Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

মোর্চা ভেঙে ডুয়ার্সে চাঙ্গা তৃণমূল

গত লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ভোট ৬ শতাংশ বেড়ে ২৭ শতাংশে পৌঁছে যায়। গত বিধানসভায় মাদারিহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী জিতে যান।

অভিবাদন: উত্তরবঙ্গ সফরের শেষে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা ফেরার পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

অভিবাদন: উত্তরবঙ্গ সফরের শেষে শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা ফেরার পথে বাগডোগরা বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কিশোর সাহা
জয়গাঁ (আলিপুরদুয়ার) শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৭ ০২:০১
Share: Save:

পাহাড়ে আপাতত কোনও দলীয় কর্মসূচি নিচ্ছে না তৃণমূল কংগ্রেস। তবে ডুয়ার্সের নেপালি অধ্যুষিত এলাকায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে যে এতটুকুও জায়গা ছাড়া হবে না তা বোঝাতে অরূপ বিশ্বাসকে আসরে নামালেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে ভুটান সীমান্তের জয়গাঁয় দলীয় সভায় মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির ৪ সদস্য সহ ৪০ জন নেতা কর্মীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন অরূপবাবু। ডুয়ার্সের তৃণমূল নেতারা অবশ্য দাবি করেন, মোর্চা নয়, ডুয়ার্সে তাঁদের লক্ষ্য বিজেপি। তাই ‘বিক্ষুব্ধ এবং হতাশাগ্রস্ত’ মোর্চা নেতাদের নিজেদের দিকে টেনে রাখতে ঝাঁপিয়েছেন তাঁরা।

গত লোকসভা ভোটে আলিপুরদুয়ারে বিজেপির ভোট ৬ শতাংশ বেড়ে ২৭ শতাংশে পৌঁছে যায়। গত বিধানসভায় মাদারিহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী জিতে যান। বিধানসভা ভোটের প্রচারে ডুয়ার্সে এসেছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদীও। পঞ্চায়েত ভোটেও যে বিজেপি ডুয়ার্সে ‘ধাক্কা’ দেওয়ার ঘুঁটি সাজাছে সে খবর ছিল তৃণমূল নেতাদের কাছে। তাই আগেভাগেই ‘আক্রমণে’র পথে হাঁটল তৃণমূল নেতৃত্ব। অরূপবাবু বলেন, ‘‘আরও অনেকেই উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় সামিল হতে চাইছেন। এখানে বিভেদের রাজনীতি চলবে না। ডুয়ার্সের আদিবাসী, নেপালি, রাজবংশী মানুষরাও সেটা চান না। এ দিন তা স্পষ্ট হয়েছে।’’

ঘটনাচক্রে, দার্জিলিঙ, কালিম্পং, দুই বর্ধমান, হুগলি, জলপাইগুড়ির পরে আলিপুরদুয়ার জেলাতেও পূর্তমন্ত্রী অরূপবাবুকে তৃণমূলের পর্যবেক্ষক করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ যে পঞ্চায়েত ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে তা বলাই বাহুল্য। পাহাড়ের পুরভোটে মোর্চাকে একের পর এক নেতা এমনকী প্রার্থীদের দলে টেনে বিমল গুরুঙ্গদের অনেকটাই কোনঠাসা করে দিতে পেরেছিলেন অরূপবাবুরা। পুরভোটে তৃণমূলের ভোট প্রায় ৩৬ শতাংশে পৌঁছে যায়। সেই অরূপবাবুকেই ডুয়ার্সের ‘ঘর’ সামলানোর দায়িত্ব দিয়েছে দল। এ দিন মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি অশোক লামা, সাধারণ সম্পাদক সন্দীপ ছেত্রী, দুই সদস্য রাজু থাপা এবং ফুর্বা লামা-রা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। মোর্চার অন্দরে এঁরা ‘কট্টরপন্থী’ বলেই পরিচিত ছিল। তাঁরা বিজেপির কাছাকাছি চলে যাচ্ছিল বলে জল্পনা ছিল। সেই সম্ভাবনার গোড়াতেই আঘাত হানল রাজ্যের শাসক দল।

অরূপবাবু এ দিন দীর্ঘ বক্তব্য রাখলেও মোর্চা কিংবা বিমল গুরুঙ্গের কোনও সমালোচনা করেননি। বরং তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য ছিল বিজেপির মাদারিহাটের বিধায়ক সহ অন্য নেতারা। দলত্যাগী মোর্চা নেতারা নিজেদের হতাশাও প্রকাশ করেছেন প্রকাশ্যে। তাঁদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের নিয়ে ‘খেলা’ করা হয়েছে। গুরুঙ্গের মতো মোর্চা নেতারা ডুয়ার্সে এলে আন্দোলন নিয়ে গরম হুমকি দিতেন। আবার পাহাড়ে ফিরে গেলে সে সব ভুলে যেতেন। জিটিএতে অর্ন্তভুক্তির দাবিতে আন্দোলনের আর্জি নিয়ে ডুয়ার্সে নেতারা পাহাড়ে দরবার করতে গেলে ‘দেখছি, দেখব’ শুনে যেতে হয়েছে বারবার। রাজু থাপা বলেন, ‘‘একটা স্বপ্ন সামনে ঝুলিয়ে আমাদের দিয়ে দিনের পর দিন আন্দোলন করানো হয়েছে। অনেক মামলায় জড়িয়েছি। জেলেও গিয়েছি। কেউ খোঁজ নেয়নি। তখন হুঁশ ফিরল।’’ এই ক্ষোভের কারণেই তাঁরা রাজ্য রাজনীতির মূলস্রোতে সামিল হয়েছেন বলে দাবি সন্দীপ ও রাজুদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Morcha GJM TMC Dooars
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE