Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কাঠ বইব কেন, ছাত্রদের বিক্ষোভে ভন্ডুল অনুষ্ঠান

হস্টেলের অব্যবস্থা নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ অনেক দিন ধরেই দানা বাঁধছিল। বিভিন্ন মহলে আবেদন করেও সুরাহা হয়নি। শেষে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানেই জমা হওয়া ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটালো ছাত্রেরা! জঙ্গল থেকে কাঠ না আনলে চোখ রাঙানি, ছাত্রাবাসের রান্নার জন্য মুদিখানার মালপত্র সাইকেলে করে নিয়ে আসতে বাধ্য করা, শৌচাগার নিজেদের হাতে পরিষ্কার করা, নিম্নমানের খাবার—এমন নানা অভিযোগে শুক্রবার, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানেই পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হলেন টিচার-ইন-চার্জ-সহ অন্য শিক্ষকেরা।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ঘরের বাইরে বিক্ষোভ। প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ঘরের বাইরে বিক্ষোভ। প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:৫৬
Share: Save:

হস্টেলের অব্যবস্থা নিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ অনেক দিন ধরেই দানা বাঁধছিল। বিভিন্ন মহলে আবেদন করেও সুরাহা হয়নি। শেষে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানেই জমা হওয়া ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটালো ছাত্রেরা!

জঙ্গল থেকে কাঠ না আনলে চোখ রাঙানি, ছাত্রাবাসের রান্নার জন্য মুদিখানার মালপত্র সাইকেলে করে নিয়ে আসতে বাধ্য করা, শৌচাগার নিজেদের হাতে পরিষ্কার করা, নিম্নমানের খাবার—এমন নানা অভিযোগে শুক্রবার, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানেই পড়ুয়াদের হাতে ঘেরাও হলেন টিচার-ইন-চার্জ-সহ অন্য শিক্ষকেরা। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় আশ্রমধর্মী আবাসিক বিদ্যালয়ের ওই ঘটনায় অনুষ্ঠান ভন্ডুল হয়ে যায়। বিকেল অবধি শিক্ষকদের তালাবন্দি রাখে পড়ুয়ারা। পরে স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকার অসুস্থতার কথা জেনে তারা তাঁকে বাইরে বেরিয়ে অন্য ঘরে বসার সুযোগ দেয়। পড়ুয়াদের বক্তব্য, তাদের অবস্থা প্রশাসনিক কর্তাদের নজরে আনতেই তারা বিক্ষোভ দেখানোর কথা আগাম ভেবেছিল। শেষ অবধি সোমবার তাদের বক্তব্য শোনা হবে, প্রশাসনের এই আশ্বাসে তালা খোলে পড়ুয়ারা।

অযোধ্যা পাহাড়ের মাথায় বাঘমুণ্ডি ব্লকের এই স্কুলটি পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত। মোট ১৮০ জন পড়ুয়ার মধ্যে হস্টেলে থাকতে পারে ১২০ জন। স্কুলটি পরিচালনা করে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর। অধিকাংশ পড়ুয়াই আদিবাসী। হস্টেলের প্রায় সব ছাত্রই বিক্ষোভে সামিল হয়। সকালে ক্লাস শুরুর সময়েই তারা দল বেঁধে টিচার-ইন-চার্জ সইদ আসারির ঘরের সামনে হাজির হয়। হাতে ধরা প্ল্যাকার্ডে টিচার-ইন-চার্জের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও তাঁর অপসারণ দাবি। অনেক পড়ুয়া আবার এ দিনের খাবার নিয়েও বিক্ষোভে এসেছিল, যাতে স্কুল কর্তৃপক্ষ দেখতে পান, প্রতিদিন তাদের কী খেতে হয়! তাদের ক্ষোভ, ছাত্রাবাসের খাবার খুবই নিম্নমানের। মাছ-মাংস তো দূরের কথা, ডিমেরও দেখা মেলে না। দু’বেলা যে ডাল-তরকারি দেওয়া হয়, তা-ও খাওয়ার অযোগ্য। কখনও কখনও রান্নার জন্য তাদেরই জঙ্গল থেকে কাঠ আনতে হয়। শৌচাগারে ফিনাইল, সাবান, তেল মেলে না। শৌচাগার সাফাইয়ের কাজও তাদেরই করতে হয়। গত বছর তারা বই কেনার অর্থও পায়নি।

দশম শ্রেণির পড়ুয়া পাহালমান লোহার, অর্জুন বেসরা, হেমন্ত সোরেনরা বলে, ‘‘ছাত্রবাসের রান্নার জন্য মালপত্র মুদির দোকান থেকে সাইকেলে না নিয়ে এলে সাইকেল স্কুল চত্বরে ঢোকাতে দেন না টিচার-ইন-চার্জ। তা ছাড়া আমাদের সমস্যা শোনার সময়ই ওঁর কাছে নেই। অগস্ট মাসে বেশির ভাগ দিনই তাঁকে স্কুলে বা হস্টেলে পাওয়া’’ অষ্টম শ্রেণির সঞ্জয় লোহার, লালসিং সোরেন বা দশম শ্রেণির অর্জুন বেসরা, পাহালমান লোহারদের কথায়, ‘‘বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনিক কর্তা ও জন প্রতিনিধিদের লিখিত ভাবে দুর্দশার কথা জানিয়েছি। কিন্তু কেউ এখানে আসেননি।’’

টিচার-ইন-চার্জের দাবি, ছাত্রবাসে রান্নার কাঠ না থাকায় শুধু এক দিন জঙ্গলে পড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কাঠ সংগ্রহের জন্য। তা-ও সঙ্গে ছিল গাড়ি ও বন দফতরের অনুমতি। মুদিখানার মালপত্র নিয়ে আসা প্রসঙ্গে তাঁর যুক্তি, ‘‘বর্ষার সময়ে বাস না চলার কারণে দু-এক বার ওরা মাল এনেছে। কিন্তু নিয়মিত মাল আনানোর অভিযোগ মিথ্যা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE