হুল্লোড়: বরফে ঢেকেছে সিকিমের ছাঙ্গু লেক যাওয়ার রাস্তা। খুশিতে হুটোপুটি পর্যটকদের। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ডিসেম্বরে সান্দাকফুতে তুষারপাতের নজির রয়েছে। আবহাওয়ার সেই চওড়া ব্যাট ফের একবার দেখতে চাইছে বিনয় তামাঙ্গ-বিমল গুরুঙ্গদের লড়াইয়ে বহু দিন ধরে উত্তপ্ত হয়ে থাকা পাহাড়। দার্জিলিং আশা করছে, আবহাওয়া ঠান্ডা হলে আস্তে আস্তে ফিরতে শুরু করবে পর্যটকরা। পর্যটকদের হাত ধরে বাড়বে ধুঁকতে থাকা পর্যটন ব্যবসা।
দার্জিলিঙে বন্ধের জেরে গ্রীষ্মের মরসুমের শেষে সিকিমের ব্যবসাও মার খেয়েছে। শীতের শুরুতেই ছাঙ্গু-নাথুলায় তুষারপাত শুরু হতেই লোকসান পুষিয়ে লাভের আশা করছে পর্যটন মহল। কারণ, মঙ্গলবার রাতে তুষারপাত শুরুর পর থেকে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অনেকেই সিকিমের দিকে মুখ ঘোরাচ্ছেন।
সিকিম পর্যটন দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যেই ছাঙ্গু-নাথুলায় ভিড় বাড়ছে। উত্তরবঙ্গের সমতল তো বটেই, কলকাতা, নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার পাহাড়প্রেমীদের নজর এখন ছাঙ্গু-নাথুলায়।
তাই সিকিমের একটি ট্যুর অপারেটর সংস্থার মুখপাত্র সতীশ বরদেওয়ার মতো অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। সতীশ জানান, মঙ্গলবার রাতে বরফ পড়ার খবর পেয়েই গুজরাতের একটি দল খোঁজখবর করে রওনা হন গ্যাংটকের দিকে। ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছেছেন গুজরাতের সুখলাল সোমানি-সহ ৯ জন। চন্দননগর থেকে চন্দ্রমোহন ঘোষের নেতৃত্বে ৯ জনের দল পৌঁছেছে গ্যাংটকে। বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ির সিকিম পরিবহণ সংস্থার অফিসে দাঁড়িয়ে বর্ধমানের শ্যামল কারক, অমিত দাঁ, সৌমেন মোহান্তিরা প্রায় একযোগে বললেন, ‘‘বরফ পড়া দেখব বলে খবর পেয়েই ছুটে চলে এসেছি। ট্যুর অপারেটরের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের ছবি দিয়েছি। যাতে গ্যাংটক থেকে চাড়াতাড়ি ছাঙ্গু-নাথুলায় যাওয়ার ‘পারমিট’ মেলে।’’
বরফ পড়ার সুবাদে দক্ষিণের পর্যটকদের আনাগোনা শুরু হওয়ায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছে দার্জিলিঙের পর্যটন মহলও। ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘সিকিমের মতো দার্জিলিঙেও আবহাওয়া এখন হিমশীতল। তাতেই অনেক পর্যটক উৎসাহ দেখাচ্ছেন। এতে শীতের মরসুমে বাড়তি ব্যবসা হওয়ার ক্ষীণ আশা দেখা যাচ্ছে।’’
তার উপরে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের সিকিমের আধিকারিক গোপীনাথ রাহা জানিয়েছেন, পশ্চিমী ঝঞ্ঝা সিকিম-দার্জিলিঙের আকাশের উপরে অবস্থান করায় বৃষ্টি ও তুষারপাত আরও কয়েক দফায় চলার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই পূর্বাভাস মাথায় রেখেই অজন্তিকা ঘটকের মতো শতাধিক পর্যটক ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিকিমে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ফেরার পথে একবার দার্জিলিঙেও ঢুঁ মারার ইচ্ছে রয়েছে অনেকেরই। তাই তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছেন, সান্দাকফুতে বরফ পড়ার কতটা সম্ভাবনা।
দার্জিলিঙের ট্যুর অপারেটর সংস্থার কর্ণধার প্রদীপ লামারা জানান, অতীতে ডিসেম্বরে সান্দাকফুতে তুষারপাতের নজির রয়েছে। তাই আপাত শান্ত মনে হলেও বিমল গুরুঙ্গ বনাম বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপার মোর্চার লড়াইয়ে ভেতরে তেতে থাকা দার্জিলিং এখন মনেপ্রাণে একটা তুষারপাত চাইছে। যাতে ঠাণ্ডা হয় সব কিছু। ফিরে আসে পর্যটকদের ভিড়। দার্জিলিং এটাও চাইছে, ছাঙ্গুতে যেমন হচ্ছে, তেমনই সান্দাকফুর পথে বরফ গায়ে মেখে নিতে হুটোপুটির দৃশ্যও ফিরে আসুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy