Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কন্যাশ্রী থেকে সেতু, নামাবলি মিষ্টিরও

পটল আকৃতির ভাজা (অনেকটা ল্যাংচার মতো) মিষ্টির বুক চিরে ঠেসে দেওয়া হয়েছে ক্ষীর। বছর তিনেক আগে ভাইফোঁটায় এমনই এক মিষ্টি তৈরি করে ‘ফাটাকেষ্ট’ নাম দিয়েছিলেন দুবরাজপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী রাম দে।

রকমারি: সিউড়িতে পসরা সাজিয়ে দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

রকমারি: সিউড়িতে পসরা সাজিয়ে দোকান। —নিজস্ব চিত্র।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৩৭
Share: Save:

‘ফাটাকেষ্ট’র পরে এ বার ‘কন্যাশ্রী’। কোনও সিনেমা কিংবা সরকারি প্রকল্পের নাম নয়— ভাইফোঁটায় বানানো স্পেশ্যাল মিষ্টির নামমাহাত্ম্য এখন এমনই।

পটল আকৃতির ভাজা (অনেকটা ল্যাংচার মতো) মিষ্টির বুক চিরে ঠেসে দেওয়া হয়েছে ক্ষীর। বছর তিনেক আগে ভাইফোঁটায় এমনই এক মিষ্টি তৈরি করে ‘ফাটাকেষ্ট’ নাম দিয়েছিলেন দুবরাজপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী রাম দে। কেষ্ট দেবতার নাম, আবার জেলার প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার নামও বটে। এক মিষ্টি-রসিকের কথায়, ‘‘নাম মাহাত্ম্য, নাকি স্বাদ তা বুঝিনি। তবে সব জায়গাতেই ওই মিষ্টির ব্যাপক চাহিদা দেখেছি।’’ রামবাবুর আশা, এ বারের ভাইফোঁটায় ‘কন্যাশ্রী’ নামের নতুন মিষ্টিও সমান জনপ্রিয় হবে। কারণ আম, চকোলেট, সন্দেশ ও রসের মিস্টির ফিউশনে বানানো এই মিস্টি খেতেও দারুণ। তা ছাড়া মেয়েদের সঙ্গে জুড়ে থাকা কন্যাশ্রী নামটা এখন অতি পরিচিত। এখানেই শেষ নয়। ক্ষীর আর অরেঞ্জ দিয়ে আর এক রকমের মিষ্টি বানিয়ে নাম দিয়েছেন ‘মালাই-ডোনা’। ‘‘ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘরণী ডোনার নামেই নাম’’, অকপট রামবাবু। দাদা তো সকলের। বৌদিকেও বোন বা দিদির দলে টানতে চেয়েছেন এই কারিগর।

রসের মিষ্টি, সন্দেশ বা ক্ষীরের সঙ্গে আম বা চকোলেট দিয়ে ফিউশনের কদর রয়েছে বোলপুরেও। বোলপুরের চিত্রা মোড়ের কাছে মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী উদয়শঙ্কর মোদকের ভাইফোঁটার চমক ‘ম্যাঙ্গোবল’, ‘ব্ল্যাক ফরেস্ট সন্দেশ’। এ ছাড়া রয়েছে ‘ভাইফোঁটা’ লেখা সন্দেশ, বাটার স্কচ সন্দেশ। উদয়শঙ্করবাবু বলছেন, ‘‘চিরাচরিত মিষ্টি তো বিক্রি হচ্ছেই। এখন ফিউশনের কদর বেশ ভাল। চাহিদা রয়েছে হালকা রসের মিষ্টি এবং কম মিষ্টি যুক্ত মিষ্টিরও।’’ আম চকোলেট কিংবা কমলালেবু দিয়ে ফিউশনের পথে না হাঁটলেও রসের মিষ্টির সঙ্গে ক্ষীর দিয়ে ‘সেতু’ নামের ভাইফোঁটা স্পেশ্যাল মিষ্টি তৈরি করছেন রামপুরহাটের প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী তথা জেলা মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সঞ্জয় পোদ্দার। সঙ্গে রয়েছে ভাইফোঁটা লেখা সন্দেশ, বেনারসী রোল, আবার খাব-র মতো নানা মিষ্টি।

ফিউশন নয়। চিরাচরিত সরভাজা, ছানার গজা, রসোগোল্লা, কাস্টার সন্দেশ এবং অন্য প্রচলিত মিষ্টিতেই আস্থা রাখছেন জেলা সদর সিউড়ির প্রসিদ্ধ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বাপি ঘোষাল। তাঁর কথায়, ‘‘এত জনপ্রিয় মিষ্টি থাকতে আবার ফিউশন কেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘একটু বড়, হালকা রসের বা কম মিষ্টিযুক্ত মিষ্টির চলই বেশি। কারণ অনেকেই এখন স্বাস্থ্য সচেতন। দিন দিন ডায়াবিটিস রোগের প্রকোপও বাড়ছে।’’

এমনিতেই মিষ্টিমুখের রকমারি আয়োজন ছাড়া বাঙালির তেরো পার্বণ সম্পূর্ণ হয় না। সে জামাইষষ্ঠী বা বিজয়া দশমী হোক, কিংবা ভাইফোঁটা। জিএসটি নিয়ে ধন্দ, চিনি, ছানা-সহ অন্য কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া সামলে আয়োজনের কমতি নেই। জেলায় হরেক মিষ্টি তৈরি হয়ে অপেক্ষায় ভাইদের পাতে পাড়ার। তবে ছন্দ নষ্ট করছে অত্যন্ত খারাপ আবহাওয়া আর দিনভর বৃষ্টি।

জেলার মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের অনেকেরই আক্ষেপ, ‘‘সেই কারণে ইচ্ছে থাকলেও এমন অনেক মিষ্টিই বানানো গেল না। কেননা তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়।’’ অনেকে আবার বলছেন, অন্য বার ভাইফোঁটার আগের দিন থেকে যে ভিড় থাকে, সেটা এ বার নেই। তবে সকলেরই আশা, ভাইদের পাতে সেরা মিষ্টির সম্ভার সাজিয়ে দিতে বৃষ্টির মধ্যে কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত দোকানে আসবেন সকলেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bhai Phonta Special Sweets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE