিরে। তার আগেও মাঝে মধ্যে ছাত্রীদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠানের প্রশিক্ষণ শিক্ষিকারা দিতেন। এ বারে স্কুলের সহ শিক্ষিকা দেবপ্রিয়া সরকার, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও নতুন কিছু করার কথা মাথায় আনেন। পাশেই প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। দেবপ্রিয়াদেবী জানান, ওই স্কুলের শিক্ষিকা চিত্রলেখা পাল উদ্যোগী ছিলেন। প্রাথমিক এবং হাই স্কুলের ছাত্রীদের নিয়ে তিরিশ জনের দল তৈরি করে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন তাঁরা। তিন মাস ধরে ওই প্রশিক্ষণ চলে। সেখানেই কন্যাশ্রীর গানের বাইরে, ‘কুমোর পাড়ার গরুর গাড়ি’, ‘লীলাবালি লীলাবালি’, ‘বাজল ছুটির ঘণ্টা’—এ রকম আটটি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে তারা। আবার অনেকে আবৃত্তি, নৃত্যনাট্যতেও যোগ দেয়।

সহ শিক্ষিকা প্রতিমাদেবী বলেন, “আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা বেশির ভাগই গরিব পরিবারের। তাদের নিয়ে এমন কাজ করে আমাদেরও খুব ভাল লেগেছে। আগামী দিনেও ছাত্রছাত্রীরা যাতে আরও ভাল কিছু করে সে চেষ্টা করব।” ওই এলাকার বাসিন্দা দেবেশ দাস, রতন দে, আলমগির হোসেনরা বলেন, “সত্যি ওই ছেলেমেয়েরা আমাদের গ্রামের গর্ব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stage Performance Celebrity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE