Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

দেওয়াল যেন গণ-শৌচাগার না হয়ে ওঠে, সে জন্য কত কসরতই না দেখা যায়। সমতলে বাংলা কিংবা হিন্দিতে, পাহাড়ে নেপালি ভাষায় অনেক দেওয়ালেই নিষেধাজ্ঞা, জরিমানার হুঁশিয়ারি লিখে দেওয়াল পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা হয়। কোথাও আবার নিষেধাজ্ঞায় কাজ না হওয়ায় নানা দেব-দেবীর ছবি প্লাস্টিক-পেন্ট দিয়ে আঁকানোর ঘটনাও কম নেই।

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৫ ০১:৪৫
Share: Save:

সাবাস স্বচ্ছতা
নির্মল বাংলা বাগান

দেওয়াল যেন গণ-শৌচাগার না হয়ে ওঠে, সে জন্য কত কসরতই না দেখা যায়। সমতলে বাংলা কিংবা হিন্দিতে, পাহাড়ে নেপালি ভাষায় অনেক দেওয়ালেই নিষেধাজ্ঞা, জরিমানার হুঁশিয়ারি লিখে দেওয়াল পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা হয়। কোথাও আবার নিষেধাজ্ঞায় কাজ না হওয়ায় নানা দেব-দেবীর ছবি প্লাস্টিক-পেন্ট দিয়ে আঁকানোর ঘটনাও কম নেই। কেউ দেবতার ছবি-আঁকা সেরামিট টালি লাগান, কোথাও আবার দেওয়ালে ধর্মগুরুর ছবি খোদাই করে তৈরি সেখানে ধূপধুনো দেওয়া হচ্ছে। তা বলে দেওয়াল বাঁচাতে আস্ত একটা শাক-সবজির বাগান গড়ে তোলা প্রায় বেনজির ব্যাপার। তেমনই করে দেখাল শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ি শহরের প্রাণরেখা হিসেবে পরিচিত হিলকার্ট রোডের গা-ঘেঁষা গলিতে কেউ লাউ-বেগুনের চাষ করছেন, এমন চিন্তাই করা যায় না। অথচ এমনই কর্মকাণ্ডে যুক্ত চার্চ রোডের পাইকারি জুতো ব্যবসায়ীরা। যাঁদের নেতৃত্বে রয়েছেন এলাকার তরুণ ব্যবসায়ী গৌরীশঙ্কর প্রসাদ। তিনি উদ্যোগী হয়ে ট্রাকে মাটি আনিয়ে প্রথম শাক-সব্জি ফলানোর কাজে নামেন। বাঁশ, তারের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন দেওয়ালের সামনের জমিটা। ধীরে ধীরে সব ব্যবসায়ীরা তাঁর কাজে সামিল হন। এখন তো তাঁরা সকলে চোখের মণির মতো আগলে রাখেন সাধের সবজি-খেত। লাউয়ের ডগার ভারে মাচা যেন উপচে পড়ছে। লঙ্কা-বেগুন ফলেছে। গৌরী বলেন, ‘‘সন্ধ্যার পরে দেওয়ালটা উন্মুক্ত শৌচাগার হয়ে উঠত। নেশার আসরও বসত। সাতসকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেত, মদের বোতল গড়াগড়ি যাচ্ছে। সেই থেকে কী করা যায় ভাবছিলেন এলাকাবাসী।’’ এর পরেই শুরু হয় গৌরীদের ‘সবুজের অভিযান।’

বন্ধন যাক খুলে

বক্সার দুর্গম জঙ্গল পেরিয়ে ভুটান-লাগোয়া পাহাড়ের চূড়ার উপর বক্সা বন্দি শিবির। ১৯৩১ সেখানে জেলবন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীরা পালন করেছিলেন রবীন্দ্রনথের ৭০তম জন্মতিথি। অমলেন্দু দাশগুপ্ত, ত্রৈলোক্যমোহন চক্রবর্তী, দক্ষিণা মিত্র মজুমদারের মতো বিপ্লবীদের উদ্যোগে জেলে অভিনীত হয় ‘শেষ বর্ষণ’ নাটকটি। সেই বার্তা কবির কাছে পৌঁছে দেন বন্দিরা। লেখেন, ‘‘আজ বাংলার সীমান্তের নির্বাসনে বসিয়া আমরা বন্দিদল বসিয়া তোমার সেই জন্মক্ষণটিকে বন্দনা করি...।’’ উত্তরে কবি বন্দিদের উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘প্রত্যাভিনন্দন’ কবিতাটি —, ‘‘নিশীথেরে লজ্জা দিল অন্ধকারে রবির বন্দন। পিঞ্জরে বিহঙ্গ বাঁধা, সঙ্গীত না মানিল বন্ধন।’’ স্বাধীন দেশে এই প্রথম সরকারি ভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালিত হল বক্সা বন্দি শিবিরে। ডুকপা, নেপালি, স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের শিল্পীদের পাহাড়িয়া সুর বদলে গিয়েছিল রবীন্দ্র নাথের গানে। পাহাড়, জঙ্গল ও চা বাগানের বাসিন্দাদের সঙ্গে শহরের শিল্পীদের মেলবন্ধন ঘটাতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন আলিপুরদুয়ারের শিল্পীরাও। বক্সা পাহাড়ে প্রতিধ্বনিত হল, ‘জয় তব বিচিত্র আনন্দ, হে কবি...।’

গাছের ভাষা

ওরা মূক ও বধির, তা বলে উড়ে-যাওয়া পাখির ভাষা, হাওয়ায়-দোলা গাছেদের ইঙ্গিত বুঝতে অসুবিধে কীসের? সমাজকল্যাণ দফতরের অধীন রায়গঞ্জে সুর্যোদয় মূক ও বধির হোম কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে কুলিক পক্ষিনিবাসে হয়ে গেল প্রকৃতি-পাঠ শিবির। আবাসিক ৪২ কিশোর ও ২৯ জন কিশোরী আবাসিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে হাজির ছিল পাখ-পাখালির মাঝখানে। পরিবেশের ভারসাম্য রাখতে গাছ লাগানো কেন দরকার, সে কথাও তাদের বোঝান হোম কর্তৃপক্ষ। হোমের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সংরক্ষিত এলাকায় সারাদিন ঘুরিয়ে আঞ্চলিক পাখি ও পরিযায়ীদের চেনান।

হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস জানান, হোমের চার দেওয়ালে থেকে একঘেয়েমিতে ভুগে হাপিয়ে ওঠে এই সব শিশু-কিশোর। অতীতে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে মূক ও বধিরদের নিয়ে প্রকৃতি-পাঠ শিবিরের আয়োজন করার আবেদন করা হলেও হোম কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতি দেননি। কারণ, এই শিশুদের সঙ্গে কথা বলার জন্য শিক্ষকদের দরকার বিশেষ প্রশিক্ষণ। এ বার তাই হোম কর্তৃপক্ষ নিজেরাই উদ্যোগী হল।

সবুরের ক্ষীর

ভাল দুধ না পেলে ক্ষীর তৈরিতে হাতই দেন না বিদ্যুৎ সরকার। চাঁচলের কলিগ্রামের ক্ষীরের সুনাম নষ্ট হবে যে! অন্য মিষ্টি গ্যাস জ্বালিয়ে তৈরি হলেও, কলিগ্রামে ক্ষীর তৈরি করা হয় কাঠের উনুনে। আর অ্যালুমিনিয়াম বা স্টিলের হাতা নয়, বাঁশের হাতা দিয়ে ঘন করা হয় সেই ক্ষীর। ঢিমে আঁচে ধীরে ধীরে জমাট বাঁধে দুধ। শুধু রসনা তৃপ্তিই নয়, ক্ষীর তৈরির কায়দায় লুকিয়ে রয়েছে রেফ্রিজারেটর ছাড়াই ক্ষীর সতেজ রাখার রহস্য। শীত কালে এক মাস, আর গরমে তিন সপ্তাহেও ওই ক্ষীর নষ্ট হয় না। কলিগ্রামের মালতী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের বিদ্যুৎবাবু অবশ্য ক্ষীরের রেসিপি নিয়ে এর বেশি আর কিছু ভাঙতে চাননি। তবে ইতিহাস বলছে, সপ্তম, অষ্টম শতাব্দীতে পাল, সেন রাজাদের আমলেও রসনাতৃপ্তির অন্যতম উপাদান ছিল ক্ষীর। যার কদর আজও এতটুকুও কমেনি। মালদহের চাঁচলের কলিগ্রামের ক্ষীরের সুখ্যাতি জেলায় ছড়িয়ে পড়লেও, প্রধানত উন্নত মানের দুধের অভাবে কলিগ্রামের দোকানগুলি গড়ে ২০ কিলোর বেশি দই তৈরি করতে পারে না। তাই ২৫০ টাকা কিলো দরের এই ক্ষীরের ব্যবসা খুব বেশি ছড়াবার সুযোগ হয় না।

চিরনতুন লিপি

টানা সাড়ে তিন দশক কোনও মাসিক সাহিত্যপত্রিকা বার করার নজির যে কোনও দেশে বিরল, এ রাজ্যের মফস্সলে তো বটেই। তেমন নজির গড়ল কোচবিহারের ‘নবলিপি।’ পত্রিকার সম্পাদক সুনীল সাহা জানালেন, এ বারের পয়লা বৈশাখ সংখ্যা বার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই পত্রিকা ৩৬ বছরে পা দিয়েছে। ‘‘আসলে এই পত্রিকার বয়স ৪৪ বছর। রেজিস্ট্রেশন মিলেছে ৩৬ বছর,’’ বললেন সুনীলবাবু। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দগোপাল ঘোষ, তারাপদ রায় লিখেছেন নবলিপিতে। এই সংখ্যায় নববর্ষের ইতিকথা লিখেছেন অলকানন্দা দাস। নিবন্ধ, কবিতা, গল্প থেকে চিঠিপত্র, সবই আছে। সমিত ভৌমিক ‘বরফের নিচে আগুন’ ধারাবাহিক উপন্যাস লিখেছেন। দাম ১৫ টাকা।

রানিবানের সিন্ডারেলা

রাতারাতি ‘সেলিব্রিটি’ হয়ে উঠেছে চার বছরের খুদে মেয়ে। দার্জিলিঙের গ্রেস প্রধানের পায়ে জুতো পরিয়ে দিয়েছেন সত্যি-রাজপুত্র, ইংল্যান্ডের রাজকুমার প্রিন্স হ্যারি! ঘটনাটা ঘটেছে অবশ্য সুদূর নিউজিল্যান্ডে। যেখানে গত বছর তিনেক ধরে রয়েছেন গ্রেসের বাবা-মা, দার্জিলিঙের কুণাল প্রধান আর নেপালের অর্পণা থাপা। স্থানীয় একটি অসরকারি সংস্থার আমন্ত্রণে অকল্যান্ডের গভর্নর হাউসে প্রিন্স হ্যারির সঙ্গে দেখা করতে যান অর্পণা, গ্রেসকে নিয়ে। অনেকের সঙ্গে কথা বলার পর অর্পণার সঙ্গেও তাঁর সমস্যা নিয়ে কথা বলার পর গ্রেসের সঙ্গে কথা বলেন হ্যারি। লজ্জা পেয়ে মায়ের পিছনে সরে যেতে গিয়ে পা থেকে একপাটি জুতো সরে যায় গ্রেসের। হ্যারি নিজেই সেটা পরিয়ে দেন চার বছরের গ্রেসকে। অর্পণা নিউজিল্যান্ড থেকে ফোনে বলেন, ‘‘আমরা এ নিয়ে অত কিছু ভাবিনি। তবে মিডিয়ায় মেয়েকে ‘সিন্ডারেলা’ বলার পরেই সকলে ফোন করতে শুরু করেছে।’’ গ্রেসের ঠাকুরদা বিজয় প্রধানের অবশ্য গর্ব ধরে না। দার্জিলিং থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে রানিবানের বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘রোজ রোজ তো আর রাজপুত্রের দেখা মেলে না। তা-ও এমন রাজপুত্র যে নাতনির পায়ে জুতো পরিয়ে দেয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brief news north bengal brief news uttorer karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE