Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরের কড়চা

কোচবিহারের ‘তোর্সা সাহিত্য পরিষদ’-এর উদ্যোগে সাহিত্যসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হল সংবর্ধনা, গ্রন্থপ্রকাশ ও রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা সভা। রোব আখতার আহমেদের দশটি নাটকের সংকলন গ্রন্থ ‘দশ কুড়ি’ এবং তোর্সা সাহিত্য পরিষদের পত্রিকা ‘তোর্সা’ (সম্পাদক পাপড়ি গুহ নিয়োগী)-র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৬ ০২:০০
Share: Save:

তোর্সার রবীন্দ্রনাথ

কোচবিহারের ‘তোর্সা সাহিত্য পরিষদ’-এর উদ্যোগে সাহিত্যসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হল সংবর্ধনা, গ্রন্থপ্রকাশ ও রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা সভা। রোব আখতার আহমেদের দশটি নাটকের সংকলন গ্রন্থ ‘দশ কুড়ি’ এবং তোর্সা সাহিত্য পরিষদের পত্রিকা ‘তোর্সা’ (সম্পাদক পাপড়ি গুহ নিয়োগী)-র আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়। ‘রবীন্দ্রনাথের চোখে বর্তমান নারী সমাজ’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তা উত্তীয় দে বলেন, স্ত্রীর পত্রে মৃণাল গৃহত্যাগ করে, প্রতিবাদী সেই মূর্তিটি সমকালীন সময়ের নারীদের মধ্যেও বর্তমান। আলোচক অলোক সাহা জানালেন, রবীন্দ্রনাথকে কোনও সময়ের নিরিখে বাধা যায় না। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্ট মৃণাল, চন্দরা, কুমুদিনী, কামিনী, লাবণ্যরা নারীর যে চিরকালীন বৈশিষ্ট্য বহন করছে, তা বর্তমানেও অব্যাহত। পুরুষদের শোষণ, অধিকারবোধ যেমন নিঃস্বার্থ ভাবে তারা মেনে নিয়েছে, তেমনই বর্তমান নারীদের মতো প্রতিবাদেও তারা পিছপা হয়নি। যদিও এখনকার নারীরা আজ অনেক বেশি সাহসী ও দৃঢ়চেতা। নারী চেতনার বিকাশে নারীরা যেমন একাধারে জননী-কন্যা, অপর দিকে প্রেয়সীও বটে। জানা গেল আলোচক বিবেক চৌধুরী ও শুভাশিস চৌধুরীর কাছ থেকে। সুচন্দ্রা ঘটকের কথায়, ‘‘সাধারণ নারী হিসেবে আমার কাছে যেমন রবীন্দ্রনাথ, তাঁর লেখাতেও ঠিক সেই ভাবেই উপস্থিত আজকের নারী।’’ বসেছিল স্থানীয় কবিদের স্বরচিত কবিতাপাঠের আসর। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলেন অভিজিৎ চক্রবর্তী, বাপি সূত্রধর, অদ্রিজা মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ছিল মাধুরী দাস ও বেদশ্রুতি ভট্টাচার্যের আবৃত্তি। রবীন্দ্র কবিতার কোলাজ পরিবেশনায় মানস চক্রবর্তী। রবীন্দ্র নৃত্য করেন সমপ্রিয়া সাহা। মঞ্চে মাধ্যমিকে রাজ্যের প্রথম, নবম ও দশম স্থানাধিকারীদের মধ্যে এই জেলার কৃতীদের সম্মনা প্রদান করেন আয়োজক সংস্থার সভাপতি ভাস্করজ্যোতি দত্ত ও সম্পাদক মানস চক্রবর্তী।

রবীন্দ্র নিবেদন

বৈশাখের শেষ সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনটিকে স্মরণে রেখে মালদহে অধ্যাপিকা সুস্মিতা-সুব্রত সোম দম্পতির আয়োজনে ছিল রবীন্দ্র বিষয়ক আলোচনা, গান, কবিতার শ্রুতিনন্দন নিবেদন। শিরোনাম ‘এসো শ্যামল সুন্দর’। সংস্কৃত সাহিত্যের কালিদাসের অভিজ্ঞান শকুন্তলা, মেঘদূত কাব্যের উদ্ধৃতি-সহ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তার কবিধর্মের তুলনা শোনালেন গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোপাল চন্দ্র মিশ্র। তার আলোচনায় জানা গেল, কী ভাবে কালিদাস প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মানবজীবনকে বিস্তৃতি, গভীরতা দিয়েছেন। পাশাপাশি তুলে ধরেন রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ও সৃষ্টির কথাও। সাহিত্যিক অমর মিত্রের কথায়, রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন এক অর্থে বাঙালির জন্মদিন। ২৫শে অক্লান্ত বারিধারা এসেছিল। বন্যা হয়েছিল। গতিপথ বদলে গিয়েছিল গঙ্গা, যমুনা, পদ্মা, মেঘনা, সরস্বতী, তিস্তা, তোর্ষা, মহানন্দা, ডাহুক, ডুলুং, সুবর্ণরেখার। চল্লিশের মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগ বাঙালি শুধুই ভিটেহারা হত ২৫ না থাকলে। বোমা পিস্তল ব্যতীত বাঙালির কিছুই থাকত না। জানালেন, ফেলে আসা এ পারের সেতু তো রবীন্দ্রনাথ। ‘এমন দিনে তারে বলা যায়’ শীর্ষ নামে গান, আবৃত্তির ছোট্ট কোলাজ, পরিবাশনায় মধুমিতা, দেবব্রত, দীপজ্যোতি। ‘বাঁশিওয়ালার চিঠি’ নামে গান আর পাঠের আলেখ্যতে অংশ নেন চিরশ্রী, উজ্জয়িনী। রবীন্দ্রগান ও রাগসঙ্গীতের মেলবন্ধনে শ্রুতিসুখের আসর রচনা করেন রুদ্রাণী ও দীপজ্যোতি। একক নিবেদনে ছিল গান ও কবিতা।

ভাওয়াইয়া সাধক

ছোটবেলা থেকে গান তাকে ডাকে। মাটি থেকে উঠে আসা মাটির ঘ্রাণ মাখা গান। ভাওয়াইয়া। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীটি চলে যেত রেল লাইনের ধারে নির্জন জায়গায়। দীপ্তি রায়ের সাধনার শুরু সেখান থেকে। বাড়িতে গানের আবহে বড় হয়েছেন। স্বরলিপি শিখেছিলেন দিদির কাছে। পরবর্তী সময়ে ধনেশ্বর রায় এবং গঙ্গাচরণ বিশ্বাসের কাছে শিখেছেন ভাওয়াইয়া। বারো বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে গান। বছর সতেরোয় আকাশবাণী শিলিগুড়িতে। এর পরেই প্রকাশিত হয় প্রথম গ্রামাফোন রেকর্ডটি। তার পর ক্যাসেট এবং ভিডিও সিডি। ভাওয়াইয়ার পাশাপাশি অনায়াস দক্ষতায় গাইতে পারেন ‘তুক্ষ্যা’। তার আঙুলের ছোঁয়ায় জীবন্ত হয়ে ওঠে দোজরা ও সারিজা বাদ্যযন্ত্র। সুরের সূত্রে পরিচয় লোকসংস্কৃতি গবেষক দীনেশ রায়ের সঙ্গে। বর্তমানে তার সহধর্মিণী, প্রায় ৪৫ বছরের সঙ্গী। জীবনে তৈরি করেছেন অজস্র ছাত্রছাত্রী। তাদের অনেকে জাতীয় স্তরে স্কলারশিপ পেয়েছে। তাঁর বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে ‘ও পাখি দইওল রে’ (ভাওয়াইয়া), ‘বিরখের মূলে ত্রেধারা নোধী’ (তুক্ষ্যা)-সহ একাধিক সংযোজন। উত্তরবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে ভাওয়াইয়া-তুক্ষ্যার সুরধারায় মুগ্ধ হয়েছেন কলকাতা, দিল্লি, চণ্ডীগড়-সহ বিভিন্ন স্থানের শ্রোতা। আজীবন চেষ্টা করেছেন তার সংস্কৃতির নিজস্বী অর্থাৎ রাজবংশী সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে লোকসঙ্গীতের মাধ্যমে তুলে আনার। সেই প্রচেষ্টার মধ্যে কখনও তৈরি হয় সংশয়, ‘ভাওয়াইয়াতেও এখন আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে শেষ পর্যন্ত।’ লোকসঙ্গীতের এই সাধক আজও কোনও পুরস্কারে সম্মানিত হননি। সাধকের পুরস্কারের প্রয়োজনও হয় না বোধহয়।—সুদীপ দত্ত

লোক আলোচনা

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক লোকসংস্কৃতিচর্চার সূত্রপাত রংপুর সাহিত্য পরিষদ থেকে। ১৯০৬-এর পূর্বে আঞ্চলিক লোকভাষা, লোকসংস্কৃতিচর্চার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ ছিল না। লোকসংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে ইতিহাসের উপাদান, উত্তরবঙ্গের কোচবিহার লোকসংস্কৃতির খনি। জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি নগরায়নের ফলে সেখানে লোকসংস্কৃতিচর্চা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। জাতীয় স্তরের লোকসংস্কৃতি বিষয়ক আলোচনাসভায় এমন কথা শোনালেন আনন্দগোপাল ঘোষ। তাঁর কথায়, লোকগানে রয়েছে হিমালয়ের প্রভাব। প্রকৃতি পরিবেশ কোনও প্রভাব বিস্তার করেছে কিনা তা গবেষণার ফলে বোঝা যাবে। জানালেন, সরকারি উদ্যোগে দরকার লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা গড়ে তোলা। তা হলে লোকবিশ্বাস বা লোকাচারের উপাদানগুলি গবেষকদের কাছে তুলে ধরা যাবে। আলোচক দীপক কুমার রায়ের মতে, মানুষের সামগ্রিক জীবনচর্চার মধ্যেই নিহিত আছে লোকসংস্কার। লোকবিশ্বাস বা লোকাচারের মধ্যে রয়েছে সর্বপ্রাণবাদ। প্রসঙ্গ সূত্রে উদাহরণ দেন, ‘ওগো কাঁঠল খুটার দোতারা,/ও তুই দোলরং দোলরং দোলরং দোলরং বাইজ’। উত্তরবঙ্গের এই লোকবিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে সর্বপ্রাণরঙ্গ। সর্বপ্রাণবাদের গভীরে রয়েছে টোটেম। প্রসঙ্গ সূত্রে তার কাছ থেকে জানা গেল, লোকাচারের অন্যতম আঙ্গিক যে জাদুক্রিয়াচার তা উত্তরবঙ্গের বিষহরা গানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। সাজপোশাকে রংয়ের ব্যবহারে যে লৌকিক নান্দনিকতা রয়েছে তা বাহিত হয়েছে লোকবিশ্বাস লোকাচারে। তিনি জানান, রামায়ণে উল্লেখিত সীতার বালুপিণ্ডপ্রদান এই অঞ্চলেও প্রচলিত রয়েছে। সহ বক্তা দ্বিজেন্দ্রনাথ ভগতের কথায়, কোনও জনগোষ্ঠীর বা নৃগোষ্ঠীর যে বিবর্তন ঘটে সেই বিবর্তনের মধ্যে লোকবিশ্বাস বা লোকাচার লুকিয়ে থাকে অর্থাৎ লোকবিশ্বাসের একটা দিক হল নৃতাত্ত্বিক প্রেক্ষিত। শিষ্ট সাহিত্যের মধ্যে লোকদর্শন কী ভাবে প্রবেশ করেছে তা তুলে ধরেন বক্তা দীপক বর্মন। তিনি প্রসঙ্গ সূত্রে প্রশ্ন তোলেন, লোকাচার বা লোকবিশ্বাস মেনে বৈদিক রীতি কি লোকরীতিকে বহন করছে। জানালেন, লোকবিশ্বাসের উদাহরণস্বরূপ অভিজিৎ সেনের ‘দেবাংশী’ গল্পের কথা। দিনহাটা কলেজের অধ্যক্ষ সাধন কর বলেন, উত্তরবঙ্গের লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য এখনও পর্যন্ত বেঁচে আছে এখানকার আদি অদিবাসীদের হাত ধরে। বাঁচিয়ে রাখার এই প্রয়াসের অন্যতম অঙ্গ আজকের এই আলোচনাসভা। আলোচনাটির আয়োজক কালবৈশাখী পত্রিকা (সম্পাদক রমণীমোহন বর্মা) গোষ্ঠী। সহ আয়োজক দিনহাটা কলেজ। —অনিতা দত্ত

নাট্য কর্মশালা

জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে হয়ে গেল নাট্যকর্মশালা। আয়োজক কলেজের ছাত্রছাত্রীদের গড়া নিজস্ব নাট্যদল ‘অযান্ত্রিক’। প্রশিক্ষক হিসেবে ছিলেন সাধন চক্রবর্তী, মানস ভৌমিক ও সব্যসাচী দত্ত। তিন দিনের এই কর্মশালায় শিক্ষার্থীরা জেনে নিলেন গ্রিক নাটক, বাংলা নাটক ও সমসাময়িক নাটকের ইতিহাস। শিখলেন নাটকের ব্যাকরণ, কী ভাবে চরিত্র হয়ে উঠতে হয়, মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতি, অভিনেতার মানসিক প্রস্তুতি, চরিত্রের সঙ্গে অভিনেতার বোঝাপড়া। হাতে-কলমে শিখলেন মঞ্চের বিভিন্ন স্থানের নাম কি, নাটকের আঙ্গিকগত দিক, মুখের অভিব্যক্তি পরিস্ফূটনের জন্য বিভিন্ন ব্যায়াম। প্রশিক্ষণ পেলেন মঞ্চ ব্যবহারের কৌশল। মঞ্চবিন্যাস কেমন হতে পারে তাও। স্বরক্ষেপণ ও উচ্চারণ ও সংলাপের পাঠও নিলেন শিবিরে যোগদানকারী ছাত্রছাত্রীরা।

ছবিঘর

জলপাইগুড়ির কলেজে নাটকের কর্মশালার একটি দৃশ্য। নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE