Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

গাছ ফেলে, তার ছিঁড়ে নাকাল করল ঝড়

সকাল থেকেই চ়ড়া রোদ। সঙ্গে ঘাম। দুইয়ের জেরে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল বাঁকুড়াবাসীর। রবিবার দুপুরে ঘন কালো মেঘ আকাশে জমাট বাঁধতে দেখে অনেকেই স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন। তার কিছু পরেই সোঁ সোঁ শব্দে এলো ঝড়। সঙ্গে বৃষ্টি।

দুপুরেই আঁধার বাঁকুড়ার আকাশে।

দুপুরেই আঁধার বাঁকুড়ার আকাশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

সকাল থেকেই চ়ড়া রোদ। সঙ্গে ঘাম। দুইয়ের জেরে নাজেহাল অবস্থা হয়েছিল বাঁকুড়াবাসীর। রবিবার দুপুরে ঘন কালো মেঘ আকাশে জমাট বাঁধতে দেখে অনেকেই স্বস্তির শ্বাস ফেলেছিলেন। তার কিছু পরেই সোঁ সোঁ শব্দে এলো ঝড়। সঙ্গে বৃষ্টি। দুইয়ের জেরে কার্যত লন্ডভন্ড অবস্থা হল বাঁকুড়া শহরের। বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়ে, বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ব্যাহত হল জনজীবন। এ দিন দুপুরে বিষ্ণুপুরের ভাটড়া গ্রামে চাষজমিতে কাজ করার সময় বাজ পড়ে মারা যান মন্মথ লোহার (৩০) নামের এক যুবক। গাছ মাথায় পড়ে জখম হয়েছেন বিষ্ণুপুরেরই এক যুবক।

শুধু বাঁকুড়া শহরই নয়, বিষ্ণুপুর-সহ জেলার একাধিক ব্লকেই এ দিন প্রবল ঝড়বৃষ্টি হয়। সাময়িক শিলাবৃষ্টিও হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের কাছে বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এসে না পৌঁছলেও ঝড়ের দাপট দেখে আশঙ্কায় রয়েছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট এখনও এসে পৌঁছয়নি। তবে বিভিন্ন এলাকায় গাছ পড়েছে, বিদ্যুৎ পরিষেবাও বিঘ্নিত হয়েছে বলে খবর এসেছে। বিস্তারিত রিপোর্ট সংগ্রহের কাজ চলছে।’’ রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিষেবা বিপর্যস্ত থেকেছে জেলার এক বিস্তীর্ণ অংশে। জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ সুখেন বিদ জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন, যাতে রাতের মধ্যেই পরিষেবা স্বাভাবিক করা যায়।

আবহায়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুপুরে বাঁকুড়া শহরের উপর দিয়ে ৬৪ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গিয়েছে। প্রায় দু’মিনিট স্থায়ী হয়েছিল ঝড়ের এই গতি। তার পরে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ৩০ বা তার কিছু বেশি কিলোমিটারের গতিবেগে আশেপাশে হাওয়া বইছিল। ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে। প্রায় দু’মিনিট শিলাবৃষ্টি হয়। শেষ কবে এই গতিবেগে বাঁকুড়ার উপরে ঝড় বয়ে গিয়েছে, তার হদিস দিতে পারছে না হাওয়া অফিসও। এক আধিকারিক জানান, অন্তত গত দু’বছরে ঝড়ের বেগ এইমাত্রায় ওঠেনি। তবে ঝড় বৃষ্টির জেরে তাপমাত্রা অনেকটাই নেমে গিয়েছে এক ঝটকায়, এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া জেলার মানুষের। এ দিন দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিকেলে ঝড়-বৃষ্টির পরে তাপমাত্রা এক ধাক্কায় প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়।

এ দিন ঝড়ের জেরে শহরের কানকাটার মোড়ে রাস্তার উপরে পড়ে গিয়েছে গাছ। শহরের ভিতর দিয়ে যাত্রিবাহী বাসগুলি কানকাটার উপর দিয়ে গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ড যায়। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ারও এটাই মূল রাস্তা। তবে, গাছ পড়ে যাওয়ায় বেশ কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল এই রাস্তায়। বাসগুলিকেও ঘুরপথে বাসস্ট্যান্ডে যেতে হয়। পাটপুর এলাকার মনসাতলায় একটি নিমগাছ রাস্তার উপরে পড়ে যায়। ওই এলাকায় একটি বিদ্যুতের খুঁটিও পড়ে গিয়েছে। ছিঁড়েছে তার। ভৈরবস্থান এলাকায় জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বাংলো চত্বরে একটি গাছ ভেঙে পড়ে আধিকারিকেরই গাড়ির উপরে। ফলে যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে গাড়িটির। জেলাশাসকের বাংলোতেও বহু গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে ঝড়ে। বাঁকুড়ার স্কুলডাঙার বাসিন্দা শ্যামল পতি, অমল দুলেরা বলেন, “বহু দিন পরে এ রকম ঝড় দেখলাম। বড়বড় গাছগুলো চোখের সামনে মড়মড় করে ভেঙে পড়ছিল।’’

বিষ্ণুপুরেও এ দিন বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হয়েছে। বহু গাছ ভেঙে পড়েছে। বাঁকুড়ার মতো এই শহরেও ঝড়ের জেরে বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। বিষ্ণুপুরের ক্ষুদিরামপল্লিতে মিঠু রুহিদাস নামে এক যুবকের মাথায় গাছ ভেঙে পড়ে। তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় বাসিন্দারা উদ্ধার করে প্রথমে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাঁকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল পাঠানো হয়। তাঁর বাবা স্বপন রুহিদাস বলেন, ‘‘ঝড়ের সময় বাইরে থেকে ছেলে ঘরে ফিরছিল। বাড়ির উঠোনেই একটা বড় গাছ হুড়মুড়িয়ে ছেলের মাথায় ভেঙে পড়ে। কোনও রকমে পড়শিদের সাহায্যে গাছের ডাল সরিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করি।’’ বিষ্ণুপুর শহরের গড়দরজা এলাকায় রাস্তার উপর একটি বড় গাছ ভেঙেছে। তেজপাল এলাকাতেও বেশ কয়েকটি কাঁচাবাড়ি ভেঙে পড়ে। ক্ষতি হয়েছে বিষ্ণুপুর শহর লাগোয়া রাধানগর গ্রামেও। বিষ্ণুপুরের বিদায়ী পুরপ্রধান তথা বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহর এলাকায় কোথায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, আমরা খোঁজ নিচ্ছি। সেই অনুযায়ী আমরা ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’’

ওন্দা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ ভবানী মোদক জানিয়েছেন, এলাকায় বহু মানুষের ঘর ভেঙে পড়েছে। বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন বিদ্যাপীঠের টিনের ছাউনি উড়ে গিয়েছে। ওন্দা বাজারেও একটি দোকান ভেঙে গিয়েছে। স্থানীয় বগড়ামুড়ি, বিহারজুড়ি প্রভৃতি গ্রামে পান বরজের ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রয়োজনীয় সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছি।’’ ফসলের ক্ষতি জেলার অনেক অঞ্চলেই হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

ছবি: অভিজিৎ সিংহ ও শুভ্র মিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bankura storm bishnupur rain weather summar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE