Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

দার্জিলিং হয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল। ভূমিকম্প তাঁকে নেপাল যেতে দেয়নি। কিন্তু বছরদুয়েক আগে তোলা নেপালের ছবিগুলি ল্যাপটপে রয়ে গিয়েছিল। সেগুলিই প্রিন্ট করিয়ে প্রতিদিন চৌরাস্তায় সাজিয়ে বসছেন নীরাঞ্চু লাম আর্য। তাইল্যান্ডের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের এই মহিলা জানুয়ারি মাস থেকে দার্জিলিঙে রয়েছেন।

শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৫ ০২:২৯
Share: Save:

নীরাঞ্চুর ছবি

দার্জিলিং হয়ে নেপাল যাওয়ার কথা ছিল। ভূমিকম্প তাঁকে নেপাল যেতে দেয়নি। কিন্তু বছরদুয়েক আগে তোলা নেপালের ছবিগুলি ল্যাপটপে রয়ে গিয়েছিল। সেগুলিই প্রিন্ট করিয়ে প্রতিদিন চৌরাস্তায় সাজিয়ে বসছেন নীরাঞ্চু লাম আর্য। তাইল্যান্ডের বাসিন্দা বছর চৌত্রিশের এই মহিলা জানুয়ারি মাস থেকে দার্জিলিঙে রয়েছেন। ভ্রমণের বিষয়ে ফ্রিলান্স কলাম লেখাই তাঁর পেশা। টিভিতে দেখেছেন, ভূমিকম্পে গুড়িয়ে গিয়েছে নেপালে তাঁর দেখা নানা এলাকা, পথ-ঘাট। কিন্তু সেগুলির ছবি এখনও তাঁর ল্যাপটপে জমা হয়ে রয়েছে। ভাবতে আর সময় নেননি নীরাঞ্চু। সেই ছবিগুলি প্রিন্ট করিয়ে চৌরাস্তায় বিক্রি করতে শুরু করেছেন। ছবি বিক্রির টাকা নেপালের দুর্গতদের পৌঁছে দেবেন বলে স্থির করেছেন তিনি। তাঁর চেষ্টা দেখে সাড়াও দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। চকবাজার এলাকার বাসিন্দা নীলা তামাঙ্গের কথায়, ‘‘যে ছবিগুলি টাঙানো হয়েছে, সেগুলি খুব সুন্দর। তাই কিনে নিতে ইচ্ছে করে।’’ এক একটি ছবি ৩০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নীরাঞ্চু জানান, কেউ কেউ ত্রাণের জন্য শুনে বেশি দামও দিতে চাইছেন। ত্রাণ সংগ্রহের শেষে আগামী মাসে তাইল্যান্ডের বাড়ি ফিরে যাবেন তিনি। মঙ্গলবার নীরাঞ্চু বলেন, ‘‘যত সামান্যই হোক না কেন, নেপালের বাসিন্দাদের জন্য কিছু সাহায্য তো অন্তত করতে পারলাম।’’

কলির গলি

হরিশ্চন্দ্রপুরের হোলি, আর কলিগাঁয়ের গলি। এই হল মালদহের চালু প্রবচন। হরিশ্চন্দ্রপুরের জমিদার বাড়ির পাঁচদিনের দোল উত্সব, আর কলিগ্রামে গলির গলি তস্য গলির ভুলভুলাইয়া, দুই-ই সমান বিখ্যাত। পথ ছেড়ে গলিতে একবার ঢুকলে সহজে নিস্তার পাওয়ার জো নেই! স্থানীয় কারও সাহায্য ছাড়া বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। চাঁচল থেকে দু’কিলোমিটার দূরে, ছোটবড় মিলিয়ে শতাধিক কানাগলির বর্ধিষ্ণু জনপদ কলিগ্রাম। বাসিন্দা প্রায় ১৫ হাজার। হঠাৎ পৌঁছালে উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার বা শোভাবাজার বলে ভুল হতে পারে। একেকটি গলি থেকে আবার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে একেবেঁকে চলে গিয়েছে আরও নানা কানাগলি। গ্রাম পঞ্চায়েত, দুটো হাই স্কুল, ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস সবই রয়েছে ওই গ্রামে। অধিকাংশই পুরনো আমলের বনেদি বাড়ি। শুধু চাঁচল শহর নয়, লাগোয়া এলাকাতেও একটি চালু রসিকতা রয়েছে। বাজি ধরে হামেশাই বলা হয়, ‘‘হারলে কিন্তু কলিগায়ের গলিতে গিয়ে ছেড়ে দিয়ে আসব। রাজি তো?’’

ডিফারুগিরি

দাদাগিরি কাকে বলে, কে না জানে। কিন্তু ডিফারুগিরি? ‘ডিফারু’দের সন্ধান পেতে হলে আসতে হবে উত্তর মালদহে। ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে, বড়াই-করা কথার বাহাদুরিই ডিফারুগিরি। রকের আড্ডা, চায়ের ঠেক এমনকি প্রায় প্রতিটি পাড়ায় এমন কিছু ডিফারু রয়েছেন। সেদিন চায়ের দোকানে জমাটি আড্ডার বিষয় বিশ্বকাপ ক্রিকেট। এক সদস্যের গম্ভীর মন্তব্য, ‘‘ইন্ডিয়া ফাইনালে খেললে অস্ট্রেলিয়া যাব বলে ঠিকই করে রেখেছিলাম, কিন্তু সেমিতেই হেরে গেল।’’ বন্ধুরা বললেন, ‘‘তোর তো পাসপোর্টই নেই! কীভাবে যেতিস?’’ ডিফারুর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘আরে পয়সা ফেললে একদিনেই সব হয়ে যেত।’’ আবার কখনও হয়তো হাড়কিপ্টে বলে পরিচিত ব্যক্তি বারবার বলছেন, ‘‘কয়েকদিন ধরে বাজারে খুঁজেও দু’কেজির রুই মিলছে না।’’ প্রতিবেশী কেউ যদি বলেন,‘‘আরে আজকেই তো ছিল,’’ অমনি মিলবে তত্ক্ষণাৎ জবাব, ‘‘তাহলে আমি পৌঁছানোর আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।’’ কিন্তু ডিফারুর ডেফিনিশন কী? প্রবীণদের মতে, অন্যদের থেকে ‘ডিফারেন্ট’ হওয়ার বা ডিফার করার আকুল চেষ্টা যাদের, তারাই ডিফারু।

প্রাণের উৎসব

এক সপ্তাহ ধরে শুধু বাউল গানের আসর। গত ৩০ বছর ধরে হয়ে আসছে মালদহের ময়নায়। মালদহ-রায়গঞ্জ ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বর্ধিষ্ণু জনপদ ময়নায় সম্প্রতি হয়ে গেল সেই বাউল উত্সব। বাংলা নববর্ষের গোড়ায় উৎসব শেষ হলে দু’দিন ধরে বসেছিল কবিগানের আসর। কবিগান আর আজকাল সচরাচর শোনা যায় না। ওই উত্সবকে ঘিরে মেতে উঠেছিলেন বাসিন্দারা। ময়না এলাকায় শারদোত্সবকেও ছাপিয়ে যায় বাউল উত্সব ও কবিগানের এই আসর। দূরদূরান্ত থেকে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই হাজির হন আত্মীয়-স্বজনরা। কয়েকদিন ধরে গমগম করতে থাকে গোটা এলাকা। কলকাতা, নদিয়া, বীরভূম, কোচবিহার মিলিয়ে আটটি বাউলগানের সম্প্রদায় সাতদিন ধরে পালা করে গান গেয়েছেন। আর অমূল্য সরকার ও প্রকাশ সরকারের তরজায় জমে উঠেছিল কবিগানের আসর। স্থানীয় সুমন্ত সরকার, বাবলু সরকাররা তাই নির্দ্বিধায় বলেন, ‘‘এ আমাদের প্রাণের উত্সব। সারা বছর এর জন্য অপেক্ষা করে থাকি।’’

ছড়ায় পারাপার

একটা ছিল দেশের বাড়ি/ পদ্মা পাড়ের দেশে/ হঠাৎ করে হারিয়ে গেল জীবন থেকে শেষে। লিখেছেন যিনি, সেই শুভাশিস দাসের জন্ম বাংলাদেশের গাইবান্ধায়, বড় হয়ে ওঠা কোচবিহারের দিনহাটায়। সম্প্রতি ঢাকা থেকে প্রকাশিত হল তাঁর ছড়ার বই। ছোটবেলা থেকে ছড়ার প্রতি তাঁর অদ্ভুত নেশা। সুকুমার রায়ের একের পর এক ছড়া তিনি বলে চলেন। সেই ভালবাসা থেকে থেকেই লিখতে শুরু করেন ছড়া। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার চাকরিজীবন শেষে এখন অবসর নিয়েছেন। কিন্তু ছড়ার গতি অব্যহত। ১৯৯৬ সালে ‘ছড়া বড়া’, ২০০০ সালে ‘মজায় ভরা সবার ছড়া’, আর তার পরেও পাঁচটি বই। একদিন মাঝরাতে/ভূতেদের আড্ডায়/ গেছিলাম আমি আর/ ওপাড়ার ঘুটু রায়, রয়েছে তেমনই এক বইতে। ছড়াকার বলেন, “জন্মেছি বাংলাদেশে। শৈশব থেকে প্রায় সারা জীবন কাটছে দিনহাটায়। তবুও একটা টান রয়েছে ওপারের।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE