Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

দেরিতে হলেও নিজের জন্মভূমিতে সম্মান পেলেন হাসির রাজা। গত শনিবার ছিল সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর ১১২তম জন্মদিন। চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। সেই স্কুলের তরফে র্যালি করে ঘোরা হল গোটা শহর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে তাঁর জন্মদিন পালন করা হল।

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share: Save:

সালাম শিব্রাম

চকরবরতির চক্কর চাঁচলে

দেরিতে হলেও নিজের জন্মভূমিতে সম্মান পেলেন হাসির রাজা। গত শনিবার ছিল সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর ১১২তম জন্মদিন। চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের ছাত্র ছিলেন তিনি। সেই স্কুলের তরফে র্যালি করে ঘোরা হল গোটা শহর, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে তাঁর জন্মদিন পালন করা হল। স্কুলের কচিকাঁচাদের সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তনীরাও। আইনজীবী সুরেশ মিত্র শিবরামের নানা গল্প থেকে পেট-ফাটা হাসির লাইন তুলে লেখকের রসবোধের নির্যাস তুলে ধরলেন। ছিলেন মহকুমা প্রশাসনের দুই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, জয়ন্ত মণ্ডল ও মহম্মদ বদরুদ্দোজা, বিধায়ক আসিফ মেহবুব। শিবরামের মূর্তিতে মালা দেন তাঁরা। স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বহু মানুষ যোগ দেন শোভাযাত্রা। কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ বলেন, “বহু রাজনৈতিক মিছিলে হেঁটেছি। কিন্তু শিবরামের জন্মদিনের মিছিলে হাঁটার আনন্দ আলাদা।” ১৯০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর মুর্শিদাবাদের নিমতিতায় জন্ম শিবরামের। তাঁর মাসি, চাঁচলের জমিদার ঈশ্বরচন্দ্রের স্ত্রী সিদ্ধেশ্বরীর কাছেই বড় হতে থাকেন শিবরাম। তাঁকে বড় ভালবাসতেন নিঃসন্তান সিদ্ধেশ্বরী। পরে ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর জ্ঞাতি বড়িশার জমিদারবাড়ির শরচ্চন্দ্রকে দত্তক নেন। যিনি পরে চাঁচলের রাজা হয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে বিবাদের জেরে ১৬ বছর বয়সে চাঁচল ছাড়তে হয় শিবরামকে। ঠাঁই হয় কলকাতার মুক্তারামবাবু স্ট্রিটের মেসবাড়িতে। যেখানে আমৃত্যু ছিলেন। চাঁচলে আর না ফিরলেও তাঁর রচনায় ঘুরেফিরে এসেছে চাঁচলের হাট, মাঠ, গ্রন্থাগার। ‘জমিদারের রথ’ উপন্যাসে উঠে এসেছে চাঁচল রাজের নানা দোষ-ত্রুটির কথাও। গত জানুয়ারি মাসে স্কুলের ১২৫ বছর পূর্তি উত্‌সবে চাঁচলে এসে শিবরামের আবক্ষ মূর্তি উন্মোচন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। গোটা শহরই এবার কুর্নিশ করল শিবরামকে।

তারার সন্ধান

ব্ল্যাকহোল ঠিক কতটা বড়? প্রশ্ন শুনে হাসলেন বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা দেবীপ্রসাদ দুয়ারি। তার পর মাইক হাতে খুদে প্রশ্নকর্তাকে বুঝিয়ে দিলেন, ব্ল্যাকহোল মোটেই বিশাল আয়তনের কিছু নয়। ছাত্রীর চোখেমুখে বিস্ময়। হাত তুলল আরও এক ছাত্রী। মহাকাশ নিয়ে পড়তে চাইলে প্রস্তুতি শুরু করবে কবে থেকে? দেবীপ্রসাদবাবু জানালেন, এটাই সেই সময়। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। কিছু আগে মঙ্গল অভিযান নিয়ে ঘণ্টাখানেক বক্তৃতা শেষ করেছেন। তবু ক্লান্তির লেশ নেই। শিলিগুড়ির মাটিগাড়া সেন্ট যোসেফ স্কুলে গত শনিবার দেবীপ্রসাদ এসেছিলেন। মঙ্গল অভিযান নিয়ে ‘মিশন টু মার্স’ সেমিনার আয়োজন করেছিলেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। প্রজেক্টরের ছবিতে কখনও লালাচে রঙের মঙ্গল গ্রহ, কখনও ঘুরতে-থাকা পৃথিবী ভেসে আসছে। মঞ্চের এক দিকে মাইক হাতে দাঁড়িয়ে দেবীপ্রসাদবাবু, তাঁর সারা শরীরে ঠিকরে পড়ছে প্রজেক্টার স্ক্রিনের রং। আলো-আঁধারি লম্বা হল ঘর তখন নিস্তব্ধ। ছাত্রীদের দেবীপ্রসাদবাবু বললেন, “মহাকাশকে জানলে মনকে জানাটাও সহজ হবে। দেখার নজর বদলে যাবে।” স্কুলের অধ্যক্ষা সিস্টার জেসিন্তা জানালেন, তিনিও এতে একমত।

রামভোলা ডট কম

জুবিলিতে চাই নতুন ওয়েবসাইট। প্ল্যাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে নতুন ওয়েবসাইট পেল কোচবিহার রামভোলা হাই স্কুল। মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর উদ্বোধন হল ওয়েবসাইটের। তাতে লেখা হল স্কুলের ইতিহাস। ১৯৫১ সালে কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ গুঞ্জবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় স্কুলের জন্য তিন একর জমি দান করেন। শিক্ষানুরাগী ব্যাক্তি রামভোলা সরকার স্কুলের ভবন তৈরির জন্য ১০ হাজার টাকা দান করেন। তাঁর নামেই স্কুলের নাম হয়। ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি ৭৫ বছরে পা দেবে রামভোলা হাই স্কুল। ওই দিন থেকে প্লাটিনাম জুবিলি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্কুল। শোভাযাত্রা, নাচ, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে বিজ্ঞান প্রদর্শনী, প্রাক্তনীদের পুনর্মিলন, বাদ যাবে না কিছুই। প্রাক্তনীদের মধ্যে আসছেন বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, মার্কিন মুলুক থেকে শ্যামল বণিক, জয়েন্ট পরীক্ষায় মেডিক্যালে প্রথম, আর জি কর মেডিক্যালের সদ্য-ডাক্তার পুষ্পম প্রিয়ম দাশ। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে আসবেন হেডস্যার শুকদেব নাথ, সাহিত্যিক দিগ্বিজয় দে সরকার, প্রমুখ।

অগ্নি যাহাকে...

১৯৪২ সালের ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোল তখন তুঙ্গে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ট্রেজারি ভবন, আদালত ভবনের সঙ্গে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল বালুরঘাট সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কেও। ফের ব্যাঙ্কটি আগুনে পুড়েছিল ১৯৭১-এ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলনের সময়। প্রবল জলের স্রোতে ডুবেছিল ১৯৬৮, ১৯৮৭ এবং ১৯৯৫ সালের ভয়াবহ বন্যায়। আগুন-জলের হামলা সয়েও ব্যাঙ্কের কর্মীরা গ্রাহকদের পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন বরাবর। বালুরঘাটের কাছে বাণিজ্যকেন্দ্র ধামইরহাট গঞ্জে ১৯১৫ সালে প্রথম ঋণদান শিবির করে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ঋণ বিলি করে পথ চলা শুরু করেছিল বালুরঘাট সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক। দেখতে দেখতে সেই ব্যাঙ্ক ১০০ বছরে পা দিয়েছে।

ব্রিটিশ আমলে ইটের সুরকি, চুন ও চিটাগুড়ের মিশ্রণের ঢালাইয়ে তৈরি বিরাট ভবন ও লোহার পাত বসানো কড়িবরগার ছাদের লাল বাড়িটি হেরিটেজ ভবন হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে। গত রবিবার (১৪ ডিসেম্বর) ব্যাঙ্কের শতবর্ষ উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করলেন প্রবীণ ব্যাঙ্ক কর্মীরা। ১৯৯৭ সালে ব্যাঙ্কে নির্বাচিত বোর্ড গঠিত হয়। তারপরেই ‘দক্ষিণ দিনাজপুর ডিসট্রিক্ট সেন্ট্রাল কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্ক’ নামটি নথিভুক্ত হয়। বর্তমানে এই জেলার পাঁচটি ব্লকে সাতটি শাখায় পরিষেবা দিচ্ছে শতায়ু ব্যাঙ্ক।

মুখোশ নিয়ে

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুশমন্ডি ব্লকের মহিষবাথানে শিল্পীরা মুখোশকে বলেন ‘মুখা’। সেখানে তিনদিনের মুখা মেলা শেষ হল রবিবার। মেলার উদ্দেশ্য, গ্রামীণ মেলার মাধ্যমে নতুন ক্রেতার সঙ্গে মুখাশিল্পীদের যোগাযোগ তৈরি। ইউনেস্কোর হয়ে ‘বাংলা নাটক ডটকম’ নামে একটি সংস্থা ওই মেলার আয়োজন করে। বাঁশ ও কাঠ খোদাই করে দেবদেবী, জীবজন্তুর মুখোশ তৈরির ধারা মহিষবাথানের শিল্পীরা দীর্ঘকাল টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু বাজারের অভাবে এখনও তাঁদের বছরভর রোজগার হয় না মুখোশ থেকে। ভরসা সেই দিনমজুরি, খেতমজুরি। মহিষবাথান গ্রামীণ হস্তশিল্পী সমবায় সমিতির সম্পাদক পরেশচন্দ্র সরকার বলেন, “বর্তমানে সমিতির সদস্য দু’শোরও বেশি। কিন্তু সবাইকে কাজ দেওয়া যায় না। মেলা ও প্রদর্শনীর মরসুমে রোজ গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন শিল্পীকে মুখা তৈরির কাজ দেওয়া যায়।” রবিবার বিকেলে শিব-কালী-সহ বিভিন্ন দেবদেবীর মুখায় সেজে শিল্পীদের নাচে মেলা শেষ হয়। শিল্পীদের আশা, আন্তর্জাতিক বাজারে এ বার সুযোগ পাবেন তাঁরা।

গডসে ও গাঁধী

গুলি লাগার পর মহাত্মা গাঁধী বেঁচে গিয়েছেন। সুস্থ হয়ে গাঁধী নিজের বিচার-বিশ্লেষণ শুরু করেন। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সঙ্গে মনে মনে যুঝতে থাকেন। ধীরে ধীরে তাঁর সামনে আসতে থাকে গাঁধীবাদ, সাম্প্রদায়িকতার নানা প্রশ্ন। ‘গডসে@গাঁধী.কম’ নাটকে এমনটাই উঠে এসেছে। নাট্যকার কল্যাণময় দাস জানান, ২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গাঁধীর দেশে ফিরে আসার শতবর্ষ পূরণ হবে। গাঁধীজিকে শ্রদ্ধা জানাতেই ওই নাটক। ৩ জানুয়ারি থেকে কোচবিহার রবীন্দ্রভবনে শুরু হচ্ছে জনান্তিক নাট্যগোষ্ঠীর বাত্‌সরিক নাট্য অনুষ্ঠান। পাঁচ দিন অনুষ্ঠানে সাতটি নাটক, এবং নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীর উপর আধারিত একটি তথ্যচিত্র তুলে ধরা হবে। ব্রাত্য বসুর নাটক ‘সিনেমার মতো’, চন্দন সেনের নাটক ‘পোটেকসান’, মনোজ মিত্রের ‘ছোট ছোট বাড়ি’ থেকে শুরু করে বেশ কিছু নাটক মঞ্চস্থ হবে।

বিদ্যার অন্য মুখ

ক্লাসে যেন অনায়াসে পড়ুয়াদের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন, তেমনই হাতে গ্লাভস পরে রাস্তায় ধারে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতেও স্বচ্ছন্দ তিনি। পাহাড়ে চড়া শেখাতেও কোনও ক্লান্তি নেই তাঁর। ‘বিদ্যা ম্যাডাম’কে তাই শিলিগুড়ি কলেজের প্রাক্তন ও বর্তমান পড়ুয়ারা এক ডাকে চেনেন। তাঁর হাত ধরে বৃদ্ধাশ্রম, কুষ্ঠাশ্রমেও যাতায়াত শুরু শিলিগুড়ি কলেজের অনেক পড়ুয়াদের। এ বছরই তাঁর শিক্ষকতা জীবনের দেড় দশক পূরণ হয়েছে। তাঁর আপত্তি ছিল, তবু শিলিগুড়ি কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ তাঁকে ঘিরে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করেছেন। শিলিগুড়ি কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেওয়ার দু’বছরের মধ্যে কলেজের ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম তথা এনএসএসের দায়িত্ব পান। সেটা ২০১০ সাল। চার বছরে কলেজের এনএসএসের নানা প্রকল্পের আয়োজনের জন্য এ বছর রাজ্যের সেরা ‘প্রোগ্রাম অফিসারে’র শিরোপা পেয়েছেন বিদ্যাবতী অগ্রবাল।

শিক্ষকতার শুরু রায়গঞ্জ কলেজ থেকে। সেখানেও এনএসএসের দায়িত্বে ছিলেন বিদ্যাবতী দেবী। ইটাহারের মেঘনাদ সাহা কলেজের প্রথম ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষাও ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালে নিজের শহর শিলিগুড়িতে আসেন, শিলিগুড়ি কলেজে। রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি দুই শহরেই পড়ুয়াদের দিয়ে চোখ পরীক্ষা শিবির, ক্যান্সার, এডস নিয়ে সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করেছেন তিনি। সম্প্রতি মানালিতে অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প করেছে শিলিগুড়ি কলেজের দল। অবশ্যই সেই দলের নেতৃত্বে ছিলেন শিলিগুড়ি কলেজের ‘বিদ্যা ম্যাডাম’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

uttar karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE