Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

সুকনার জঙ্গল ‘দিনদুপুরে নিশুতি রাতের কাজল ঢালা গহন বন’। কাছেই স্টেশনঘর। যাত্রাপথে কিছুক্ষণের বিরতি। খেলনা রেলে সমতল ছেড়ে পাহাড়ে ওঠার শুরু সেখানেই। স্টেশনঘরে প্রথম শ্রেণির যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে রয়েছে রেল মিউজিয়াম। বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা পাওয়া খেলনা রেলের এই সাদাকালো আলোকচিত্রগুলিকে জড়িয়ে রয়েছে বহু পুরনো ইতিহাস। লেন্সে ধরা আছে সেই ছবি—১৮৮৫-তে শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনের যখন যাত্রা হল শুরু

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫১
Share: Save:

সুকনায় অপেক্ষায় ইতিহাস

সুকনার জঙ্গল ‘দিনদুপুরে নিশুতি রাতের কাজল ঢালা গহন বন’। কাছেই স্টেশনঘর। যাত্রাপথে কিছুক্ষণের বিরতি। খেলনা রেলে সমতল ছেড়ে পাহাড়ে ওঠার শুরু সেখানেই। স্টেশনঘরে প্রথম শ্রেণির যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে রয়েছে রেল মিউজিয়াম। বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা পাওয়া খেলনা রেলের এই সাদাকালো আলোকচিত্রগুলিকে জড়িয়ে রয়েছে বহু পুরনো ইতিহাস। লেন্সে ধরা আছে সেই ছবি—১৮৮৫-তে শিলিগুড়ি থেকে টয় ট্রেনের যখন যাত্রা হল শুরু। নজরে টানবে দড়ি দিয়ে বাঁধা যাত্রীবাহী ট্রেনের তিনটি বগির ছবি। রয়েছে ১৮৯৭ সালে পর্যটক মার্ক টোয়েনের রেলভ্রমণের স্থিরচিত্র। চলন্ত ট্রেনে শুকনার জঙ্গল অতিক্রম করার দৃশ্য। ৭,৪০৭ ফুট উচ্চতায় ঘুম স্টেশনে দার্জিলিংগামী খেলনা রেল।

রেল প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন ‘U’ আকৃতির বাতাসিয়া লুপ-এ চলমান ট্রেনের ছবি। পটভূমিকায় তার কাঞ্চনজঙ্ঘা। দেওয়াল থেকে দেওয়াল জুড়ে শোভিত সাদাকালো ফটোগ্রাফ। তাতে ধরা রয়েছে একেবারে শুরুর দিন থেকে সমকালে খেলনা রেলের বিবর্তনের খণ্ড খণ্ড দলিল। দার্জিলিং স্টেশনে এক মহিলা কুলি মালপত্র নিয়ে পাহাড়ি পথে হেঁটে যাচ্ছে। ট্রেনের জানালা থেকে দেখা ঘুম স্টেশন, সংলগ্ন বাজার কিংবা তিব্বতি অর্কিড বিক্রেতার ছবিও ধরা রয়েছে এখানে। ফ্রেমবন্দি হয়ে আছে শুকনার চা বাগিচা থেকে সংগ্রহ করা চা-পাতা ট্রেনে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, কার্শিয়াং স্টেশনে জল ও কয়লার জন্য অপেক্ষমান খেলনা রেল বা ১৯১০-এ তোলা তিনধারিয়া রেল ওয়ার্কশপ। ছবি দেখলে মালুম হবে ১৯১৩-তে কেমন ছিল টয় ট্রেনের ইঞ্জিন। বগিগুলির রূপ পরিবর্তনের আলোকচিত্রও দেখা যাবে এখানে এলে। অনেক কৌতূহলের নিরসন ঘটবে এখানে। ইতিহাসের সঙ্গে দেখা হবে মুখোমুখি। প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে ঢুকে পড়লেই হল।

লেখা ও ছবি অনিতা দত্ত

হারিয়েছে যুগীযন্ত্র

উত্তরবঙ্গের ৭টি জেলায় ছড়িয়ে যুগী সম্প্রদায়। কিন্তু যুগীর গান আজ আর তেমন শোনা যায় না। শৈব নাথ সম্প্রদায় নিজেদের যুগী বলেই পরিচয় দেন। এই ধর্মীয় গোষ্ঠীর আদি গুরু শিব। শিব শিষ্য মীননাথ এবং মীননাথের শিষ্য গোরক্ষনাথ। শিবপন্থী এই যুগী সম্প্রদায় গোরক্ষনাথের মাহাত্ম্য বিষয়ক গান গেয়ে থাকেন। জালন্ধরীনাথ-এর (শৈবনাথ ধর্মের ন’জন গুরুর এক জন) দুই শিষ্যের এক জন ত্রিপুরার মেহারকুলের রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতী।

তার পুত্র গোপীচন্দ্র। গানে গানে পরিবেশিত হয় ময়নামতী ও গোপীচন্দ্রের কাহিনি। দলে থাকেন ২০-২৫ জন। এই গানে ব্যবহৃত হয় যে বাদ্যযন্ত্রটি তার নাম যুগীযন্ত্র। লুপ্তপ্রায় যুগীর গানের মতো এই যন্ত্রটিও দুষ্প্রাপ্য। দুই হাত দিয়ে বাজাতে হয় এক তারের এই বাদ্যযন্ত্রটি। যুগীযন্ত্রে সাধারণত পাঁচটি সুর বাজানো হয়। এক সময় বিয়ের আসরে এই গান গাইতেন শিল্পীরা। কখনও আবার গোরক্ষনাথের কাছে মানত উপলক্ষে বসত এই যুগী গানের আসর। গানের কাহিনির বিভিন্ন অংশের মধ্যে রয়েছে— তেলপরীক্ষা, পোকা কুণ্ডু অর্থাৎ সাপের কুণ্ড পরীক্ষা, ক্ষুর পরীক্ষা, সিঁদুর পরীক্ষা, বর্ণা অর্থাৎ আগুন পরীক্ষা এবং রাজা গোপীচন্দ্রের সন্ন্যাস খণ্ড। মূল গায়ক (গীদাল) ও দোয়ারি, উভয়ের কথোপকথনের মধ্যে সুরে বাঁধা কাহিনির বর্ণনা। থাকে নাচ ও অভিনয়ও। বৈশাখ বা কার্তিক মাসে গোরক্ষনাথের মাহাত্ম্য নিয়ে গান গেয়ে মাঙন নিতেন যুগী সন্ন্যাসীরা। আজ হারিয়ে গিয়েছে সেই ছবি।

সেরা শিলিগুড়ি

রাজ্য সরকারের তরফে সেরার শিরোপা দেওয়া হল শিলিগুড়ি কলেজের এনএসএস দলকে। সেরা দল পরিচালনার পুরস্কারও এসেছে শিলিগুড়ি কলেজের দখলে। শিলিগুড়ি কলেজের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম ইউনিটের প্রোগ্রাম অফিসারের দায়িত্বে রয়েছেন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বিদ্যাবতী অগ্রবাল। ২০১০ সালে তিনি এনএসএস দলের দায়িত্ব নেন। সে সময় থেকেই ধারাবাহিক ভাবে বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে শিলিগুড়ি কলেজের এনএসএস দলের অংশগ্রহণ নজর কেড়েছে।

চোখ পরীক্ষা শিবির থেকে ক্যান্সার বা এডস নিয়ে সচেতনতা প্রসার। শহরের রাস্তায় ব্লিচিং ছড়ানো বা দৃষ্টিহীনদের আবাসিক হোমে ফল মিষ্টি নিয়েও নিয়মিত হাজির থাকতে দেখা গিয়েছে শিলিগুড়ি কলেজের এনএসএস স্বেচ্ছাসেবকদের। দুঃস্থদের পোশাক বিলি হোক বা থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় শিবির, বৃক্ষরোপণ সহ নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেই রাজ্যের মধ্যে সেরা দলের শিরোপা পেয়েছে শিলিগুড়ি কলেজ। এ বছর থেকে এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করেছে সরকার। দলের দায়িত্বে থাকা বিদ্যাবতী দেবী জানান, গত ৩-৪ বছরের কাজকর্মের নিরিখে এই সাফল্য এসেছে। সম্প্রতি মানালির একটি অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প ঘুরে এসেছে শিলিগুড়ি কলেজের দল। ৯-১৮ সেপ্টেম্বর হিমাচলে মানালির অটলবিহারী বাজপেয়ী ইন্সটিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড অ্যালাইড স্পোর্টসের অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্পে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন শিলিগুড়ি কলেজের পড়ুয়ারা।

নাটকে প্রচার

নারী ও শিশু পাচার রোধে পথ নাটিকার মাধ্যমে সচেতনতা অভিযান শুরু করল শিলিগুড়ির একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘শক্তি বাহিনী’। ইতিমধ্যেই দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির দশটি জায়গায় পথনাটিকা করা হয়েছে এই সংস্থার উদ্যোগে। এবার লক্ষ্য অন্য জেলাগুলি। নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ১২ বছরের অনুপমা। এই নাবালিকাকে কাজের টোপ দিয়ে কি করে দিল্লির নিষিদ্ধপল্লিতে পাচার করেছে আড়কাঠিরা সেটাই নাটকের বিষয়। সংস্থার পক্ষ থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যতম কো-অর্ডিনেটর দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চলতি বছরে দেশে ১৯ হাজার শিশু নিখোঁজ হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ পাচার হয়েছে। গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তানরাই পাচারকারীদের লক্ষ্য। ওই নাটকের মাধ্যমে পাচার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। পাচারের সঙ্গে কারা যুক্ত থাকে? কী ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়? পাচার প্রতিরোধে আগাম কী ব্যবস্থা নিতে হবে সে সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাই তাঁদের উদ্দেশ্য।

শতবর্ষে

এবার শিলিগুড়ির নাট্যচর্চার শতবর্ষ। সেই উপলক্ষ্যে শিলিগুড়ি নাট্যমেলার উদ্যোগে হল ছোট নাটকের উৎসব। ১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বর রূপক চৌধুরী স্মারক ওই ছোট নাটকের উৎসব হল শিলিগুড়ির দীনবন্ধু মঞ্চে। প্রথম দিন শুরুতে ব্যোমকেশ ঘোষের নির্দেশনায় নাট্যরঙ্গের ‘দপর্ণ’ নাটকটি অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয়টি ছিল বলাকা নাট্যগোষ্ঠীর ‘শহিদ শিখর’। নির্দেশনায় কল্যাণ দাশগুপ্ত। তৃতীয় দিন শিলিগুড়ি থিয়েটার অ্যাকাডেমির নাটক ‘সোনার চাবি’ ও ইঙ্গিত নাট্য সংস্থার নাটক ‘আপনজন’ মঞ্চস্থ হয়। নির্দেশনায় ছিলেন যথাক্রমে কুন্তল ঘোষ ও আনন্দ ভট্টাচার্য। দর্পণ নাট্য সংস্থার প্রযোজনায় নাটক ‘বিধাতা পুরুষ’ ও শিলিগুড়ি শিশু নাট্যমের ‘আনন্দমেলা’ও মঞ্চস্থ হয়েছে তৃতীয় দিনে। সমাপ্তিতে শিলিগুড়ির ‘থটস এরিনা’র ‘আবার এ জীবন’ ও শিলিগুড়ির সৃজনসেনার নাটক ‘ম্যানি কুইন’ মঞ্চস্থ হয়। নির্দেশনা শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও পার্থপ্রতিম মিত্র।

অন্য মেলা

মাথাভাঙা, বীরপাড়া, এথেলবাড়ি, রাজগঞ্জ ও শহর লাগোয়া নানা প্রান্ত থেকে আনা কর্মক্ষমহীন অসুস্থ গরুদের ঠাঁই দেওয়া হয় এই গোশালায়। সব মিলিয়ে প্রায় ২২৫ টি গরুর নিরাপদ আশ্রয়। দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে মাড়োয়ারি সমাজ। প্রতি কার্তিকে এই গোশালাকে ঘিরেই বসে গোপাষ্টমীর মেলা। বয়স ১০৩ বছর। গরুকে পরানো হয় লাল কাপড়, সিঁদুরের টিপ। দেওয়া হয় জিলিপি ও দানাশস্য। উদ্যোক্তাও দিনবাজার মাড়োয়ারি সমাজ। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ কুস্তি প্রতিযোগিতা। যোগ দেন প্রায় দশজন কুস্তিগির।এবারও এক দিনের এই মেলায় বসেছিল পালাটিয়া গানের আসর।

সুরের সফর

গান নিয়েই জীবনের একটা বড় অংশ কাটিয়েছেন। এখন এই ৬৭ বছর বয়সেও সেই সুরের দুনিয়া থেকেই তিনি খুঁজে নেন বেঁচে থাকার রসদ। শিলিগুড়ির দেশবন্ধুপাড়ায় ‘সঙ্গীতা’ মিউজিক কলেজের কর্ণধার তারকনাথ ভট্টাচার্যের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। নিজে গান নিয়ে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন নিয়মিত। একাধিক সিডি, গানের বইও রয়েছে তাঁর। মূলত রাগপ্রধান গাইলেও রবীন্দ্রসংগীত, ভাওয়াইয়া এ সব গানেও তাঁর অনায়াস দক্ষতা। ডুয়াসের্র ছবির মতো সুন্দর ডিমা চা বাগানে কেটেছিল তারকবাবুর শৈশব। মাত্র ছ’বছর বয়স থেকেই হারমোনিয়াম ও তবলার সঙ্গে বন্ধুত্ব। পড়াশোনা শেষের পর রেলে কর্মজীবনের সুবাদে ঘুরেছেন প্রায় গোটা ভারত। অবসরের পর এখন থিতু হয়েছেন শিলিগুড়িতে।

তিনিই জানালেন, সংগীত চর্চা করছেন ৬১ বছর ধরে। আর তাঁর নিজের বয়স ৬৭। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিসিএম হিসেবে অবসরের পর এখন পুরোপুরি ডুব দিয়েছেন গানের জগতে। লখনউ-এর প্রয়াত ওস্তাদ ইকবাল হোসেন কানের কাছে নাড়া বেঁধেছিলেন তারকনাথ বাবু। ছাত্র ছিলেন কলকাতার নিত্যপ্রিয় ঘোষ দস্তিদারের। সুচিত্রা মিত্র, শান্তিদেব ঘোষ, সলিল চৌধুরী, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সান্নিধ্যের কথা বলতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন চলাফেরায় এখনও ‘তরুণ’ তারকনাথবাবু। একটা সময়ে রেলের জনসংযোগ বিভাগে চাকরি করেছেন। সেই সুবাদে এখনও সংবাদ মাধ্যমের কাছের মানুষ ‘তারকদা’। ১৯৭৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত টানা আকাশবাণীর শিল্পী ছিলেন। এখনও তিনি আকাশবাণীর মিউজিক কম্পোজার। আগামী রবিবার তাঁর লেখা বই ‘রাগ প্রধান’ প্রকাশিত হবে শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবে। এই বইয়ের সঙ্গেই আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হবে ‘ফুলের দেশ’ নামে এক সিডির। ছোটদের নিয়ে যে সিডিতে জাতীয় সংহতির বার্তা জোরালো করার চেষ্টা করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE