Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সোনাকে নিয়ে বিব্রত তৃণমূল

ফাঁপরে পড়েছেন হরিরামপুরের বিপ্লব মিত্র অনুগামী তৃণমূল নেতৃত্ব। সোনাকে বেকায়দায় ফেলতে তাঁদের নানা পথ খুঁজতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

আলোচনা: কর্মীদের সঙ্গে কার্যালয়ে সোনা। হরিরামপুর। নিজস্ব চিত্র

আলোচনা: কর্মীদের সঙ্গে কার্যালয়ে সোনা। হরিরামপুর। নিজস্ব চিত্র

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৫৪
Share: Save:

চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে, অন্তরালে আর এক রকমের ছবি বোঝা যাচ্ছে।

দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর ব্লকে এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ছদ্মবেশী তৃণমূলের আছি, নেই-য়ের খেলায় পঞ্চায়েত ভোট সরগরম হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের হয়ে দেদার মনোনয়ন জমা পড়েছে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে। তাই চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে আর ভিতরে ভিতরে যা হচ্ছে, তার মধ্যে ফারাক রয়েছে। একই রঙের জার্সি পড়ে কর্মী নেতারা ময়দানে নেমে খেলার অভিমুখ যে বদলে দিয়েছেন, তা হরিরামপুরে না গেলে বোঝা শক্ত। দলের ক্যাপ্টেন বর্তমান তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা সোনা পাল তৃণমূলের একাংশকে রীতিমতো ‘হাইজ্যাক’ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফাঁপরে পড়েছেন হরিরামপুরের বিপ্লব মিত্র অনুগামী তৃণমূল নেতৃত্ব। সোনাকে বেকায়দায় ফেলতে তাঁদের নানা পথ খুঁজতে হচ্ছে বলে অভিযোগ।

সোনা বলেন, পুলিশকে দিয়ে তাঁর উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে করে তাঁকে থামানো যায়নি। দলীয় সূত্রেই খবর, সোনার উদ্যোগেই তৃণমূলের অনেকে কংগ্রেসের হয়ে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। হরিরামপুরের সবগুলো পঞ্চায়েত ও জেলা পরিষদে কংগ্রেস প্রার্থীর মনোনয়নই তার হাতে গরম প্রমাণ। ফলে পঞ্চায়েতের মুখে এ জেলায় তপন, কুমারগঞ্জ, বংশীহারি এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রোধে সাংসদ অর্পিতা ঘোষের হস্তক্ষেপে অনেকটা মিটলেও, হরিরামপুরে দলের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ভাল রকম মাথা চাড়া দিয়ে ওঠায় জেলা নেতৃত্বে অস্বস্তি বেড়েছে। অর্পিতা বলেন, ‘‘দলে থেকে সোনার ওই ভূমিকা রাজ্য নেতৃত্ব ভাল চোখে দেখছেন না।’’

সোনার ওই ভোল বদলের পিছনে রয়েছে হরিরামপুরে কর্তৃত্ব রক্ষার তাগিদ। তা আগের নির্বাচনগুলোতেও দেখা গিয়েছে। দল বদলের ফলে কখনও বামেদের হাত থেকে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা গিয়েছে তৃণমূলে। দলীয় কোন্দলের জেরে বিধানসভায় তৃণমূলের হার হয়েছে। জয়ী হয়েছেন সিপিএমের বিধায়ক। এ দিন মুখে অবশ্য সোনা বলছেন, ‘‘আমি তৃণমূলের একনিষ্ঠ কর্মী। দল আমাকে বাদ দিয়েই হরিরামপুরে পঞ্চায়েত ভোটে নেমেছে। তাই আমি বসে গিয়েছি। নির্বাচনের দিন চুপচাপ ভোট দিয়ে চলে আসব।’’

আদতে পুরো তৃণমূলের ছাতার তলায় বসেই পঞ্চায়েত ভোটে ব্যাট করতে কংগ্রেসকে বেছে নিয়েছেন সোনা। এ যেন কাকের ঘরে কোকিলের বাস। দলে তাঁকে কোণঠাসা করা হয়েছে, এই জল্পনার মাঝে হরিরামপুরের রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রাখাই সোনার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। গত পঞ্চায়েত ভোটের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তখন তাঁর হাত ধরে প্রায় পুরো ব্লকে কংগ্রেস দলটাই তৃণমূলে চলে আসে। দল সূত্রের খবর, গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের জয়ের পিছনে বড় ভূমিকা পালন করেন সোনা পাল। ফলে গত পঞ্চায়েত ভোটে হরিরামপুরে ভাল ফল হয়। তাই সোনাকে জেলা পরিষদে পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ করেন বিপ্লববাবু। এর পরই কাজ নিয়ে বিপ্লববাবুর সঙ্গে সোনার বিরোধের শুরু। আর তার ফলেই পঞ্চায়েত ভোটে কোণঠাসা সোনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC তৃণমূল কংগ্রেস
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE