Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় ঝক্কি স্কুলে পাঠানো

পাতকাটার বাসিন্দা গৃহবধূ মন্দিরা দাস তো বলেই ফেললেন, ‘‘প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছি৷ কিন্তু এই ঠান্ডায় সকালে মেয়ে সহ বাড়ির সকলকেই প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে৷ জলপাইগুড়িতে এত ঠান্ডা কখনো দেখিনি৷’’

আপাদমস্তক: সারা গা ঢেকে অভিভাবকের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

আপাদমস্তক: সারা গা ঢেকে অভিভাবকের সঙ্গে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৩
Share: Save:

সকাল সাড়ে সাতটা বাজলেই চলে আসবে গাড়ি৷ তাই সাড়ে ছ’টার মধ্যেই মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে তৈরি করতে হবে৷ আর মেয়ের টিফিন তৈরির জন্য তাকেও তারও প্রায় ঘন্টা খানেক আগে ঘুম থেকে উঠতে হবে৷ কিন্তু এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় প্রতিদিন এমনটা কী ভাবে সম্ভব, সেটাই বুঝে পারছেন না জলপাইগুড়ি শহরের বাসিন্দা গৃহবধূ মৌসুমী রায় চক্রবর্তী৷ মৌসুমীদেবীর স্বামী সঞ্জীব রায়ের কথায়, ‘‘প্রতিদিন সকাল হলেই এখন যেন যুদ্ধ চলছে বাড়িতে৷ মেয়ে ঘুম থেকে উঠতে চাইছে না৷’’ প্রায় সব বাড়িতেই একই অবস্থা। অনেক ডাকাডাকি করে বাচ্চাদের ওঠানো হলেও, স্কুল যাওয়ার জন্য তৈরি হতে চাইছে না৷ অনেক বুঝিয়ে তাদের স্কুলে পাঠানো হচ্ছে৷

পাতকাটার বাসিন্দা গৃহবধূ মন্দিরা দাস তো বলেই ফেললেন, ‘‘প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে পাঠাচ্ছি৷ কিন্তু এই ঠান্ডায় সকালে মেয়ে সহ বাড়ির সকলকেই প্রচন্ড কষ্টের মধ্যে পড়তে হচ্ছে৷ জলপাইগুড়িতে এত ঠান্ডা কখনো দেখিনি৷’’

আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, গত সোমবার জলপাইগুড়িতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩.৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড৷ যা স্বাভাবিকের চেয়ে ছয় ডিগ্রি কম৷ আবহাওয়া দফতরের কর্তাদের কথায়, জলপাইগুড়িতে গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে সোমবারের তাপমাত্রা৷ তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি জলপাইগুড়ির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে নেমে দাড়িয়েছিল৷ তারপর আবারও জলপাইগুড়ির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রিরও নীচে৷ তবে জলপাইগুড়ি আবহাওয়া দফতরের তরফে পরিসংখ্যান না মিললেও, ২০১৩ সালের আগে জলপাইগুড়িতে তাপমাত্রা ৩.৮-এর নীচেও নেমেছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর৷

তবে মঙ্গলবারও জলপাইগুড়ির ঠান্ডার খুব একটা হেরফের হয়নি৷ এদিন জলপাইগুড়ির সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫.৯ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হলেও, তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে চার ডিগ্রি কম৷ আবহাওয়া দফতরের এক কর্তা জানান, একে তো উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে শীতল বাতাস বয়ে আসছে৷ তার উপর গত রবিবার গোটা দিনটাই কুয়াশায় ঢাকা ছিল জলপাইগুড়ি৷ ফলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও সেদিন খুব একটা বাড়েনি৷ তার জেরে সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ এতটা নেমে যায়৷ সোমবার সারাদিন রোদ থাকাতে এ দিন সেই পারদ সামান্য উঠেছে৷ তবে অন্তত তিন দিন জলপাইগুড়িতে ঠান্ডা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান আবহাওয়া দফতরের কর্তারা৷

প্রবল এই ঠান্ডার প্রভাব প্রায় সর্বত্রই পড়তে শুরু করেছে৷ জলপাইগুড়ির একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি মিহির বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘প্রচণ্ড ঠান্ডায় দু’দিন স্কুলে উপস্থিতির হারও খানিকটা কমে গিয়েছিল৷ কিন্তু তারপর ঠান্ডাটা সয়ে যাওয়াতেই হয়তো আবার সেই হার বেড়েছে৷’’ স্কুলের পাশাপাশি সন্ধ্যার পর রকের আড্ডাতেও ঠান্ডার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ নতুনপাড়ার বাসিন্দা পেশায় ব্যাবসায়ী নিরঞ্জন রায়ের কথায়, ‘‘আগে সন্ধে-রাতে আড্ডা দিতাম। এখন দোকান বন্ধ করে সোজা বাড়ি ফিরে আসছি৷’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Winter Education School Children Guardians
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE