Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

ডালে ডালে লম্ফঝম্পের দিন গিয়েছে। গাছ থেকে ফল পাড়ার ঝক্কি সামলাতে হয় না বহু দিন। ওদের বাঁদরামি নাকি ঘুচে গিয়েছে। হাত না বাড়াতেই যেখানে খাবার মেলে, সেখানে কসরতের কী প্রয়োজন? শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, সেবকে পর্যটকের দেখা মিলবেই।

শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৫ ০২:৩০
Share: Save:

মানুষের কাছাকাছি

বাঁদুরে মন বদল

ডালে ডালে লম্ফঝম্পের দিন গিয়েছে। গাছ থেকে ফল পাড়ার ঝক্কি সামলাতে হয় না বহু দিন। ওদের বাঁদরামি নাকি ঘুচে গিয়েছে। হাত না বাড়াতেই যেখানে খাবার মেলে, সেখানে কসরতের কী প্রয়োজন? শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, সেবকে পর্যটকের দেখা মিলবেই। স্থানীয়রাও বাঁদরকে ‘কলা’ দিতে অভ্যস্ত সেবকে। সেই অভ্যেসই এখানকার বাঁদরকুলের জীবনযাপনই বদলে দিয়েছে। গাছ গাছালির পরিবর্তে গাড়ির বনেট, ছাদে লাফালাফি করাতেই এখন তারা অভ্যস্ত। স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেন, কলাতেও নাকি এখন ওদের তেমন রুচি নেই। তার থেকে পর্যটকদের ছুঁড়ে দেওয়া ভূট্টা, বাদাম, চিপস এমনকী মোমোও নাকি ওদের পছন্দের মেনু। শিলিগুড়ি শহর ছেড়ে শালুগাড়া হয়ে কয়েক কিলোমিটার পাড়ি দিলেই সেবক করোনেশন সেতু। শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্স, কালিম্পং এবং গ্যাংটক যাওয়ার অন্যতম ব্যস্ত পথ সেবক করোনেশন সেতু। দু’পাশের পাহাড় চিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদী দেখা অন্যতম আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে। সেবকের পাহাড়ের গাছে গাছে বাঁদরদের ডেরা। তবে ওদের এখন গাছে কম গাড়ির সামনে বেশি দেখা যায়। সেবক সেতু বা লাগোয়া এলাকায় গাড়ি থামলেই রাস্তার পাশের উঁচু পিলার থেকে দু’পা তুলে উঠে দাঁড়িয়ে গাড়ির জানলা দিয়ে বাঁদরের উঁকি মারা সেবকের পরিচিত দৃশ্য। সেই দৃশ্য দেখে উৎসাহী হয়ে পর্যটকরাও খাবার ছুড়ে দেন। খাবার পেলে ক্যামেরার লেন্সের সামনে বাঁদররা দিব্যি পোজ দিয়ে থাকে। শিলিগুড়ি থেকে ডুয়ার্সগামী বাসের যাত্রীরাও জানলা দিয়ে বাঁদরদের খাবার ছুড়ে দেয়। পড়ে পাওয়া খাবারের লোভেই বাঁদরগুলি বাঁদরামি ছেড়ে হাত পাতা অভ্যেস করেছে। কখনও খাবার ভেবে পর্যটকদের হাতের মোবাইল, ব্যাগ কেড়ে নিয়েও কেউ কেউ পালিয়েছে বলে শোনা যায়। তবে বাসিন্দাদের দাবি, তারা নেহাতই ব্যতিক্রম, সিংহভাগ বাঁদররাই হাত পেতে খেতে অভ্যস্ত। পর্যটকদের অনেকে দাবি করেন, ভুট্টা, চিপসের সঙ্গে ফেলে দেওয়া বিয়ারের ক্যান বা বোতলও কুড়িয়ে মুখে দিতে দেখা গিয়েছে অনেক বাঁদরকে। মানুষের কাছাকাছি এসে সেবকের বাঁদরেরাও বিবর্তনের পথে।

রঙিন মাছ

লোকসভা ভোটের সময় স্কুলে ঘাঁটি গাড়ে আধা সামরিক বাহিনী। জওয়ানদের স্নানের জন্য তৈরি করা হয়েছিল তিনটি চৌবাচ্চা। সেখানে শুরু হয়েছে মাছের চাষ। ইংরেজবাজারের মাধবনগরের বাদলমনি হাইস্কুলের তিনটি বাঁধানো চৌবাচ্চায় চাষ করা হচ্ছে রঙিন মাছ থেকে দেশি মাছ। এতে উৎসাহিত ছাত্ররাও। তবে শুধু এখানেই নয়, জেলার বিভিন্ন স্কুলেই ছিলেন তাঁরা। অন্য স্কুলগুলিতে চৌবাচ্ছাগুলি বৃষ্টির জল জমে মশা, মাছির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে।

তবে বাদলমনি স্কুলের শিক্ষকেরা তা সুন্দর ভাবে কাছে লাগিয়েছেন। বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছের চারা রয়েছে সেখানে। শুধু রঙিন মাছই নয়, ট্যাংরা, কই, পুঁটির মতো দেশি মাছের চারাও রয়েছে। তিনটি চৌবাচ্চা পুকুরের আকার নিয়েছে। শ্যাওলা থেকে শুরু করে কুচুরিপানা সবই রয়েছে। নিয়ম করে সাত দিন অন্তর জল বদলানো হয়। শিক্ষকেরা জানান, চৌবাচ্চাগুলি ভেঙে ফেলার সিন্ধান্ত হয়েছিল। তবে পরে মত বদলান তাঁরা। চৌবাচ্চাগুলিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা নেন তাঁরা। কারণ, এতে স্কুলের ছাত্ররা হাতেকলমে মাছ চাষের পদ্বতি শিখতে পারবে।

কোথায় কৃষ্ণচূড়া

ক’বছর আগেও বসন্তের শেষে রাস্তার পাশে মাথাভরা ফুল নিয়ে উঁকি দিতে দেখা যেত কৃষ্ণচূড়া গাছকে। শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়! পরিবেশ বান্ধব কৃষ্ণচূড়া গাছ হারিয়ে যেতে বসায় উদ্বিগ্ন পরিবেশ প্রেমীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, কৃষ্ণচূড়া গাছের ফুল হলেও ফল হয় না, কাঠেরও দাম নেই। তাই তা কেটে বন দফতরের উদ্যোগে লাগানো হচ্ছে ইউক্যালিপটাস বা আকাশমণি জাতীয় গাছ। গাছগুলির পরাগরেণু থেকে দূষণ ছড়ায়। যাতে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। কৃষ্ণচূড়ার শিকড় মাটির অনেক গভীরে থাকে। সেখান থেকে জল সংগ্রহ করে অতিরিক্ত জল বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে দেয়। যা অন্য অনেক গাছই করতে পারে না। তাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়ে। মালদহের চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস বলেন, ‘‘কৃষ্ণচূড়া যাতে পরিবেশ থেকে হারিয়ে না যায় তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’’

দুর্গ ভগ্নপ্রায়

চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে ইতিহাস। তা দেখেও কিছু করার নেই, আক্ষেপ ইতিহাসবিদদের। সংস্কারের অভাবে রায়গঞ্জের বিন্দোল পঞ্চায়েত এলাকার বালিয়াদিঘি দুর্গ ধ্বংস হতে বসেছে। জেলার দুই ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষ ও সনৎ অধিকারী জানান, প্রায় ৬০০ বছর আগে মোঘল যুগে বিন্দোল এলাকার বালিয়ারাজা নামে এক জমিদার ওই দুর্গটি তৈরি করেছিলেন। ওই জমিদারের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের লোকজন সমস্ত ধনসম্পত্তি নিয়ে তত্কালীন অবিভক্ত বাংলাদেশে চলে যান। এরপর পীরবাবা বলে পরিচিত স্থানীয় এক ফকির ওই দুর্গটি দখল করে সংলগ্ন এলাকায় একটি মসজিদ তৈরি করেন। ওই ফকিরের মৃত্যুর পর থেকেই দুর্গটি ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে শুরু করে। গত কয়েক দশক ধরেই দুর্গটি ধ্বংসপ্রায়। বাসিন্দাদের বক্তব্য, দুর্গটি সংস্কার করে পর্যটনকেন্দ্র হলে বিন্দোল এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। জেলাশাসক রণধীর কুমার বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

৩৬-এ নবলিপি

সাহিত্যপত্র নবলিপি প্রকাশিত হল ১ লা বৈশাখে। কোচবিহার থেকে প্রকাশিত ওই ছোট পত্রিকায় নিবন্ধ, কবিতা, গল্প থেকে চিঠিপত্র রাখা হয়েছে। সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে নেপালের ভূমিকম্পে ক্ষতির মুখে পড়া সাধারণ মানুষের কথা। প্রচ্ছদেও ভূমিকম্পের সেই ভয়াল ছবি ছাপা হয়েছে। ১ লা বৈশাখের ইতিকথা লিখেছেন অলকানন্দা দাস। গল্প লিখেছেন নন্দিতা নন্দিনী, কবিতা লিখেছেন সুনীল সাহা, গোবিন্দ মোদক, সন্তোষ বসুরা। সমিত ভৌমিক ‘বরফের নিচে আগুন’ বলে ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছেন। পত্রিকার সম্পাদক সুনীল সাহা। এবারে ওই পত্রিকা ৩৬ বছরে পা দিয়েছে।

লড়াকু স্মৃতিরেখা

জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সামলে বারেবারেই নাটকের মঞ্চে দক্ষতার ছাপ দেখিয়েছেন শিলিগুড়ির স্মৃতিরেখা গঙ্গোপাধ্যায়। অসমের লামডিং থেকে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার নাট্যপ্রেমীরা অনেকে যাঁকে এক ডাকে যাঁর লড়াই কাহিনী জানেন। ১৯৪৯ সালে লামডিঙে জন্ম। ১৯৭২ সালে রেলকর্মী প্রণববাবুর সঙ্গে বিয়ে। ১০৮৪ সালে স্বামী প্রয়াত হওয়ার পরে রেলে চাকরি পান। তিন মেয়েকে বড় করে তোলা, চাকরি সামলে নাটকের মঞ্চে নিয়মিত সময় দিয়েছেন। ‘পিতাপুত্র’, দুই মহল’, ‘শততম রজনীর অভিনয়’, পাহাড়ি বিছে’, ‘একমুঠো ঝড়’, শিলিগড়িতে বলাকা নাট্যসংস্থায় যোগ দিয়ে ‘সম্পর্ক’, ‘সন্ধ্যাতারা’, ‘ছায়ার প্রাসাদ’-সহ কত নাটকেই না অভিনয় করেছেন। ২০০৫ সালে মুখে ক্যানসার ধরা পড়ে তাঁর। চিকিৎসায় তা প্রায় কমে যায়। কিন্তু, ২০১৪ সালে ফের রোগ ছড়িয়ে পড়ে মুখে। তিন দফায় অস্ত্রোপচারের পরে কিছুটা সুস্থ হয়ে ফের মঞ্চে ফেরেন। ফের ‘সন্ধ্যাতারা’ সহ তিনটি নাটকে অংশ নেন। এখন একেবারেই আর পারছেন না। একের পর এক অস্ত্রোপচার, দীর্ঘ চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম সকলে। সামনে আরও একটা অস্ত্রোপচার। সে কথা মাথায় রেখে নাটক-অন্ত প্রাণ ৬৬ বছর বয়সী স্মৃতিরেখার জন্য এ বার আসরে নেমেছেন নাট্যপ্রেমীরা। ‘বলাকা’ সংস্থার উদ্যোগে শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে আগামী ৭ জুন হতে চলেছে দুটি নাটক। একটি মৈনাক সেনগুপ্তের ‘মানুষ মেরুদণ্ডী প্রাণী’ ও অন্যটি হল সুরজিৎ সিংহের ‘পলাতক’। শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকার নাট্যপ্রেমীরা স্মৃতিরেখার লড়াইয়ে সামিল হবেন বলে আশা করেন বলাকার মুখপাত্র বিমান দাশগুপ্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE