Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

হাট বসেছে শুক্রবারে....৩১ (ডি) জাতীয় সড়কের ধারে। যে সড়ক জুড়েছে জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িকে। সে পথের ধারে যেসব জনপদ, তার অনেকগুলো নামের সঙ্গেই জুড়ে আছে হাট শব্দটি। কান টানলে যেমন মাথা আসে, নাম টানলে আসে ইতিহাস। হাটের নামে কত না জায়গার নাম।

বিকিকিনি তালমাহাটে। নিজস্ব চিত্র।

বিকিকিনি তালমাহাটে। নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০২:২৪
Share: Save:

হাট বসেছে সড়কপারে

হাট বসেছে শুক্রবারে....৩১ (ডি) জাতীয় সড়কের ধারে। যে সড়ক জুড়েছে জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়িকে। সে পথের ধারে যেসব জনপদ, তার অনেকগুলো নামের সঙ্গেই জুড়ে আছে হাট শব্দটি। কান টানলে যেমন মাথা আসে, নাম টানলে আসে ইতিহাস। হাটের নামে কত না জায়গার নাম। যেমনটি ফুলবাড়িহাট। তার নাম আগে ছিল দোপথী হাট। এখন যেখানে ফুলবাড়িহাট বাসস্টপ, সেখান থেকে কিলোমিটার দুয়েক পূর্বে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বসত এই হাট। দেশভাগের আগে থেকে শুরু, এখনও নিয়মিত বসে সোমবার আর শুক্রবারে। শুধু নাম বদলেছে।

ভান্ডারিগছ নিবাসী কালঠু সিংহ রায়ের গধিয়াগঞ্জের জমিতে বসত আরেকটি হাট। সেটি স্থানান্তরিত হয় ডুন্ডিভিটায়। একটা বড় তেঁতুল গাছ ছিল বলে নাম ছিল তেঁতুলডাঙি হাট। পরে তার নাম হয় ভুটকি হাট। পুরো অঞ্চলটি এখনকার ভুটকিহাট। এলাকার পুরনো বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রফিকুল রহমান জানান, পঞ্চাশ-ষাটের দশকেও এখানে প্রচুর পাট কেনাবেচা হত। নগরায়নের ফলে পাটও কমেছে।

জাতীয় সড়ক ধরে ফাটাপুকুর পার হলেই তালমাহাট। বসে সোমবার আর শুক্রবারে। হাট সেরে বাড়ি ফেরার পথে এই অঞ্চলের প্রাক্তন বিধায়ক আশি-ছুঁইছুঁই ধীরেন রায় জানালেন, দেশভাগের সময়ে হাট ছিল ছোট। পরে এলাকার সবচেয়ে বড় পাটের হাট হয়ে ওঠে। পাঙ, তালমা, সা, চাওয়াই করতোয়া নদী দিয়ে ঘেরা শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলে প্রচুর উন্নতমানের পাট হত। বর্তমানে বেলাকোবা রেগুলেটেড মার্কেটের সহায়তায় পাটের গুদাম নির্মিত হয়েছে। পাট আসে খুব কম। তবে মাছশিকারীর স্বর্গ। ভরা বর্ষায় হাটের এখন বিশেষ সাজ বলতে মাছ ধরার হাতে-বোনা জাল, বঁড়শি-সুতো, ছিপ, কোচা, খালুই, আম কাঁঠাল আনারস, সুপুরি, গাছ পান, রঙবেরঙের ছাতা।

তবে জলপাইগুড়ি শহর-সংলগ্ন গৌরীহাটের ঐতিহ্য একটু আলাদা। রায়কত রাজাদের নির্মিত প্রাচীন গৌরীদেবীর মন্দিরের সামনে রানী প্রতিভাদেবী এই হাটের প্রচলন করেন। খাজনা বলতে তেমন কিছু নেওয়া হতো না। ভাঁড়-বাওকায় আশপাশের এলাকা থেকে বাসিন্দারা শাকসব্জি, চিড়ে-মুড়ি বিক্রি করতেন। গরুও কেনাবেচা হতো হাটে। গরু বিক্রির রসিদের অর্থ নিতেন রানি। কেনাবেচা যখন আরও বেড়ে যায় রানি তখন এ শহরের কানাই পালকে বছর চুক্তিতে হাটের ইজারা দেন। গৌরীহাট অঞ্চলের অনেক দিনের পুরনো বাসিন্দা কার্তিক দাসের ঝুলিতে আছে কত হাটকথা। মঙ্গলবারে বসে বড় হাট, আর শুক্রবারে ছোট হাট। এখনও গরু বিক্রি হয়, তবে আগের রমরমা নেই। এখনও হাটে শীতকালের দেশীয় ভাকা পিঠে মেলে গরুর হাটে, ছাতার মতো বটগাছটির গায়ে। কার্তিকবাবুর ছেলেবেলায় মেলার দিন ঘোষণার জন্য হাটে ফাঁকা টিন বাজানো হত। মেলা চলত তিন দিন। এখন চলে আট দিন। ছয় দশক আগে এখানেই বারৌনীর স্নান করতেন ঠুটাপাকড়ির পদ্মমোহন রায়। তিনিই হাটের পাশে চৈত্র মাসে বারুণী স্নান উপলক্ষে মেলার প্রচলন করেন। সেই হাট এখনও চলেছে।

ভানুভক্ত ও দার্জিলিং

কবি ভানুভক্তের দু’শোতম জন্ম জয়ন্তী সাড়ম্বরে পালন করল নেপালি সাহিত্য সম্মেলন, দার্জিলিং। প্রভাত ফেরিতে অংশ নেন ছ’শো অনুরাগী। চৌরাস্তায় ভানুভক্তের মূর্তিতে মাল্যদান পর্বের পর অনুষ্ঠিত হয় কবি সম্মেলন।

দার্জিলিঙের চৌরাস্তায়।

অংশগ্রহণ করেন এলাকার স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। সভাপতি গোপীচন্দ প্রধানের প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে সংস্থার নিজস্ব কক্ষে শুরু হয় সান্ধ্য অনুষ্ঠান। রোদন সাহা ও তাঁর সম্প্রদায় পরিবেশন করেন সরস্বতী বন্দনা। রামায়ণ পাঠ করে শোনান মতিলাল ব্রাহ্মণ, সেন্ট টেরিজা উচ্চ বিদ্যালয় ও লোরেটো কনভেন্টের ছাত্রছাত্রীরা। ভানুভক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি গীত গেয়ে শোনান মনবাহাদুর রাই। আচার্য ভানুভক্তের জীবনভিত্তিক নাটক মঞ্চস্থ করেন বি এম এস আই স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। অন্য দিকে ভদ্রশীলা মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট এই উপলক্ষে সেমিনারের আয়োজন করে। যার শিরোনাম : ‘দ্য ইমপর্ট্যান্স অব ভানুভক্ত ইন দ্য প্রেজেন্ট এজ অব দার্জিলিং।’ উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক জীবন নামদুং, বঙ্গরত্ন কৃষ্ণসিংহ মোক্তান, গোকুল সিংহ, কৃষ্ণরাজ ঘাটানি, সুজাতারানি রাই প্রমুখ।

রায়-কাহিনি

যে কলম রায় লেখে, সেই কলমই লেখে কাহিনী। বঙ্কিমচন্দ্র থেকে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। সেই ধারা ধরে রেখেছেন বিপ্লব রায়। দার্জিলিং জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইতিমধ্যে ‘আজ পুতুলের বিয়ে’ এবং ‘আলো আঁধারে’ নামে দু’টি বই লিখে ফেলেছেন। চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়েছে উপন্যাস, ‘কুয়াশা মোড়া সকাল।’ দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডির স্কুল থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী। ১৯৯৯ সালে রাজ্যের জুডিশিয়াল সার্ভিস পাশ করে বিচারক। কুশমন্ডি থেকে দার্জিলিং, এই দীর্ঘ যাত্রাপথে লেখার অভ্যেস কিন্তু যত্ন করে ধরে রেখেছেন বিপ্লববাবু। তাঁর লেখা গল্প-কবিতা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়। সেখানে ঘুরেফিরে আসে আদালতে বসে দেখা অপরাধ জগত, সমাজের বিচিত্র আলো-আঁধারি। তাঁর উপন্যাস যেখানে শুরু হচ্ছে, সেখানে নায়ক-নায়িকার দাম্পত্য জীবন শুরুর মুখেই একটি ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার হয়। জেল এবং জেলের বাইরের পরিবেশের কতটা ফারাক রয়েছে, নাকি গোটা সমাজটাই একটা বড় মাপের কারাগার? বই পড়ে পাঠক রায় দেবে।

ঘরোয়া আড্ডায় ত্রিপুরা, বাংলাদেশ

কেমন লেখালেখি হচ্ছে এখন ত্রিপুরায়। পড়শি বাংলাদেশের কবি-লেখকরা এখন কী ভাবছেন? বাংলা লেখার সঙ্গে যুক্ত কবি-সাহিত্যিকদের এক ঘরোয়া আড্ডায় এমনই নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। ২৬ জুলাই জলপাইগুড়ির বাবুপাড়ার সুভাষ ভবনে। বাংলাদেশের বাংলা অ্যাকাডেমির সহ সচিব সরকারি আমিন, ত্রিপুরার ‘কাগজের নৌকার সম্পাদক প্রদীপ মজুমদার আড্ডায় অংশ নেবেন। উদ্যোক্তা জলপাইগুড়ি ‘দ্যোতনা’র সম্পাদক গৌতম গুহ রায়ের বই ‘স্বপ্ন পরিব্রাজকেরা’ প্রকাশিত হবে। বইটির প্রকাশক বাংলাদেশের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আকাশকুসুম

এতদিন ফুল ফোটাচ্ছিলেন অভিজিৎ সরকার। এ বার ঝোঁক গিয়েছে কাঁটার দিকে। অর্কিডের পর ক্যাকটাস। পেশায় অঙ্কন-শিক্ষক অভিজিৎবাবুর নেশা গাছ। রায়গঞ্জের মধ্যমোহনবাটিতে নিজের বাড়ির ছাদ আর উঠোন মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো প্রজাতির অর্কিড সযত্নে পালন করছেন তিনি। তার অনেকগুলোই ভারতে সহজে মেলে না। তাঁর উৎসাহে রায়গঞ্জের জনা পঞ্চাশেক বাসিন্দা বাগানে এখন রাখছেন অর্কিড। অভিজিৎবাবুর দাবি, ফ্ল্যাটে বাগান করতে হলে অর্কিডই সেরা। মাটি লাগে না, জল লাগে কম, একবার ফুল এনে থাকে তিন মাসেরও বেশি। ফুলদানিতে রাখলেও দীর্ঘদিন সতেজ থাকে। গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখলেই চলে, মেঝেতে জায়গাও দাবি করে না অর্কিড। গরম নইলে ক্যাকটাস হয় না, শীত নইলে অর্কিড হয় না, এই ভুল ভাঙাতে সমানে চেষ্টা করে চলেছেন অভিজিৎবাবু।

খুশি অপার

জেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার জনকল্যাণ দফতর এবং জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতাল যৌথ ভাবে পালন করল ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। ‘পরিকল্পিত পরিবার খুশি অ-পার’এই স্লোগানকে সামনে রেখে একটি র‌্যালি শহর পরিক্রমা করে।

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে মিছিল।

র‌্যালিতে অংশ নেন ডি এম ও এইচ থ্রি ডাঃ বিক্রম বসুমাতা, পি পি ইউনিটের সিস্টাররা। ছিলেন ডেপুটি নার্সিংসুপার মায়া ঘোষ, নার্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অধ্যক্ষ শ্যামলী দত্ত ও এন সি সি-র সদস্যরা। এই উপলক্ষে হাসপাতাল চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় নানা অনুষ্ঠান। জনসংখ্যা হ্রাসের জন্য সরকারি পরিষেবাগুলি তুলে ধরেন সুপার সুশান্ত রায়। ডাঃ বসুমাতা জানান, বিয়ের আগে কোষ্ঠী বিচার নয়, প্রয়োজন এইচ আই ভি, থ্যালাসেমিয়া রোগের রক্ত পরীক্ষা করা। শ্যামলী দত্ত মেয়েদেরকে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান। তাঁর মতে, সুস্থ সমাজ গড়ে তোলার জন্য মেয়েদের স্বনির্ভর হওয়া জরুরি। পণপ্রথা ও বাল্যবিবাহের মতো নানা রকম কুপ্রথাও দূর হওয়া দরকার বলে তিনি জানিয়েছেন। জনসংখ্যা হ্রাস বিষয়ক এই নাটকে অংশ নেন প্রশিক্ষণরত নার্সরা।

কলের গান

সে কবেকার কথা। সুখী বাঙালির গৃহকোণে তখন শোভা পেত কলের গান অর্থাৎ গ্রামোফোন। কেমন দেখতে ছিল সেই গ্রামোফেন? চৌকো একটা কাঠের বাক্স। তার ওপর রেকর্ড বসানোর জন্য একটা ধাতব চাকতি। বাক্সের একধারে একটা হাতল। সেই হাতল ঘুরিয়ে দম দিতে হত গ্রামোফোনে। রেকর্ড বসানো ধাতব চাকতি ঘোরা শুরু করলে তার ওপর বসাতে হত ‘আর্ম’। আর ছিল শব্দ শোনার জন্য একটা ধাতব চোঙ। খাঁটি পিতল দিয়ে তৈরি হত সেই চোঙ। গ্রামোফোন রেকর্ডের প্রতি দিকে থাকত একটা করে গান। এক দিকের গান শোনা শেষ হলে উল্টো করে রেকর্ড বসিয়ে দেওয়া হত ধাতব চাকতিটির ওপর। মিনিটে ৭৮ বার ঘুরত এই রেকর্ড। গ্রামাফোনে লাগানো থাকত সেই বিখ্যাত লোগোগ্রামোফোনের সামনে বসে একটি কুকুর। গ্রামোফোনে সে শুনছে তার প্রভুর কণ্ঠস্বর। এই কুকুরিট নাম নিপার। একসময় সঙ্গীত সাম্রাজ্য শাসন করেছে এই লোগো। ছবিটি এঁকেছিলেন ফ্রান্সিস বারাউড। গ্রামাফোনের আবির্ষ্কতা এমাইল বারলাইনার তাঁর কোম্পানি হিজ মাস্টার’স ভয়েজ-এর লোগো হিসেবে বেছে নিয়েোছিলেন বারাউডের ওই ছবিটি। বাকিটা ইতিহাস। ইতিহসের নিয়মেই সেই কলের গান আজ আর গৃহকোণে শোভা পায় না। তবে ডুয়ার্সের জুরান্তি চা-বাগানের শতাধিক বর্ষ প্রাচীন বাংলোতে আজও সযত্নে রাখা আছে হারিয়ে যাওয়া কলের গান। সেই কল আজ আর গান শোনায় না। তার নীরবতা, নীরবে জানাতে চায় অজানা কত ইতিহাস। কালের নিয়মে সেই ইতিহাস নীরবে হারিয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE